এক কলা বিক্রেতা ও লা মাযহাবী মুফতি

এক কলা বিক্রেতা ও লা মাযহাবী মুফতি

(আজকের এই পোষ্ট টি ঐ সমস্ত কট্টরপন্থী লা মাযহাবীদের জন্য যারা অল্প জ্ঞান নিয়ে সব সময় ইমামদের সমালোচনা করে)

এক কলা বিক্রেতা ও লা মাযহাবী (আহলে হাদিস) মুফতি

👉 রমজান মাসের কোন একদিন,এক কলা বিক্রেতা তার স্ত্রীকে বললেন, শোন গিন্নি সামনে ঈদ,পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা করতে হবে । আর এর জন্য অনেক টাকার দরকার। তাই আজ থেকে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হবে,কারণ এখন থেকে কয়েকটি গ্রাম অতিরিক্ত ঘুরতে হবে । এরপর কলা বিক্রেতা একটি ঠেলাগাড়িতে করে কিছু কলা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন ।

বাড়ি থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর “এইযে কলা” বলে হাক দিতে দিতে রাস্তা বেয়ে চলতে থাকলেন । অতঃপর এমন একটি গ্রামে এসে পৌছালেন যে গ্রামে ইতিপূর্বে তিনি কখনো কলা বিক্রি করতে আসেননি । সেই গ্রামের মধ্যে পৌঁছাতেই বেশ ভালই কলা বিক্রি হতে লাগল । কলা বিক্রেতা খুব আনন্দের মধ্যে ছিলেন কারণ তিনি রমজান মাসে, সেদিনের মত এত বেশি কলা আর আগে বিক্রি করতে পারেননি ।

কলা প্রায় শেষের দিকে হঠাৎ সাদা রঙের পায়জামা,পাঞ্জাবি পরা এক লা মাযহাবী মুফতি সাহেব এসে হাজির হলেন । তার শরীর থেকে সুন্দর আদরের সুগন্ধি বের হচ্ছিল । এসে কলা বিক্রেতা কে সালাম দিলেন । কলা বিক্রেতা সালামের উত্তর দিলেন । এরপর মুফতি সাহেব তার সঙ্গে মুসাফা করার জন্য এক হাত বাড়ালেন আর কলা বিক্রেতা দুই হাত বাড়ালেন ।

তখন মুফতি সাহেব ধমক দিয়ে বললেন এই ব্যাটা এক হাত দে । কলা বিক্রেতা বললেন আমি আপনার সঙ্গে মুসাফা করতে চাই জনাব হ্যান্ডস আপ না । তখনই মুফতি সাহেব চট করে রেগে গিয়ে বললেন এত মাযহাবী রে 😆।
কলা কিনা বাদ দিয়ে মুফতি সাহেব বলে উঠলেন,আচ্ছা বলতো ভাই তুমি কোন ইমামের মুকাল্লিদ ?
কলা বিক্রেতা বললেন, আমি হানাফী জনাব ।

✍️মুফতি সাহেব বললেন, অন্ধের মত তাকলিদ না করলে কি হয়না ?

✍️কলা বিক্রেতা নম্র ভাবে বললেন, জনাব আমি সাধারন মানুষ অত কিছু জানিনা ।

✍️ মুফতি সাহেব বললেন, আমাদের এই গ্রামে অনেক সাধারন মানুষ আছে কই তারা তো কেউ তাকলিদ করে না অথচ তারা অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ।

✍️ কলা বিক্রেতা বললেন, জনাব আমি মূর্খ মানুষ অত কিছু জানিনা । এই বলে কলা বিক্রেতা চুপ করে গেলেন ।

✍️ মুফতি সাহেব একটু হেয়ানতের ছলে বলে উঠলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ কোরআন ও হাদিস বোঝেনা তবুও তাকলিদ করে না, তাকলিদ করাকে ঘৃণা করে । আর কিছু নামধারী মাওলানা আছে তারা কুরআন ও হাদিস পড়ে আবার মুকাল্লিদ, এবং সাধারন মানুষকেও ছাড়েনি, হাহাহা ।

✍️কলা বিক্রেতা বললেন, জনাব তারা হাদিস কোরান পড়তে জানে না তাহলে মাসআলা মাসায়েল কার কাছে জিজ্ঞেস করে?

✍️মুফতি সাহেব বললেন, গ্রামে অনেক মাওলানা মুফতি আছে তাদেরকে মাসআলা মাসায়েল জিজ্ঞেস করে নেই ।

✍️ কলা বিক্রেতা বললেন, তার মানে গ্রামের মানুষ আপনাদের তাকলিদ করে তাই না?

✍️মুফতি সাহেব রেগে গিয়ে কর্কশ ভাষায় বললেন,তোমার কথার মধ্যে প্যাচ আছে বাপু । শোনো তাদের মধ্যে হাদিস ও কোরানের তেমন জ্ঞান নেই তাই আমাদের কাছ থেকে মাসআলা-মাসায়েল জেনে নেই ।

✍️কলা বিক্রেতা, একটু জোর আওয়াজে বলে উঠলেন,জনাব সাধারণ মানুষ আপনাদের বলা মাসআলা-মাসায়েল অনুসরণ করে চলে আর আমরা একজন নির্দিষ্ট ইমামের গবেষনাকৃত মাসআলা-মাসায়েল মেনে চলি বিষয়টাতো একি হলো তাই না ?। (ইতিমধ্যে সেই জায়গায় কিছু মানুষের আগমন ঘটেছিল) ।

✍️মুফতি সাহেব আর একটু বেশি রেগে গিয়ে বললেন, আমরা কোরআন ও হাদিসের বাইরে কোন কথা বলি না ,আর ইমামগণ অনেক ভুল কথা বলেছেন ।

✍️কলা বিক্রেতা বললেন, জনাব আমি মূর্খ মানুষ বেশি কিছু জানিনা । তাছাড়া আমার বাড়ি অনেক দূর ইফতারের পূর্বে বাড়ি ফিরে যেতে হবে । আপনাকে শুধু একটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই । ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বা অন্যান্য বড় ইমামদের মত, বড় মুজতাহিদ বর্তমান যুগে কি কেউ আছেন ?

✍️লা মাযহাবী মুফতি সাহেব,একটু বেকায়দায় পড়ে গিয়ে বললেন, দেখো বাবু তুমি বিতর্কে জড়াচ্ছো, বিতর্ক করে লাভ নেই আমরা শুধু সহি হাদিস বুঝি ।

✍️কলা বিক্রেতা একটু মুচকি হেসে বললেন, জনাব আমি মূর্খ মানুষ বেশি কিছু জানিনা, তবে আমাকে বলুন তো, হাদীস ও সুন্নাহ কি একই জিনিস আর রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হাদীস মানতে বলেছেন নাকি সুন্নাহ মানতে বলেছেন?

✍️ মুফতি সাহেব এতক্ষনে বুঝে গিয়েছিলেন লোকটি সাধারণ হলেও অনেক কিছু জানে, তখন একটু নম্রভাবে বললেন প্রায় কাছাকাছি । এরপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে কানে ফোন ধরলেন , হতে পারে কেউ ফোন করেছিল অথবা তিনি নাটক করছিলেন । কথা চলতে চলতে কলা বিক্রেতার সব কলা বিক্রি হয়ে গেছিল । তিনি ঠেলাগাড়ি টা একটু ঝেড়ে ঝুড়ে বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন ।

✍️মুফতি সাহেব পকেট এ মোবাইলটা রেখে বললেন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না এমন কোন মাসআলা নেই ।

✍️কলা বিক্রেতা গামছাটা ঘাড়ের উপর রেখে একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, জনাব আমি একজন মূর্খ মানুষ অত কিছু জানিনা, তবে যাবার বেলায় আপনাকে একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করি ।

✍️মুফতী সাহেব বললেন ঠিক আছে জিজ্ঞেস করো ।

✍️ কলা বিক্রেতা বললেন, পবিত্র কোরআনে নাকি আছে চুরি করলে হাত কেটে দিতে হবে । আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে কতটা পরিমাণ চুরি করলে তার হাত কাটা যাবে? ধরুন আমি ঠেলাগাড়ি টা রেখে মসজিদে নামাজ পড়তে ঢুকলাম বেরিয়ে এসে দেখলাম একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে ধরে রেখেছে, কারন সে আমার ঠেলাগাড়ি থেকে একটি কলা চুরি করেছে । এখন কি চুরির দায়ে সেই মানুষের হাত কাটা বৈধ হবে? পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোতে উত্তরটা দিলে খুশি হতাম ।

✍️মুফতি সাহেব নাক চুলকে বললেন, উত্তর দিতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে😆, আর ইফতারের সময় নিকটে, এরপর কোন দিন আমাদের গ্রামে আসলে উত্তর টা নিয়ে যাবে, এই বলে মুফতি সাহেব সেখান থেকে চলতে শুরু করলেন । উত্তরটা দিতে সময় লাগত না আসলে তার জানা নেই অথবা ফিকাহ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই । হাদিস-কুরআনের দোহাই দিয়ে তারা মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে থাকে ।

✍️কলা বিক্রেতা শেষবারের মতো বললেন জনাব আমি একজন মূর্খ মানুষ বেশি কিছু জানিনা । তবে এতটুকু বলতে পারি ধর্মের নামে একে অপরের বদনাম করা বাদ দিয়ে নিজেদের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করাটাই উত্তম হবে ।
এরপর কলা বিক্রেতা পকেট থেকে একটি মিসওয়াক বের করে চিবাতে চিবাতে বাড়ির দিকে রওনা হলেন ।

শিক্ষাঃ- সমাজে যে সমস্ত মানুষেরা নিজেদের ভুলগুলি ঢাকা চাপা দিয়ে অন্যদের দিকে আঙুল তুলে তাদের বোঝা দরকার যে তারাই সমাজে ফিতনা ছড়াচ্ছে ।

এক কলা বিক্রেতা ও লা মাযহাবী মুফতির গল্প শেষ হল ।

👉🏼ইমাম আবু হানিফা (রঃ) উপর আহলে হাদিসের মিথ্যা অপবাদের জবাব ।

Spread the love

Leave a Comment