ফরজ গোসল করার সঠিক পদ্ধতি জানুন

ফরজ গোসল করার সঠিক পদ্ধতি

হযরত  সায়্যিদুনা  জুনাইদ  বাগদাদী ﺭَﺣْﻤَۃُ ﺍﻟﻠّٰﮧِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ  বলেন:  ইবনুল  কুরাইবীﺭَﺣْﻤَۃُ ﺍﻟﻠّٰﮧِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ     বর্ণনা করেন;  একবার     আমার  স্বপ্নদোষ হলো, আমি তখন গোসল করার ইচ্ছা পোষণ  করলাম।   প্রচন্ড শীতের  রাত   ছিলো।   তাই আমার   নফস   আমাকে   পরামর্শ   দিলো:  “এখনও  রাতের  অনেকাংশ  বাকী আছে,  এত  তাড়াতাড়ি     করার     কী     প্রয়োজন?    সকালে প্রশান্ত মনে গোসল করে নিতে পারবে।”

আমি    তাড়াতাড়ি     আমার     নফসকে     একটি অনুপম শাস্তি দেয়ার শপথ করলাম।  তা  হলো: আমি প্রচন্ড শীতের মধ্যেই কাপড় সহ গোসল করব     এবংগোসল    করার    পর    কাপড়     না নিংড়িয়ে ভিজা কাপড়েই থাকব এবং শরীরেই সে   ভিজা   কাপড়   শুকাব,   বাস্তবে   আমি   তাই  করলাম। যে দুষ্ট নফস আল্লাহ্ তাআলার কাজে অলসতা করার জন্য প্ররোচনা দিয়ে থাকে তার এরূপ        শাস্তিই        হয়ে        থাকে। (কিমিআয়ে  সাআদাত, ২য় খন্ড, ৮৯২ পৃষ্ঠা)

বর্ণিত  ঘটনা  থেকে  শিক্ষাগ্রহণ     করা   উচিত,      যারা     রাতে    স্বপ্নদোষ      হওয়ার     পর পরকালের ভয়ানক লজ্জাকে ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র পরিবারের    সদস্যদের     লজ্জায়     বা অলসতার কারণে    গোসল   থেকে বিরত   থেকে   ফযরের নামাযের জামাআত নষ্ট করে। এমনকি আল্লাহর পানাহ! নামায পর্যন্তও কাযা করে ফেলে। যখন কোন    কারণে     গোসল    ফরয     হবে     তখনই আমাদের    গোসল   করে   নেয়া উচিত। হাদীস শরীফে      বর্ণিত   আছে:   “ফিরিশতারা   সে   ঘরে প্রবেশ করে  না, যে ঘরে  ছবি,  কুকুর ও  জুনুবী ব্যক্তি (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার উপর স্ত্রী সহবাস বা  স্বপ্নদোষ  বা  যৌন    উত্তেজনাবশত  বীর্যপাত হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয়েছে)   রয়েছে। (সুনানে   আবু     দাউদ,   ১ম    খন্ড,   ১০৯   পৃষ্ঠা,  হাদীস-২২৭)

প্রথমে মনে মনে  এভাবে নিয়্যত    করুন,    আমিপবিত্রতা    অর্জনের   জন্য গোসল  করছি।  তারপর   উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার  ধৌত   করুন।  তারপর    ইস্তিন্জার   স্থান যদিও নাপাকী  থাকুক   বা  না  থাকুক,  তারপর শরীরের কোথাও  নাপাকী  থাকলে  তা দূরীভূত  করুন। অতঃপর নামাযের অযুর মত অযু করুন। কিন্তু     পা      ধৌত     করবেন      না।     তবে উঁচু জায়গাতে গোসল করলে  পাও  ধুয়ে নিন।

অতঃপর   তিনবার    ডান   কাঁধে,   তিনবার     বাম কাঁধে এবং তিনবার মাথা ও সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করুন। এবং ভালোভাবে হাত দিয়ে মালিশ করুন বা  মেজে নিন, যাতে সব যায়গাতে ভালো করে পানি পৌছে যায়।   তারপর  গোসলের  স্থান  থেকে সরে দাঁড়ান। অযু করার সময় যদি পা ধুয়ে না থাকেন  তাহলে  এখন    পা  ধুয়ে     নিন।  হাত  দ্বারা সমস্ত     শরীর     ভালভাবে   নিন।     এমনজায়গায় গোসল করা উচিত যেখানে কারো দৃষ্টি না পড়ে। যদি তা সম্ভব না হয়  পুরুষেরা  নাভী থেকে   হাঁটু   পর্যন্ত   একটি মোটা   কাপড়   দ্বারা  সতর ঢেকে নেবে।  

আর  মোটা কাপড় পাওয়া না    গেলে    প্রয়োজনানুসারে দুইটি বা   তিনটি কাপড়     দ্বারা     সতর    ঢেকে      নেবে।    কেননা, গোসল       করার   সময়   পরনে   পাতলা   কাপড় থাকলে পানি   পড়ার  সাথে    সাথে তা শরীরের সাথে লেগে যায় এবং আল্লাহর পানাহ! হাঁটু, উরু ইত্যাদির আকৃতি প্রকাশ পায়। মহিলাদের জন্য তো সতর ঢাকার  ক্ষেত্রে   আরো বেশি   সতর্কতা অবলম্বন  করা প্রয়োজন।   গোসল   করার  সময় কোন  রকম  কথাবার্তা  বলবেননা  এবং  কোন  দোয়াও পড়বেন না।

গোসলের পর তোয়ালে, গামছাইত্যাদি      দ্বারা      শরীর      মুছতে     কোন অসুবিধা    নেই।     গোসলের    পর তাড়াতাড়ি কাপড় পরিধান  করে নিন এবং মাকরূহ সময়  না হলে   গোসলের  পর দু’রাকাত নফল নামায   আদায়  করা   মুস্তাহাব।  (আলমগিরী,  ১ম   খন্ড, ১৪    পৃষ্ঠা।   বাহারে   শরীয়াত,  ১ম  খন্ড,  ৩১৯ পৃষ্ঠা)

গোসলের ফরজ ৩টি

  • কুলি   করা
  • নাকে   পানি   দেয়া
  •  সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা।

(১) কুলি করাঃ

মুখে   সামান্য   পানি   নিয়ে    সামান্য    নড়াচড়া করে ফেলে দেয়ার নাম কুলি  নয়। বরং    মুখের ভিতরের প্রতিটি   অংশে,   প্রান্তে   ও   ঠোঁট   হতেকণ্ঠনালীর    গোঁড়া   পর্যন্ত    প্রতিটি    স্থানে   পানি  পৌঁছাতে   হবে। একইভাবে  চোয়ালের   পিছনে,  গালের   ভিতরস্থ    চামড়াতে,    দাঁতের   ছিদ্র     ও গোঁড়াতে,   জিহ্বার   প্রত্যেক পিঠে  এবং   গলার গভীরেও  পানিপৌঁছাতে  হবে।  রোযা  অবস্থায়  না    থাকলে  গড়গড়া  করাও   সুন্নাত। দাঁতের  ফাঁকে    সুপারির     দানা,    বিচির   খোসা   ইত্যাদি আটকে থাকলে তা বের  করে ফেলা আবশ্যক।

(২) নাকে পানি দেওয়াঃ

তাড়াতাড়ি     নাকের      মাথায়      সামান্য     পানি লাগিয়ে  নিলে   নাকে পানি  দেয়া  বলা  যায়  না বরং   নাকের ভিতর যতটুকু নরম  জায়গা  আছে তাতে    এবং     শক্ত    হাঁড়ের    শুরু     পর্যন্ত     পানি পৌঁছানো আবশ্যক। আর সেটা এইভাবে  হতে   পারে   যে,   নাকে     পানি    নিয়ে     নিঃশ্বাস    টেনে উপরেনিয়েই      নাকের সম্পূর্ণ  স্থানে      পানি পৌঁছানো।  এটা স্মরণ  রাখবেন! নাকের ভিতর  চুল   পরিমাণ   স্থানও     যাতে   অধৌত   থেকে না যায়। অন্যথায় গোসল আদায় হবে না। নাকের ভিতর যদি শ্লেষ্মা  শুকিয়ে যায়, তাহলে তা বের করে নেয়া ফরয। নাকের ভিতরের লোমগুলোও ধৌত করা  ফরয।   (বাহারে     শরীয়াত,  ৪৪২-৪৪৩ পৃষ্ঠ)

(৩) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করাঃ

মাথার    চুল    থেকে   পায়ের   তালু   পর্যন্ত    সম্পূর্ণ শরীরে প্রতিটি  অংশে এবং প্রতিটি লোমে পানি প্রবাহিত করা    আবশ্যক।    শরীরে    কিছু    স্থানএমনও আছে যেগুলোতে সতর্কতার সাথে পানি পৌঁছানো   না হলে    তা শুষ্ক  থেকে  যায়  ফলে গোসল   আদায় হয়  না। (বাহারে শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ৩১৭ পৃষ্ঠা)

❃পুরুষের   মাথার   চুল   যদি     বেনী    বাঁধা     হয়, তাহলে    তা  খুলে  চুলের  গোঁড়াথেকে      আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয।

❃ মহিলাদের জন্য শুধুমাত্র চুলের গোঁড়া ভিজিয়ে নেয়া আবশ্যক। চুলের খোঁপা বা বেনী   খোলার  প্রয়োজন  নেই। তবে খোঁপা  যদি  এমন শক্তভাবে  বাধা হয়  যে, তা  খোলা    ব্যতীত    চুলের  গোঁড়া  পর্যন্ত পানি   পৌঁছানোঅসম্ভব,  তাহলে  খোঁপা    খুলে   নিতে হবে।

❃যদি কানের দুল  এবং    নাকের  ফুলের  ছিদ্র   থাকে   এবং   সেটা     যদি    বন্ধ     না    থাকে, তাহলে    তাতে পানি   পৌছানো   ফরয।  অযুতে  শুধু নাকের ফুলের  ছিদ্রে এবং গোসলে নাক ও কান  উভয়ের  ছিদ্রে পানি  প্রবাহিত করুন।

❃ ভ্রু, গোঁফ ও দাঁড়ির  প্রত্যেক  লোমের  গোঁড়া   থেকে আগা পর্যন্ত এবং ঐগুলোর নিচের চামড়া ধৌত করা  আবশ্যক।

❃কানের  প্রত্যেক  অংশ এবং   কানের  ছিদ্রের      মুখ  ধৌত   করতে  হবে।

❃কানের     পিছনের    চুল     থাকলে    তা    সরিয়ে সেখানে পানি পৌঁছাতে হবে।

❃চিবুক ও গলার সংযোগস্থলে    চেহারা    উত্তোলন    করেই    ধৌত  করতে হবে।

❃ উভয় হাত ভালভাবে উত্তোলন করেই    বগল    ধৌত    করতে    হবে।

❃ নাভীতেও পানি পৌঁছাতে হবে, যদি নাভিতে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি  হয় তাহলে  নাভিতে আঙ্গুল  ঢুকিয়েই  নাভি  ধৌত করতে হবে।

❃যদি নখ পালিশ নখের     সাথে     লেগে     থাকে      তা     নখ      থেকে ছাড়িয়ে নেয়া ফরয নতুবা গোসল আদায় হবে না।    তবে   মেহেদীর  রং  থাকলে  তাতে   কোন অসুবিধা নেই।

❃ক্ষতস্থানে  ব্যান্ডেজ, পট্টি  ইত্যাদি  বাঁধা থাকলে এবং     তা    খুলতেগেলে    ক্ষতি    বা    অসুবিধার সম্ভাবনা থাকলে   গোসল  করার  সময়  পট্টিবা ব্যান্ডেজের উপরই মাসেহ  করলে  যথেষ্ট হবে। অনুরূপ   শরীরে কোনস্থানে   রোগ   বা   ব্যথার  কারণে  পানি  প্রবাহিত  করা   ক্ষতিকর  হলে   সে স্থানের সম্পূর্ণ অঙ্গেই  মাসেহ করে  নিবে। পট্টি    বা  ব্যান্ডেজ  প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থান   বেষ্টন  করে  বাঁধা  উচিত  নয়। কেননা,  তাতে  মাসেহ  শুদ্ধ  হবে  না।  যদি  প্রয়োজনের  অতিরিক্ত  স্থান  বেষ্টন করে পট্টি  বাঁধা ছাড়া উপায়   না   থাকে, যেমন      বাহুতে       আঘাত       প্রাপ্ত         হলো      কিন্তু গোলাকার করেই বাহুতে পট্টি বাঁধা হলো, ফলে বাহুর অক্ষত অংশও  পট্টির আওতায়  চলে  এল  এবং পট্টি দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ল, এমতাবস্থায় পট্টি   খোলা     যদি     সম্ভবপর   হয়   তাহলে    পট্টি খোলেই সে  অক্ষতস্থান ধৌত করা ফরয। আর যদি  পট্টি   খোলা  অসম্ভব  হয়   বা  সম্ভব হলেও পুনরায়  সে  রকম  করে  বাঁধা  অসম্ভব হয়  এবং তাতে ক্ষতস্থানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে সম্পূর্ণ    পট্টির   উপরই    মাসেহ     করলেচলবে। শরীরের  সে  অক্ষত  অংশও  আর  ধৌত  করতে  হবে না। (বাহারে শরীয়াত,   ১ম   খন্ড,   ৩১৮  পৃষ্ঠা)

❃হস্ত    মৈথুনের     মাধ্যমে     বীর্যপাত    ঘটালে গোসল     ফরয     হয়।     হস্তমৈথুন      করা      একটি গুনাহের  কাজ।           হাদীস           শরীফে          হস্ত  মৈথুনকারীকেমালাঊন   (অভিশপ্ত)  আখ্যায়িত   করা     হয়েছে। (আমালী   ইবনে   বুশরান,   ২য়   খন্ড,      ৫     পৃষ্ঠা,      নম্বর-      ৪৭৭।     হাশিয়াতুত   তাহতাবী আলা   মারাকিউল  ফালাহ,  ৯৬ পৃষ্ঠা) হস্ত   মৈথুনের   দ্বারা   পুরুষত্ব   দূর্বল   হয়ে  পড়ে, ফলেমানুষ   বিবাহের   যোগ্যতা   হারিয়ে  ফেলে এবং বিবাহ করতে ভয় পায়।

FAQ

Q: যৌন  উত্তেজনা ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে বীর্য  বের হয় তাহলে কি গোসল ফরজ হবে ?

An: যৌন  উত্তেজনার  কারণে  বীর্য  বের   হয়নি   বরং ভারী    বোঝা   উঠানোর কারণে    বা  উঁচু   স্থান  থেকে  নামার    কারণে  বা মলত্যাগের জন্য জোর দেয়ার কারণে বীর্য বের হলো,  গোসল   ফরয  হবে  না  শুধু সেই স্থান ধুয়ে  অযু  করে নিতে হবে।

Q: খারাপ সপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে ওঠে কাপড়ে স্বপ্ন দোষের কোন চিহ্ন পেলাম না তাহলে কি গোসল ফরজ হবে ?

An: যদি   স্বপ্ন  দোষ  হওয়ার   কথা  মনে আছে কিন্তু এর   কোন  চিহ্ন কাপড়  ইত্যাদিতে দেখা  গেলো   না,  গোসল   ফরয  হবে  না।

Q: সহবাস এর ইচ্ছা নিয়ে স্ত্রীর কাছে গেলাম কিন্তু বীর্যপাত হলো না তাহলে কি গোসল ফরজ হবে ?

An: মহিলার      যৌনাঙ্গে   পুরুষাঙ্গের  অগ্রভাগ   তথা    কর্তিত    অংশ প্রবেশ   করালে। কামোত্তেজনা বশত   হোক  বা  না   হোক    এবং বীর্যপাত  হোক    বা না হোক সর্বাবস্থায় উভয়ের উপর গোসল  ফরয হবে।

Q: ফরজ গোসল করার পর কাপড় কতবার ধুঁতে হবে ?

An: যদি কাপড়ে বীর্য লেগে যায় তাহলে তা থেকে নাপাকি দূর করতে হবে । যদি সাবান বা সার্প দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলে তাহলে নাপাকি দূর হয়ে যায় তাহলে হয়ে যাবে । তবে ৩বার ধৌত করা উত্তম ।

এবার এটি পড়ুন- YouTube (ইউটিউব) এর ইনকাম হালাল নাকি হারাম?

Spread the love

Leave a Comment