কোরআন-হাদিসের আলোকে শবে বরাত এর বাস্তবতা

কোরআন-হাদিসের আলোকে শবে বরাত এর বাস্তবতা

আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়া, অনুগ্রহ ও করুণা করে ফযিলত মণ্ডিত কিছু মাস ও কিছু রাত দান করেছেন। মাহে শা’বান ও শবে বরাত তারই অন্যতম।

আরবী শা’বান (ﺷﻌﺒﺎﻥ) শব্দটি এক বচন, এর বহুবচন হচ্ছে শা’আবীন (ﺷﻌﺎﺑﻴﻦ ) অর্থ বিক্ষিপ্ততা ছড়ানো ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হওয়া। মাস হিসেবে শা’বান যে ফযিলতপূর্ণ তা তার শাব্দিক গঠন প্রক্রিয়া থেকেই বুঝা যায়। পাঁচটি হরফ (শীন, আইন, বাআলিফ, এবং নূন) দ্বারা শব্দটি গঠিত। তাঁর প্রত্যেকটি হরফই একেকটি ফযিলতের ইঙ্গিত বহন করে। যেমন ‘শীন’ দ্বারা ﺷﺮﺍﻑ (শারফুন) বা সম্মান, ‘আইন’ দ্বারা ﻋﻠﻮ (উলুব্বুন্) বা উচ্চ মর্যাদা, ‘বা’ দ্বারা ﺑﺮ ও ﺑﺮﻛﺔ (বিররুন ও বারাকাতুন) বা নেক আমল ও বরকত, ‘আলিফ’ দ্বারা ﺍﻟﻔﺔ (উলফাতুন) যার অর্থ মহব্বত এবং ‘নূন’ দ্বারা ﻧﻮﺭ (নূরুন) বা হেদায়তের আলোর দিকে ঈশারা করা হয়েছে বলে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

পক্ষান্তরে ‘শবে বরাত’ শব্দটি ফার্সি অর্থ: ভাগ্য রজনী আর এ পবিত্র রাতের বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়।

১. ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺍﺋﺔ (লায়লাতুল বরাত) বা বন্টনের রাত,

২. ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻙ (লায়লাতুল মুবারাকা) বা বরকতময় রজনী,

৩. ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ (লায়লাতুর রাহমা) বা করুণার রাত ও

৪. ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ (লায়লাতুছ্ ছাক্) বা সনদ প্রাপ্তির রাত। [সূত্র: তাফসীরে কাশশাফ, জুমাল, সাবী, সিরাজুন মুনীর]

হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি গুনিয়াতুত্ ত্বালেবীনে উল্লেখ করেন এ রাতকে লায়লাতুল বরাত বলা হয় এ জন্য যে, কেননা এ রাতে দু’ধরনের বরাত হাছিল হয়। একটি হলো: হতভাগাদের আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া, অপরটি হলো: আল্লাহর প্রিয়জনদের অপমান থেকে মুক্তি ও নিরাপদ থাকা।
[গুনিয়াতুত্ ত্বালেবীন]

📌 মাহে শা’বানঃ

‘ইমাম রাফে’ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু উল্লেখ করেন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মাসের নাম ‘শা’বান’ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোযা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে যাতে রোযাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মাঝে সকল সৃষ্টির একটি বড় আশা-আকাক্সক্ষা ও আরজু থাকে মহানবী হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় হওয়া। মাহে শা’বান এমন এক মর্যাদামণ্ডিত মাস যে মাসকে আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের মাস বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি বলেছেন ‘‘শা’বান আমার মাস, রমযান আমার উম্মতের মাস।’’ [ফিরদাউসূল আখবার]

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ মাসের মধ্যে বেশি রোযা রেখে শা’বানকে সম্মানিত করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে।
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻮﻡ ﺣﺘﻰ ﻧﻘﻮﻝ ﻻﻳﻔﻄﺮ ﻭﻳﻔﻄﺮ ﺣﺘﻰ ﻧﻘﻮﻝ ﻻ ﻳﺼﻮﻡ ﻓﻤﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺳﺘﻜﻤﻞ ﺻﻴﺎﻡ ﺷﻬﺮ ﺍﻻ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻣﺎ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﺍﻛﺜﺮ ﺻﻴﺎﻣﺎ ﻣﻨﻪ ﻓﻰ ﺷﻌﺒﺎﻥ –
অর্থাৎ হযরত আয়শা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিকভাবে এতোবেশী রোযা রাখতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোযা ছাড়বেন না আবার কখনো এতো বেশী রোযা থেকে বিরত থাকতেন যে, আমরা বলতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোযা রাখবেন না। তাই রোযা রাখতে দেখিনি এবং সবচেয়ে যে মাসে সর্বাধিক নফল রোযা রাখতেন তা হলো শা’বান মাস।[বুখারী ও মুসলিম]

এভাবে আরো অসংখ্য হাদিস শরীফ সিহাহ্ সিত্তা ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে শা’বানের গুরুত্ব ও ফযিলতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যা এ ছোট পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। শবে বরাত তথা ‘ভাগ্য রজনী’ এ রাতকে ক্বোরআনুল করীমে ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ বা বরকতময় রাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর হাদীসে পাকে ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ বা শা’বানের মধ্য রজনী হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।

📌ক্বোরআনের আলোকে শবে বরাত এরশাদ হয়েছে –

ﺣﻢ – ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴْﻦِ ﺍِﻧَّﺎ ﺍَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻰْ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺍِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨْﺬِﻳْﺮِﻳْﻦَ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺍَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴْﻢٍ –
অনুবাদ: হা-মীম, সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ। নিশ্চয় আমি পবিত্র ক্বোরআনকে বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। ওই রাত্রিতে ফয়সালাকৃত বিষয়সমূহ বন্টন করা হয়। [সূরা দোখান: আয়াত ১-৪]

উল্লিখিত আয়াতে বরকতময় রাত বলতে শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে। এ রাতে গোটা ক্বোরআন শরীফকে ‘লওহে মাহফুয’ থেকে প্রথম আসমানের দিকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতঃপর সেখান থেকে ২৩ বছরে অল্প অল্প করে হুযূরে পাক (ﷺ) উপর অবতীর্ণ করা হয়। এ রাতে গোটা বছরের রিয্ক, মৃত্যু, জীবন, সম্মান ও লাঞ্চনা মোটকথা সমস্ত কর্ম ব্যবস্থাপনা ‘লওহে মাহফুয’ থেকে ফিরিশতাদের সহীফাগুলোতে স্থানান্তরিত করে প্রত্যেকটা সহীফা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ফিরিশতাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়। যেমন মালাকুল মওতকে সমস্ত মৃত্যু বরণকারীদের তালিকা ইত্যাদি। [তাফসীরে কানযুল ঈমান]

হাদীসের আলোকে শবে বরাত
শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে সিহাহ্ সিত্তাহর উল্লেখযোগ্য কিতাবাদিসহ নানা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে প্রমাণ মিলে; যা নিম্নরূপ-

শবে বরাতে খোদায়ী আহ্বানঃ

ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ﻭﺻﻮﻣﻮﺍ ﻧﻬﺎﺭﻫﺎ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻟﻐﺮﻭﺏ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍﻻ ﻣﻦ ﻣﺴﺘﻐﻔﺮ ﻟﻰ ﻓﺎﻏﻔﺮﻟﻪ ﺍﻻ ﻣﺴﺘﺮﺯﻕ ﻓﺎﺭﺯﻗﻪ ﺍﻻ ﻣﺒﺘﻠﻰ ﻓﺎﻋﺎﻓﻴﻪ ﺍﻻ ﻛﺬﺍ ﺍﻻﻛﺬﺍ ﺣﺘﻰ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻔﺠﺮ –
অর্থাৎ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন শা’বানের মধ্য রজনী উপস্থিত হবে, তখন তোমরা এ রাতটিকে (ইবাদতের মাধ্যমে) উদযাপন কর এবং আগত দিনটিকে রোযার মাধ্যমে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা ওই রাতের সূর্যাস্তের পরক্ষণ থেকেই পৃথিবীবাসীর প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি দেন এবং ঘোষণা করেন- আছ কি কেউ ক্ষমা চাওয়ার? তাকে ক্ষমা করবো। আছ কি কেউ রিযিক প্রার্থনা করার? রিযিক দ্বারা ধন্য করবো। আছে কি কেউ অসুস্থ? তাকে আরোগ্য দান করব। আছ কি এমন কেউ? আছ কি এমন কেউ? সুবহে সাদেক পর্যন্ত এভাবে বলা হবে। কোন কোন বর্ণনা মতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এ ঘোষণা চলতে থাকে।
[ইবনু মাজা, মিজবাহুয যুজাজাহ্, তারগিব]

📌শবে বরাতে ভাগ্য বন্টিত হয়
ইমাম মহিউস্ সুন্নাহ্ বগভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শবে বরাতের বরকতময় রজনীতে গোটা বিশ্ববাসীর পূর্ণ এক বৎসরের লেনদেনের দপ্তর ফেরেশতাদেরকে সোপর্দ করা হয়। এমনকি মানব জাতির বিবাহ্ শাদী, তার ঘরে সন্তান সন্ততির জন্ম গ্রহণ, সন্তানের আগমনে খুশী উদযাপন তার বসতবাড়ি ও গৃহ নির্মাণ সব কিছু তালিকাভুক্ত করা হয়।

📌রিযিকে বরকতঃ

হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি শবে বরাতে খাবার, পোশাক, পরিচ্ছদ অথবা নগদ যা কিছু দান করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতিটি বিষয় বরকত দান করবেন, তার রিযিক প্রশস্ত করবেন।
মৃত্যুর পর জীবিত ও নিরাপত্তা
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি দোযখের আযাব থেকে নিরাপত্তা চায় সে যেন শবে বরাতে আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদত করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শবে বরাতকে জীবন্ত রাখবে আল্লাহ্ ওই বান্দাকে মৃত্যুর পর জীবিত রাখবেন।

📌জান্নাতি পুরস্কারঃ

‘মিফতাহুল জিনান’ কিতাবে আছে যে ব্যক্তি শা’বানের চৌদ্দ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে চল্লিশবার ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম’’ এবং একশত বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার চল্লিশ বছরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার সেবার জন্য জান্নাতে চল্লিশ জন হুর নিযুক্ত করে দেবেন।
দু’রাকাতের সওয়াব চারশত রাকাতের চেয়ে অধিক
‘‘রওযুল আফকার’’ কিতাবে আছে যে, একদিন হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম কোন এক পর্বতে ভ্রমণ করার সময় একটি আকর্ষণীয় পাথর দেখে তাকিয়ে রইলেন।
আল্লাহ্ পাক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন হে ঈসা! এটা কি তোমার পছন্দ হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহ্ এরশাদ করলেন তার ভিতরের অবস্থাও দেখবে কি? বললেন অবশ্যই, অমনি পাথরটি বিদীর্ণ হয়ে গেলো। হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম দেখলেন এর ভিতরে একজন মানুষ নামায রত। তার নিকট পানির স্রোতস্বিনী প্রবহমান। অপরদিকে তরতাজা আঙ্গুরের থোকা। ওই বান্দার নামায শেষে তিনি তাঁকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে? বুযুর্গ জবাব দিলেন, আমি হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম-এর উম্মতের এক ব্যক্তি। আমি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি। আমি চারশ বছর ধরে এ পাহাড়ে অবস্থান করছি। সর্বদা রোযা রাখি। তখন ঈসা আলায়হিস্ সালাম বললেন হে আল্লাহ এর চেয়ে বড় ইবাদতকারী আছে কি? আল্লাহ্ পাক বলেন, হে ঈসা ‘‘আমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি শবে বরাতের রাতে দু’রাকাত নামায পড়বে সেটা উক্ত চারশ বৎসরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম হবে। (সুবহানআল্লাহ্)

শবে বরাত অস্বীকারকারীর নিকট প্রশ্ন
আজকাল দেখা যায় একটা মহল ইসলামী নামধারী লেবাস নিয়ে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে বলে থাকে শবে বরাত নাকি ক্বোরআন হাদীসে পাওয়া যায় না। ভাষাগত শব্দের দিক দিয়ে ‘শবে বরাত’ শব্দটি ফার্সি। কিন্তু ক্বোরআন ও হাদীস হচ্ছে আরবী ভাষা। তাই শবে বরাত শব্দটি ফার্সি হওয়ায় আরবী ভাষায় পাওয়া যাবে না। এটাই সভাবিক। কিন্তু এ শব্দের আরবী অনেক প্রতি শব্দ বা সমার্থক শব্দ রয়েছে যা ক্বোরআন হাদীসে না পাওয়ার কারণে পালন করা অবৈধ হয়, তাহলে আমাদের দেশে সর্বাধিক প্রচলিত নামায এবং রোযা এ দু’টি শব্দ পাওয়া যায়। যা ফার্সিতেই ব্যবহৃত হয়। যার আরবী শব্দ সালাত এবং সাওম। এখন আমার প্রশ্ন হলো ক্বোরআন ও হাদীসে নামায ও রোযা এ দু’টি শব্দ না থাকার কারণে ‘সালাত ও সাওম’র অস্তিত্ব ও মর্যাদা কি অস্বীকার করা যাবে? (নাউজুবিল্লাহ্)

ইবনে তাইমিয়ার অভিমতঃ

ওহাবী মতবাদের অন্যতম প্রবর্তক ইবনে তাইমিয়ার মতে-

ﻭﻗﺪ ﺳﺌﻞ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﺄﺟﺎﺏ : ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻻ ﻧﺴﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻭﺣﺪﻩ ﺍﻭﻓﻰ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺧﺎﺻﺔ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﻔﻌﻞ ﻃﻮﺍﺋﻒ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻓﻬﻮ ﺣﺴﻦ – ﻭﻗﺎﻝ ﻣﻮﺿﻊ ﺍﺧﺮ : ﻭﺍﻣﺎ ﻟﻴﻠﻪ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻓﻘﺪ ﺭﻭﻯ ﻓﻰ
ﻓﻀﻠﻬﺎ ﺍﺣﺎﺩﻳﺚ ﻭﺍﺛﺎﺭ ﻭﻧﻘﻞ ﻋﻦ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﺍﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻓﺼﻼﺓ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺣﺪﻩ ﻗﺪ ﺗﻘﺪﻣﺔ ﻓﻴﻪ ﺳﻠﻒ ﻭﻟﻪ ﻓﻴﻪ ﺣﺠﺔ ﻓﻼ ﻳﻨﻜﺮ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻧﺘﻬﻰ –

অর্থাৎ- ‘‘ইবনে তাইমিয়াকে শবে বরাতের রাতে নফল নামায আদায় বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি মানুষ শবে বরাত রাতে একাকী অথবা বিশেষ জামাত সহকারে নফল নামায আদায় করে, যেমনিভাবে সালফে সালেহীনগণের অনেকেই করতেন, তাহলে তা খুবই ভাল কাজ।’’ তিনি অন্যত্র বলেন, শবে বরাতের ফযিলতে অনেক হাদীস ও রিওয়ায়েত বিদ্যমান এবং এটাও প্রমাণিত যে, সালফে সালেহীনগণ এ রাতে বিশেষ নফল নামায আদায় করতেন। সুতরাং একাকীভাবে এরাতে ইবাদতের ক্ষেত্রে সালফে সালেহীনগণ অগ্রগামী এবং এতে নির্ভরযোগ্য প্রমাণও মিলে। সুতরাং এ ধরনের বিষয়ে অস্বীকার করা যায় না।

★করণীয়ঃ

* শা’বান মাসকে রাসূলে পাক (ﷺ) নিজের মাস বলেছেন; তাই উম্মতের উচিত এ মাসে বেশী করে দরূদ শরীফ পড়া।

* অসংখ্য হাদীস শরীফে এ মাসে রোযার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে, তাই বেশী করে রোযা পালন করা যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক প্রিয় আমল ছিল।

* বেশী করে দান সদকা করা যা সাহাবা ও বুযুর্গানেদ্বীন (রহ.)-এর আমল ছিল। হাদীস শরীফেও এ ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

* ‘‘লায়লাতুল মোবারাকা’’ বলতে যেহেতু শবে বরাতকে বুঝানো হযেছে তাই এ রাতে অধিক ক্বোরআন তিলাওয়াত করা।

* সূরা ইয়াসিন তিন বার পাঠ করলে রিযিক বৃদ্ধি পায় বলে অভিমত রয়েছে।

* হাদীস শরীফে রাত্রি জাগরণ থেকে ইবাদতের কথা বলা হয়েছে, তাই সারা রাত নফল নামাযের মাধ্যমে রাত্রি যাপন করা।

*সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে যিয়ারত করার দলিল রয়েছে বিধায় এরাতে কবর যিয়ারত করা।

* সন্ধ্যায় সওয়াবের নিয়তে গোসল করা।

মহান আল্লাহ পাক এই পবিত্র শবে বরাতে আমাদের বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। #আমীন।

Spread the love

Leave a Comment