রোযা ভঙ্গ ও কাজা আদায়

রোযা ভঙ্গ ও কাজা আদায়

(এখন ওইসব বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হচ্ছে, যে কাজ করলে শুধু কাযা অপরিহার্য হয়। রোযা’র কাযা করার পদ্ধতি হচ্ছে প্রতিটি রোযার পরিবর্তে রমযানুল মুবারকের পর কাযার নিয়্যতে একটি করে রোযা রাখা।)

১. এটা ধারণা ছিলো যে, সেহরীর সময় শেষ হয়নি। তাই পানাহার করেছে, স্ত্রী সহবাস করেছে। পরে জানতে পারলো যে, তখন সেহরীর সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় রোযা হয়নি, এ রোযার কাযা করা জরুরী। অর্থাৎ ওই রোযার পরিবর্তে একটা রোযা রাখতে হবে। (রদ্দুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৮০)

২. খানা খাওয়ার জন্য কঠোরভাবে বাধ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ শরীয়ত সম্মত বাধ্যবাধকতা (কেউ হত্যা কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দিয়ে বললো, “রোযা ভেঙ্গে ফেল।” যদি রোযাদার নিশ্চিতভাবে মনে করে যে, সে যা বলছে তা করেই ছাড়বে। তাহলে শরীয়তসম্মত বাধ্য করণ পাওয়া গেলো। এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে এ রোযার কাযা করে দেয়া অপরিহার্য। এখন যেহেতু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। (দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৪০২)

৩. ভুলবশতঃ পানাহার করেছে কিংবা স্ত্রী সহবাস করেছিলো, অথবা এমনভাবে দৃষ্টি করেছে যে, বীর্যপাত হয়েছে, কিংবা স্বপ্নদোষ হয়েছে, অথবা বমি হয়েছে, এসব অবস্থায় এ ধারণা করল যে, রোযা ভেঙ্গে গেছে, তাই এখন স্বেচ্ছায় পানাহার করে নিল। কাজেই, এখন শুধু কাযা ফরয হবে। (দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৫)

৪. রোযারত অবস্থায় নাকে ঔষধ দিলে রোযা ভেঙ্গে যায়। এর কাযা অপরিহার্য। (দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৬)

৫. পাথর, কঙ্কর (এমন) মাটি যা সাধারণত খাওয়া হয়না, তুলা, ঘাস, কাগজ ইত্যাদি এমন জিনিষ আহার করলো, যে গুলোকে মানুষ ঘৃণা করে, এ গুলোর কারণেতো রোযা ভেঙ্গে গেলো, কিন্তু শুধু কাযা করতে হবে। (দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৭)

৬. বৃষ্টির পানি কিংবা শিলাবৃষ্টি নিজে নিজেই কণ্ঠনালীতে ঢুকে গেলো। তবুও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা অপরিহার্য হবে। (দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৮)

৭. খুব বেশি ঘাম কিংবা চোখের পানি বের হলে ও তা গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হয়।(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৮)

৮. ধারণা করলো যে এখনো রাত বাকী আছে তাই সেহেরী খেতে থাকল; পরে জানতে পারল সাহারীর সময় শেষ, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (রদ্দুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৮০)

৯. একইভাবে ধারণা করলো যে সূর্য ডুবে গেছে, পানাহার করে নিল। পরক্ষণে জানতে পারলো যে, সূর্য ডুবেনি। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাযা করে নিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৮০)

১০. যদি সূর্য অস্তমিত হবার পূর্বেই সাইরেনের আওয়াজ ধ্বনিত হয়ে ওঠে কিংবা মাগরিবের আযান শুরু হয়ে যায়, আর আপনি রোযার ইফতার করে নেন এবং পরে আপনি জানতে পারলেন যে, সাইরেন কিংবা আযান সময়ের পূর্বেই শুরু হয়েছিলো। এতে যদিও আপনার দোষ থাকুক বা নাই থাকুক, তবুও রোযা ভেঙ্গে গেছে, কাযা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৮৩)

১১. আজকাল যেহেতু উদাসীনতার ছড়াছড়ি, সেহেতু প্রত্যেকের উচিত নিজেই নিজের রোযার হিফাযত করা। সাইরেন, রেডিও টিভির ঘোষণা বরং মসজিদের আযানকেও যথেষ্ট বলে মনে করার পরিবর্তে নিজেই সাহারী ও ইফতারের সময় সঠিকভাবে জেনে নিন।

১২. ওযু করছিলেন। নাকে পানি দিলেন এবং তা মগজ পর্যন্ত ওঠে গেলো কিংবা কণ্ঠনালী দিয়ে নিচে নেমে গেলো। রোযাদার হবার কথাও স্মরণ ছিলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা অপরিহার্য হবে। হাঁ, তখন যদি রোযাদার হবার কথা স্মরণ না থাকে তবে রোযা ভাঙ্গবে না। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০২)

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আসন্ন মাহে রমজানে আমাদের বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করার তৌফিক দান করুন. আমীন।

Spread the love

Leave a Comment