নবী (সাঃ) এর ইলমে গায়েব

ইলমে গায়েবের আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং সেসবের উত্তর সম্পর্কে অবশ্যই পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। যেমন-

(১) ইলম বা জ্ঞান কতো প্রকার ও কী কী এবং প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাইবা কী?

(২) ইন্দ্রিয় কাকে বলে এবং কতো প্রকার ও কী কী?

(৩) নাবা, নবুয়ত ও নবী শব্দের অর্থ ও মর্ম কী কী?

(৪) ইলমে গায়েবের ভান্ডারগুলো কী কী?

(৫) আলিমুল গায়েব শব্দের অর্থ কি এবং আল্লাহুতা’লা ছাড়া আর কেউ (গায়রুল্লাহ্) আলিমুল গায়েব হতে পারেন কিনা?

(৬) মহান আল্লাহপাক মহানবীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইলমে গায়েব দান করেছেন কিনা এবং করে থাকলে, কতোটুকু ও কিভাবে দান করেছেন?

Quation 1 ইলম বা জ্ঞান কতো প্রকার ও কী কী এবং প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাইবা কী?

উত্তর :- ইলম বা জ্ঞান দু’ প্রকার। যথা-

(১) ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান (ইন্দ্রিয় শক্তির বাইরে)

(২) ইলমে শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান।

(আল-কোরআন থেকে শাব্দিক বিশ্লেষণ)

“ইলম” ও “গায়েব” শব্দ দু’টি একটি অপরটির সাথে আরবি ব্যাকরণের আল-ইদ্বাফার নিয়ম অনুসারে, “মুদ্বাফ” ও “মুদ্বাফু ইলাইহ” হিসেবে, অর্থাৎ “ইলমুল গাইব” আকারে কুরআন মজীদের একটিমাত্র জায়গায় রয়েছে (সূরা নাজম: ৩৫)।

কখনো কখনো (মোট তিনবার) কুরআন মজীদে “আনবাউল গাইব” কথাটিও এসেছে সূরা আলে ইমরান: ৪৪, সূরা হুদ: ৪৯ ও সূরা ইউসূফ: ১০২। “আনবাউ” শব্দটি “নাবা” শব্দের বহুবচন – যার অর্থ হলো, খবর, বার্তা, সংবাদ ইত্যাদি। সুতরাং “আনবাউল গায়েব” মানে, অতীন্দ্রিয় সংবাদাদি। আবার – কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহপাকের শানে “আলিমুল গায়েব” কথাটি মোট ১৩ (তেরো) বার এবং “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি মোট চারবার -সূরা আল- মায়েদা: ১০৯ ও ১১৬, সূরা তাওবা: ৭৮,সূরা সাবা: ৪৮ নং আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এবার আসুন, প্রাসঙ্গিক শব্দগুলো নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করি

আলিম শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, জ্ঞানী । এটি একটি ইসম ফায়েল (ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য) যা ধর্মীয় জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও অহরহ ব্যবহৃত হয়। আর “আল্লামু” শব্দটি আলিম শব্দের ইসম মুবালাগাহ যার আভিধানিক অর্থ হলো, মহাজ্ঞানী।

গায়েব শব্দটি মুফরাদ একবচনবাচক একটি শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে, গুয়ূব। সুতরাং আলিমুল গায়েব-এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, গায়েবজান্তা। আর আল্লামুল গুয়ূব-এর অর্থ হল, সকল গায়েব সম্পর্কে মহাজ্ঞানী।

অর্থাৎ “আলিমুল গায়েব” কথাটি সাধারণ অর্থ বোঝাচ্ছে; আর “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি ব্যাপক অর্থ বোঝাচ্ছে।

Quation 2 ইন্দ্রিয় কাকে বলে এবং কতো প্রকার ও কী কী?

উত্তর:- যেসব অঙ্গ বা শক্তি দিয়ে পদার্থের বা বাইরের বিষয়ের উপলব্ধি বা জ্ঞান জন্মে এবং কাজ করা যায় – ওসব অঙ্গ বা শক্তির প্রতিটিকে ইন্দ্রিয় বলে।

মানুষের ইন্দ্রিয় মোট ১৪টি।example:-

৫টি জ্ঞানিদ্রিয় :- চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক (চামড়া)!

৫টি কামেন্দ্রিয়: বাক (কথা), হাত, পা, পায়ু (মলদ্বার) ও উপস্থ (লিঙ্গ বা যোনি)!

৪টি অন্তরিন্দ্রিয়:- মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার ও চিত্ত!

(সূত্র: ব্যবহারিক বাংলা অভিধান – বাংলা একাডেমী)।

সুতরাং ঐ চোদ্দটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যেসব জ্ঞান অর্জিত হয় – তা কখনোই গায়েবের ইলম নয়, বরং ওগুলো সবই ইলমে শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান। আর ঐ চোদ্দটি ইন্দ্রিয় ছাড়া যেসব জ্ঞান আমরা লাভ করেছি বা করি – সেগুলোই হচ্ছে, গায়েবের ইলম।

Quation 3 – নাবা, নবুয়ত ও নবী শব্দের অর্থ ও মর্ম কী কী?

উত্তর :-ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত :- আরবী-বাংলা অভিধানের দ্বিতীয় খন্ডের ৯০৪ নং পৃষ্ঠায় “নাবা” শব্দের বাংলা অর্থ লেখা হয়েছে, খবর, সংবাদ, তথ্য, রিপোর্ট।

৯০৭ নং পৃষ্ঠায় “নবুয়ত” শব্দের বাংলা অর্থ লেখা হয়েছে, “আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী অনুপ্রেরণার মাধ্যমে অদৃশ্য বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া, আল্লাহতা’লা এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা, নবীর পদ। প্রকাশ থাকে যে, ইহা নাবা থেকে নির্গত।”

৯০৮ নং পৃষ্ঠায় “নবী” শব্দের বাংলা অর্থ লেখা হয়েছে, “নবী, রাসূল, আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ, আল্লাহতা’লা এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী, আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী অনুপ্রেরণার মাধ্যমে অদৃশ্য বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংবাদ দানকারী

তেমনি ইংরেজিতে নবীকে Prophet বলা হয়। Prophet শব্দটি Prophecy বা Prophesy শব্দ থেকে এসেছে। Prophecy শব্দটি Noun বা বিশেষ্য – যা অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যদ্বাণী এবং Prophesy শব্দটি Verb বা ক্রিয়া – যার অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যদ্বাণী করা।

তাই, Prophet শব্দের অর্থ হচ্ছে, (আল্লাহর মনোনিত) ভবিষ্যদ্বক্তা। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরাম (’আলাইহিমুস্ সালাম) হচ্ছেন, গায়েবের বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের সংবাদদাতা ।

Quation 4 ইলমে গায়েবের ভান্ডারগুলো কী কী?
উত্তর :- ইলমে গায়েবের দু’ রকমের ভান্ডার রয়েছে; যথা-

(১) উৎস (যিনি সত্তাগত প্রকৃতিগত ভাবেই সমস্ত গায়েবের জ্ঞানী এক আল্লাহ) এবং

(২) সূত্র (যাদের মাধ্যমে আল্লাহ গায়েব প্রকাশ করেন)

উৎস হচ্ছেন, আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা নিজেই। কেননা, তিনি হচ্ছেন, অতীন্দ্রিয় পরম সত্তা। তাই, তিনি ইলমে গায়েবের সার্বিক বা পরম ভান্ডার। তদুপরি, তাফসীরে ইবনে আব্বাসে সূরা আল-বাকারার শুরুতে গায়েবের অন্যতম তাফসীরে লেখা হয়েছে, “গায়েব অর্থ আল্লাহুতা’লা স্বয়ং।”

আর সূত্র হচ্ছে, মহান আল্লাহপাকের প্রদত্ত বিশেষ বিশেষ ভান্ডার; যেমন-

(ক) সাহেবে কুরআন সায়্যিদুনা হুজুরে পুরনূর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম),

(খ) লওহে মাহফুয,

(গ) ফেরেশতা ও কুরআন মজীদ (গায়েবের তথ্য বহনকারী)

(গ) হাদীছ শরীফ,

(ঘ) অন্যান্য নবী (’আলাইহিমুস্ সালাম),

(ঙ) অন্যান্য আসমানি কিতাব,

(চ) আওলিয়ায়ে কেরাম (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) ইত্যাদি।

ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের প্রধান ভান্ডার বা সবচেয়ে বড় সূত্র হচ্ছেন, সায়্যিদুনা রাসূলে পাক (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

যেমন: আলোচিত হয়েছে – (সূরা নিসা: ১১৩) (সূরা তাকভীর: ২৪)

ইলমে গায়েবের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছে, লওহে মাহফুয। কেননা, প্রথমত, কুরআন শরীফ লওহে মাহফুযেও সংরক্ষিত রয়েছে (সূরা বুরূজ: ২১-২২)। দ্বিতীয়ত, মাফাতিহুল গায়েব বা গায়েবের চাবিগুচ্ছের খবর লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ রয়েছে (সূরা আন’য়াম: ৫৯)। তৃতীয়ত, ছোট-বড় সব কিছুই লওহে মাহফুযে রয়েছে (সূরা ক্বামার: ৫৩ ও সূরা সাবা: ৩)। চতুর্থত, প্রতিটি জিনিস লওহে মাহফুযে লিখিত ও সংরক্ষিত রয়েছে (সূরা ইয়াসীন: ১২)।

হাদীছ শরীফে রয়েছে যে, সায়্যিদুনা হায়াতুন্নবী (’আলাইহিস্ সলাতু ওয়াস সালাম) পৃথিবীতে তাশরীফ নিয়ে আসার আগে দুষ্ট জ্বীন বা শয়তানরা লওহে মাহফুযে উঁকিঝুঁকি মেরে ভবিষ্যতের জ্ঞান জেনে নিয়ে গণক ও জ্যোতিষদেরকে তা জানিয়ে দিতো। এভাবেই হযরত মূসার (’আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে ফেরাউনের গণকরা আগাম খবর পেয়েছিলো। অবশ্য নূর নবীজীর (’আলাইহিস্ সলাতু ওয়াস সালাম) দুনিয়াতে তাশরীফ আনার পরে, এ প্রক্রিয়া বা ধারা (শয়তানদের লওহে মাহফুযে উঁকিঝুঁকি মারা) বন্ধ হয়ে যায়।

ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের অন্যতম ভান্ডার বা প্রধানতম সূত্র হচ্ছে, কুরআন মজীদ। প্রথমত, লওহে মাহফুযে যা কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে – আল-কুরআনেও তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। মহান আল্লাহপাক শর্তহীন ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ফরমান: আমি কিতাবে কোন কিছুই বাদ দেই নি (সূরা আন’য়াম: ৩৮)। তাফসীরে ইবনে আব্বাসে এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে লিখা আছে, “লওহে মাহফুযে আমি যা কিছু লিখে রেখেছি – তার কোন কিছুই বাদ দেই নি; সবই কুরআনে বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয়ত, পবিত্র কুরআনে প্রতিটি জিনিসেরই (ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাত) স্পষ্ট ও বিস্তারিত বিবরণ ও ব্যাখ্যা

রয়েছে (সূরা ইউসূফ: ১১১ ও সূরা নাহল: ৮৯)।

ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছে, হাদীছ শরীফ।

হাদীছ শরীফে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিন-তারিখ, কিয়ামতের আলামত, হযরত ঈসা ও ইমাম মাহদীর (’আলাইহিমাস সালাম) আগমন, দাজ্জাল ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাব, পশ্চিমে সূর্যোদয়, হযরত ইস্রাফীলের (’আলাইহিস সালাম) শিঙ্গায় ফুৎকার, ফেরেশতা, হুর, জ্বীন, শয়তান, বেহেশত, দোযখ, পুলসিরাত, শাফায়াত, আলমে বারঝাখ, হাশর-নশর ইত্যাদি সংক্রান্ত বহু ভবিষ্যৎবাণী ও বর্ণনা রয়েছে – যেগুলো সন্দেহাতীতভাবে ইলমে গায়েবের অন্তর্গত।

ইলমে গায়েবের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছেন, অন্যান্য নবী (’আলাইহিমুস সালাম)। প্রথমত, আল্লাহুতা’লা তাঁর মনোনীতি রাসূলগণকে (’আলাইহিমুস সালাম) গায়েব জানিয়েছেন (সূরা আলে ইমরান: ১৭৯ ও সূরা জ্বীন: ২৬-২৮)।

আল্লাহুতা’লা হযরত আদমকে (’আলাইহিস সালাম) প্রতিটি জিনিসের (গায়েব ও শাহাদাতের) নাম শিখিয়েছেন (সূরা আল-বাকারাহ: ৩১)

পবিত্র মেরাজের রজনীতে সায়্যিদুনা শাফীউল মুযনিবীন (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মহান আল্লাহপাকের তরফ থেকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের তোহফা নিয়ে ফিরছিলেন – তখন, হযরত মূসা (’আলাইহিস সালাম) “উম্মতে মুহাম্মাদী এতো নামাজ আদায় করতে পারবে না মর্মে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এবং তাঁকে বারবার নামাজ কমিয়ে আনতে অনুরোধ করেন। এছাড়া আল্লাহুতা’লা হযরত খিজিরকে (’আলাইহিস সালাম) ইলমে লাদুন্নী দান করেছেন (সূরা আল-কাহাফ: ৬৫)। তাফসীরে তাবারীতে হযরত ইবনে আব্বাসের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) সূত্রে, তাফসীরে বয়দ্বাভী, নাসাফী, খাঝিন ও তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে লিখা হয়েছে যে, ইলমে লাদুন্নী মানে ইলমে গায়েব – যা আল্লাহুতা’লা হযরত খিজিরকে (’আলাইহিস সালাম) দান করেছেন।

ইলমে গায়েবের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছে, অন্যান্য আসমানি কিতাব। প্রথমত, পবিত্র কুরআন আগেকার আসমানি কিতাবগুলোর সমর্থক (সূরা ইউনূস: ৩৭ ও সূরা ইউসূফ: ১১১)। দ্বিতীয়ত, আসমানি কিতাব মানেই হচ্ছে, ওহীর সম্ভার। আর ওহী মানেই হলো, গায়েবের বিষয় (সূরা আলে ইমরান: ৪৪ ও সূরা হুদ: ৪৯)। তৃতীয়ত, সেগুলোতে মহান আল্লাহপাকের পরিচিত, নবীজীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) আগমনের ভবিষ্যৎবাণী, কবর ও পরকালের পুরস্কার ও শাস্তি, বেহেশত ও দোযখের বিবরণ, ফেরেশতাগণের কর্মকান্ড, কিয়ামত ও হাশর-নশরের বর্ণনা ইত্যাদি ছিলো।

তিনি হযরত মরিয়মকে (’আলাইহাস্ সালাম) জানিয়েছেন (সূরা আলে ইমরান: ৪২, ৪৩, ৪৫-৪৭ ও সূরা মরিয়াম: ২৪-২৬)। অথচ তিনি নবী ছিলেন না, বরং ওলীয়া ছিলেন।

বহু ওলী কাশফুল কুবুরও ছিলেন – যাঁরা কবরবাসীদের হাল-হাকীকত জানতে পারতেন। গাউছে পাক ও খাজা গরীবে নেওয়াজ প্রমুখের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) বিশ্বস্ত জীবনীগুলো এর সাক্ষ্য বহন করছে; যেমন- বাহজাতুল আসরার, সিয়ারুল আকতাব, আনিসুল আরওয়াহ, সিররুল আরিফীন, খাজিনাতুল আসফিয়া ইত্যাদি।

Quation 5 আলিমুল গায়েব শব্দের অর্থ কি এবং আল্লাহুতা’লা ছাড়া আর কেউ (গায়রুল্লাহ্) আলিমুল গায়েব হতে পারেন কিনা?

উত্তর :- আলিমুল গায়েব শব্দের অর্থ হলো, গায়েবজান্তা এবং অন্য কেউ (গায়রুল্লাহ্) আলিমুল গায়েব হতে পারেন আল্লাহর কসম যদি একমাত্র সেই যাকে আল্লাহ গায়েবের খবরাদি জানিয়েছেন অন্য কেউ না। মহান আল্লাহপাক সন্দেহাতীতভাবে মালিকুল গায়েব ও মালিকুশ শাহাদাত। কিন্তু তাই বলে, আলিমুল গায়েবের অর্থ কখনোই মালিকুল গায়েব নয়, বরং এর অর্থ হচ্ছে, গায়েবের আলেম কিংবা গায়েবজান্তা বা গায়েবজ্ঞাতা তথা অতীন্দ্রিয় জ্ঞানের অধিকারী। সুতরাং যিনি গায়েবের খবর জানেন – তিনিই আলিমুল গায়েব। যেমন- আল্লাহুতা’লা ফরমান: আর আল্লাহ্ ধনী এবং তোমরা (বান্দারা) ফকীর (সূরা মুহাম্মাদ: ৩৮)। কিন্তু তার পরেও ধন-সম্পদের অধিকারী বান্দাকে নির্দ্বিধায় ধনী বলা যায়।

আল্লাহপাক মাঝে মাঝে আলিমুল গায়েবের চেয়েও ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ (আল্লামুল গুয়ূব) নিজের জন্যে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু গোমরাহ ওয়াহাবী সম্প্রদায় আলিমুল গায়েব ও আল্লামুল গুয়ূবের পার্থক্য ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে অক্ষম!

Quation 6 মহান আল্লাহপাক মহানবীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইলমে গায়েব দান করেছেন কিনা এবং করে থাকলে, কতোটুকু ও কিভাবে দান করেছেন?

আল্লাহ পাক তার এলেম থেকে সবচেয়ে বেশি দান করেছেন সায়্যিদুনা মহানবীকে (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম); তারপরে, অন্যান্য নবী-রাসূলকে (’আলাইহিমুস সালাম); এরপরে তাঁর ওলীগণকে (’আলাইহিমুর রাহমাহ) এবং তারপরে অন্যান্যকে। যেমন- তিনি ঘোষণা করেছেন: তিনি যতোটুকু চান – ততোটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান থেকে তারা কোন কিছুই পায় না (সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৪)। তদুপরি, তিনি ইরশাদ করেছেন: আর প্রত্যেক জ্ঞানবান (যিল্ ইলম) ব্যক্তির উপরে একজন মহাজ্ঞানী (আলীম) রয়েছে (সূরা ইউসূফ: ৭৬)। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন: “(জ্ঞানের) এ ধারাবাহিকতা সবশেষে আল্লাহুতালা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাঁর জ্ঞান সবার জ্ঞানের চেয়ে বেশি।”

তাঁর হাবীবের সাথে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছেন: আপনার পালনকর্তা আপনাকে এমনি দেয়া দেবেন যে, আমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন (সূরা দোহা: ৫)।

আল্লাহুতা’লা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন: আপনি যা জানতেন না – তা আপনাকে শিখিয়েছেন (সূরা নিসা: ১১৩)

বি: দ্র: মা আয়েশা সিদ্দীকার (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহা) বিরুদ্ধে যে অপবাদ রটে ছিলো – এর প্রকৃত ঘটনা জানা থাকা সত্ত্বেও নবীজী (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) নিজের স্ত্রীর পক্ষে একতরফাভাবে সাফাই না গেয়ে নীরব থেকে হেকমত অবলম্বন করেছিলেন। কেননা, সে সময়ে তিনি মা আয়েশার পক্ষ নিলে অনেকেই, বিশেষ করে, দুর্বল চিত্তের মুসলিম ও মুনাফিকরা বলে বেড়াতো: “তিনিতো নিজের স্ত্রীর পক্ষ নেবেনই। তাঁকেতো তিনি খুবই ভালোবাসেন। আর ভালোবাসার পাত্র/পাত্রীকে সবাই ধোয়া তুলসী পাতাই মনে করে বৈকি।” সুতরাং সব জেনেও, রাহমাতুল্লিল আলামীন (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) এ মামলায় চুপ থেকে ওহীর (সূরা নূর: ১১-২০) জন্যে অপেক্ষা করছিলেন এবং তিনি চাচ্ছিলেন যে, আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা নিজেই যেন আয়েশার চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ঘোষণা করে এমনি এক অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত যারাই কুরআন মজীদ তিলাওয়াৎ করবেন – প্রত্যেকেই আয়েশার চরিত্রের নির্মলতা অধ্যয়ন করবেন। তদুপরি, আয়েশা সিদ্দীকার মর্যাদাও আগে থেকে অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সর্বোপরি, কুরআন মজীদ নিজেই কেয়ামত পর্যন্ত আয়েশার সিদ্দীকার চারিত্রিক পবিত্রতার জলজ্যান্ত সাক্ষ্য বহন করবে!” আল্লাহুতা’লার শুকরিয়া! বাস্তবে হয়েছিলোও তাই। আর তা হবে নাইবা কেন? আল্লাহুতা’লা যে তাঁর হাবীবের কাছে ওয়াদা করেছেন যে, তাঁর অতীত থেকে ভবিষ্যৎ সমুজ্জ্বল এবং তিনি তাঁকে সন্তুষ্ট করবেনই (সূরা দোহা: ৪-৫)।

আল্লাহ তাহালা হচ্ছেন দুনিয়া ও আখিরাতের সবচেয়ে বড় গায়েব কিন্তু রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই মহান প্রভু আল্লাহকে দেখেছেন  ও আর ফেরেশতাকে তো দেখছেনই।  শুনে গায়েব জানার চেয়ে দেখে গায়েব জানা অনেক বড় কথা :-

শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয়, তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয় এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। কোরআন তো ওহি, যা তার (মুহম্মদ) প্রতি প্রত্যাদেশ হয় তা শিক্ষা দান করে শক্তিশালী (জিব্রাইল)। সহজাত জিব্রাইল, সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল উর্দ্ধ দিগন্তে। অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল। অথবা তা অপেক্ষাও নিকটতর হল। তখন আল্লাহ তার দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা প্রত্যাদেশ করলেন, যা সে দেখেছে, তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি। সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে বিতর্ক করবে? নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল প্রান্তবর্তী সিদরা বৃক্ষের কাছে, যার নিকটবর্তীতে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন বৃক্ষটি, যার দ্বারা শোভিত হবার, তার দ্বারা মন্ডিত ছিল। তার দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যূতও হয়নি সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শণাবলী দেখেছিল।’(৫৩:১-১৮)
এখানে বা এই সমস্ত আয়াতে বুঝতে হবে যে উক্ত স্থানে শুধু আল্লাহর গায়েবের কথাই শুধু বলা হয়েছে :- তোমাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দাও, এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও জমীনের জন্যে সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে, অজান্তেই এসে যাবে। তোমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন তুমি তার অনুসন্ধানে লেগে আছ। বলে দাও, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না।-(৭:১৮৭)

তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাক-বিতন্ডাকালে। তখন তারা ওসিয়্যত করতেও সক্ষম হবে না এবং তাদের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরেও যেতে পারবে না।-(৩৬:৪৯-৫০) বরং তা আসবে তাদের উপর অতর্কিতভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।-(২১:৪০)

ইসা (আ)কে মানুষের ঘরে কোন খাবার আছে সেই গায়েব জানানো হয়েছিল আর আল্লাহর রাসুল সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত অসংখ ইলমে গায়েব প্রকাশ করে গেছেন সুবাহানাল্লহ -:-

হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশতবাসীরা বেহেশতে এবং দোযখবাসীরা দোযকে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বলে দিলেন । আমাদের মধ্যে যারা মূখস্থ রাখতে পেরেছে তারা মুখস্থ রেখেছে; আর যারা ভূলে যাবার তারা ভূলে গেছে ।


Reference :- [সহীহ বুখারী শরীফঃ কিতাবু বাদয়িল খালক্ব, হাদীস নং- ৩০২০]

রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহ গায়েবের জ্ঞান দান করেছেন এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই । এটা আহলে সুন্নাত অল-জামাতের আকিদা ।

প্রবন্ধের পরিবর্তন না ঘটিয়ে , বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে সাওয়াবে দারাইন হাসিল করুন ।

Spread the love

Leave a Comment