গিবত বা পরনিন্দা কাকে বলে এবং এর শাস্তি কী? গিবত মহাপাপ?

গিবত বা পরনিন্দা কাকে বলে এবং এর শাস্তি কী?

‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হহল- পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা। ইসলামি শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গুনাহের কাজ।

আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন-‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেনো পরস্পরের গীবতে লিপ্ত না হও। তোমাদের কেউ কী তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? অবশ্যই তোমারা তা ঘৃণা করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়াশীল।’ (সূরা হুজরাত-১২)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। একবার রাসূলল্লাহ (সা.) সাহাবিদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো গীবত কী? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) অধিক ভাল জানেন। রাসূল (সা.) বললেন, তোমার কোনো ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, এটিই গীবত। রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? রাসূলল্লাহ (সা.) বললেন. তুমি যা বলো তার মধ্যে তা বিদ্যমান থাকলে, তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার মধ্যে বিদ্যমান না থাকে, তখন তুমি তার ব্যাপারে অপবাদ রটালে।’ (মুসলিম শরীফ-২/৩২২)
.
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বললাম, ‘আপনাকে সাফিয়া সম্পর্কে এতোটুকু বলাই যথেষ্ট যে, সে এরূপ এরূপ। হযরত আয়েশা (রাযি.) এর দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন, সাফিয়া একটু বেঁটে। এ কথা শুনে, রাসূল (সা.) বললেন, তোমার এ কথাকে যদি সমুদ্রের সাথে মিশ্রিত করে দেয়া হয়, তবে তা সমুদ্রের রং পরিবর্তন করে দিবে।’ (আবু দাউদ-২/৬৬৮)

গিবতের শাস্তি

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হে মানব সকল! যারা শুধুমাত্র মুখে ঈমান এনেছো, ঈমান যাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলমানদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহপাক তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহপাক যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে স্বগৃহেও লাঞ্ছিত করেন। (আবু দাউদ- ২/৬৬৯)

হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, সেখানে আমি এমন কিছু মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিলো তামার। তারা তাদের চেহারা এবং বক্ষকে আঁচড়াতে ছিলো। আমি জিবরাঈল (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বললেন, এরা ওই সমস্ত ব্যক্তি, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশতো ভক্ষণ করতো, অর্থাৎ, তারা মানুষের গীবত করতো এবং তাদের ইজ্জতহানি করতো।’ (আবু দাঊদ-২/৬৬৭)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। একবার দু’জন ব্যক্তি যোহর অথবা আসরের নামাজ আদায় করলো। তারা উভয়ই ছিলো রোজাদার। রাসূল (সা.) নামাজ সমাপ্ত করে উক্ত দু’জন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা উভয়ই পুনরায় ওজু করো এবং নামাজ আদায় করো। (আজকের ) রোজা পূর্ণ করে অন্য কোনো দিন এর কাযা করো। তারা জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) কেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা অমুক ব্যক্তির গীবত করেছো। (শু‘য়াবুল ঈমান-৫/৩০৩)

আবু সাঈদ ও জাবের (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, গীবত যিনা ব্যাভিচার থেকেও জঘন্য। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) কিভাবে গীবত যিনা ব্যাভিচার থেকেও জঘন্য? রাসূল (সা.) বললেন, কোনো ব্যক্তি যিনা করে, অতঃপর সে তওবা করে, ফলে আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু গীবতকারীকে আল্লাহপাক ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত যার গীবত করা হয়েছে, সে ক্ষমা না করে। হযরত আনাস (রাযি.)-এর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যিনাকারী তওবা করে, কিন্তু গীবতকারীর তওবা নেই। (শু‘য়াবুল ঈমান-৫/৩০৬)

গিবত থেকে বাঁচার উপায়

হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তোমার উপস্থিতিতে কারো গীবত করা হয়, তখন তুমি তার প্রশংসা শুরু করে দাও এবং তার ভাল দিকগুলো তুলে ধরো, সম্ভব হলে গীবত বন্ধ করার চেষ্টা করো, অন্যথায় সে মজলিস বর্জন করো। কেননা, চুপ থাকলে তুমিও গীবতকারী বলে গণ্য হবে।’ (দুররে মানছুর)


গিবতের কাফফারা
হযরত আনাস (রাযি.) বলেন, রাসূলল্লাহ (সা.) বলেছেন, গীবতের কাফফারা হলো, যার গীবত করা হয়েছে, তার জন্য মাগফিরাত কামনা করা। (মেশকাত-২/৪১৫) যদি তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভাব হয় তাহলে ক্ষমা চেয়ে নেবে । আর যদি মারা যায় বা যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা না থাকে কাহলে,তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবে ।

সংশোধনের জন্য বলতে চাইলে যার বিষয় শুধু তাকেই বলা যাবে, অন্যকে নয়। সমালোচনাকারীকে বিচারের দিনে নিজের নেক আমল দিয়ে এর বিনিময় পরিশোধ করতে হবে। যার সমালোচনা করেছে, তার গুনাহ নিয়ে সমালোচনাকারীকে জাহান্নামে যেতে হবে।

আল্লাহ যেন সকলকে গিবত থেকে বাচিয়ে রাখেন । আমিন

Spread the love

Leave a Comment