ঈসা (আঃ) এর মোজেজা ও রুটি চুরির ঘটনা

ঈসা (আঃ) এর মোজেজা ও রুটি চুরির ঘটনা আজ আপনাদেরকে শোনাবো, এই ঘটনার মধ্যে অবাক করা শিক্ষা আছে যে শিক্ষা সকলের জন্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী এই শিক্ষা জীবনে বাস্তবায়ন করলে পৃথিবীতে বিভিন্ন বিপদ থেকে বাঁচা যাবে এবং পরকাল উজ্জ্বল হবে ।

এক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে সফরে রওয়ানা হল। হজরত ঈসা (আঃ) এর কিছে তিনটি রুটি ছিল। কিছু পথ চলার পর এক নদীর তীরে পৌঁছে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করলেন (দুজনের কাছেই খাবার ছিল) হযরত ঈসা (আঃ) তিনটি রুটির মধ্য হতে দুইটি রুটি আহার করলেন এবং পানি পান করার জন্য নদীতে গেলেন।(তখনও লোকটি সেইখানে বসে ছিল হয়তো সে খাবার খাচ্ছিল) হযরত ঈসা (আঃ) ফিরে এসে দেখেন অবশিষ্ট একটি রুটি সেখানে নাই। তিনি সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “রুটি কে নিয়েছে?” লোকটি বলল, “আমি জানি না হুজুর ।”

(লোকটি যদি সত্য কথা বলতো তাহলে হযরত ঈসা (আঃ) হয়তো কিছুই বলতেন না , মিথ্যা কথা শুনে তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন )
তবুও তিনি সেই মিথ্যাবাদী ও লোভী লোকটিকে নিয়ে আবার রওয়ানা হলেন। রাস্তা চলতে চলতে তিনি আবার ক্ষুধা অনুভব করলেন কিন্তু তিনার কাছে খাবার ছিল না । হঠাৎ তিনি দূরে একটি হরিণী দেখতে পেলেন। তার সঙ্গে দুটি বাচ্চা ছিল। তিনি একটি বাচ্চাকে ডাকলেন। বাচ্চাটি কাছে আসল। তিনি ঐ হরিণের বাচ্চাটিকে জবাই করলেন এবং ভূনা করে সেই লোকটিকে সঙ্গে নিয়ে আহার করলেন।
অতঃপর বললেন, “আল্লাহর হুকুমে জিন্দা হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে হরিণের বাচ্চা জিন্দা হয়ে চলে গেল। হজরত ঈসা (আঃ) লোকটিকে বললেন, “এই হরিণের বাচ্চা জিন্দা হয়ে যাওয়ার অলৌকিক ঘটনা যার ইশারায় ঘটলো তিনি হলেন আল্লাহ, তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি বল রুটিটি কে নিয়েছে?” লোকটি বলল, “আমি জানি না ।”

এবার আবার চলতে শুরু করবেন কিছুদুর যাওয়ার পর পাহাড় থেকে ঝর্ণা হয়ে নেমে আসা একটি নদী সামনে পৌঁছালেন কিন্তু সেখানে পারাপারের জন্য কোন নৌকা পেলেন না, তখন হযরত ঈসা (আঃ) লোকটির হাত ধরে পানির উপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “যিনি বিনা নৌকায় নদী পার হওয়ার এই অলৌকিক দৃশ্য দেখালেন তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি বল রুটি কে নিয়েছে?” লোকটি আগের মতই জওয়াব দিল, “আমি জানি না”।

তারা সেই মিথ্যা কথা হযরত ঈসা (আঃ) কে খুব কষ্ট দিচ্ছিল তাই তিনি বিভিন্ন কৌশলে সত্য বের করার চেষ্টা করছিলেন ।

অতঃপর হযরত ঈসা (আঃ) এক জঙ্গলের কাছে পৌঁছালেন এবং সেইখানে একটি জায়গায় ধুলা ও বালি জমা করতে শুরু করলেন। যখন এক বিরাট বালির স্তুপ হয়ে গেল তখন সেই স্তুপকে লক্ষ্য করে বললেন, “আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও।” তখনই বালির স্তুপটি সোনা হয়ে গেল। তিনি সেই সোনাকে তিন ভাগ করলেন এবং লোকটিকে লক্ষ্য করে বললেন, “এই  তিন ভাগ সোনার মধ্যে এক অংশ আমার, আর এক অংশ তোমার এবং অপর অংশটি ওই ব্যক্তির যে রুটি নিয়েছে ।” এই কথা শুনে লোকটি মনে লোভ সৃষ্টি হল এবং তৎক্ষণাৎ সে সত্য কথা প্রকাশ করল , হুজুর কিছু মনে করবেন না “রুটিটা তো আমিই নিয়েছিলাম ।”

হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, ঠিক আছে “ তাহলে তুমি সব সোনাই নিয়ে নাও”। আমি কিছু নেব না ।

এই বলে হযরত ঈসা (আঃ) সেই লোকটিকে সেখানে রেখে চলে গেলেন । লোকটি তিন ভাগ সোনার সবগুলি একা পেয়ে মনের আনন্দে জঙ্গলের ধারেই অবস্থান করতে লাগল এবং এত সোনা সে কিভাবে নিয়ে যাবে সেই চিন্তা করতে লাগল, অর্থ সম্পদের লোভ তাকে এমন অন্ধ করে দিয়েছিল যে যার জন্য সে এত সোনা পেল এবং অলৌকিক ঘটনা দেখতে পেল তার কাছে ক্ষমা চাইল না এমনকি সঙ্গী হয়ে থাকল না এটা ছিল তার দুর্ভাগ্য । হঠাৎ এমন সময় দুই ব্যক্তি এসে তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো সে বাধা দিলে তাকে হত্যা করার মনস্থ করল । লোকটি বুঝতে পারলো তারা তাকে মেরে ফেলবে তখন বলল, “লড়াই করে আর কি লাভ, এসো আমরা লড়াই না করে এই বিশাল পরিমাণ সোনা সমান তিন ভাগ করে নেই। এখন খুব ক্ষুধা লেগেছে একজন বাজারে গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে এসো, ক্ষুধা নিবৃত্তি করার পর সোনা ভাগ করব।”

তার প্রস্তাবে তারা রাজি হল এবং সেই দুইজনের মধ্যে এক ব্যক্তি খাবার আনতে বাজারের দিকে রওনা হল এবং মনে মনে ভাবল, খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিলে এই দুইজন মারা যাবে তখন সমস্ত সোনা আমার একার হয়ে যাবে। খাবার কেনার পর সত্যি সত্যি সে খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিল। এদিকে এরা দুইজন পরামর্শ করল যে, ওই তৃতীয় ব্যক্তিটিকে যদি মেরে ফেলা হয় তবে সমস্ত সোনা তাদের দুই জনের ভাগে বেশি করে পড়বে । তাই লোকটি বাজার থেকে ফিরে আসতেই তাকে মেরে ফেলতে হবে। অতঃপর লোকটি যখন খাবার নিয়ে ফিরে আসল তখন দুইজন মিলে তাকে হত্যা করে ফেলল এবং মনের আনন্দে খাবার খেতে লাগল। খাবার খাওয়া শেষ হতে না হতেই বিষের প্রতিক্রিয়া শুরু হলো এবং এরা দুইজনেও সেখানে মারা পড়ল।

সোনার তিনটি ভাগ যেমনকার ছিল তেমনি সেখানে পড়ে রইল। কেউ পেল না। তিন জনের লাশই সোনার পাশে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ে থাকল। ঘটনাক্রমে হজরত ঈসা (আঃ) আবার সেই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি এই দৃশ্য দেখে সবাইকে ডেকে বললেন, “দেখ, সম্পদের হাকীকত এই। এর লোভ থেকে নিজেকে বাঁচাও”।

একটা বাংলা প্রবাদ আছে যা আমরা প্রায় সকলেই জানি তা হল, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু ।

প্রিয় দর্শক এই ঘটনা থেকে আমরা যে শিক্ষা পেলাম তা হল ।
(১) মিথ্যা সমস্যা সৃষ্টি করে ।
(২) অতী লোভ মৃত্যুর কারণ হয় ।
(৩) চক্রান্তকারীরা নিজেই চক্রান্তের শিকার হয় ।
(৪) প্রয়োজনের চেয়ে খুব বেশি সম্পদের প্রতি লোভ ভালো না ।

আশাকরি আপনাদের এই সুন্দর তথ্যগুলি ভালো লেগেছে যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে দয়া করে শেয়ার করবেন ।

Spread the love

3 thoughts on “ঈসা (আঃ) এর মোজেজা ও রুটি চুরির ঘটনা”

  1. ঘটনাটির রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো ইংশা_আল্লহ

    Reply
  2. জনাব,
    ঘটনাটির রেফারেন্স দিলে উপকৃত হতাম!

    Reply
  3. হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ. এর কাসাসুল আম্বিয়া বইয়ে এই ঘটনাটি উল্লেখ করা আছে

    Reply

Leave a Comment