নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সঠিক নিয়ম

আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হল-’নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সঠিক নিয়ম” নারী ও পুরুষ সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা সকলের জানা দরকার ।

নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সঠিক নিয়ম

কিছু জিনিস আছে যা খুব কম আলোচনা করা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়কেই নিজের চাহিদা মতো জেনে নিতে হয় । এ বিষয়ে লজ্জা না করে সঠিকটা জানাই আমাদের সকলের দায়িত্ব ।

নারী ও পুরুষ অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করার ব্যাপারে কিছু ভুল করে থাকে,কেউ তাদের ভুল ধরিয়ে দেয় না বা তারা কাওকছ জিজ্ঞেসও করেনা । তাই লেখনির মাধ্যমে সেগুলো তুলে ধরব এবং তার সাথে সঠিক পদ্ধতিও তুলে ধরব ,যাতে করে সকলেই সহজে জেনে নিতে পারে ।

(১) ৪০ দিন এর মধ্যে না কাটা

অবাঞ্ছিত লোম,বিনা ওজরে (কোন কারন ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে) চল্লিশ দিন পর কাটা মাকরূহ তাহরীমি বা গোনাহর কাজ। এ মর্মে সাহাবী আনাস (রাঃ) বলেন,

وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْماً

অর্থাৎ, গোঁফ ছোট রাখা , নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন, আমরা তা করতে চল্লিশ দিনের অধিক দেরী না করি। (মুসলিম ২৫৮)

এ হাদীসের মধ্যে কয়েকটি জিনিস স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে,

  • (ক) গোঁফ ছোট করা
  • (খ) নখ কাটা
  • (গ) বগলের লোম তুলে ফেলা
  • (ঘ) নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা

এগুলি কোন কারণ ছাড়া ৪০ দিনের বেশি রাখা গুনাহের কাজ । অনেকেই এসব সম্পর্কে খবর রাখে না তাই তারা গুনাগার হয় । তাই প্রত্যেক কে এই কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে । তবে কেউ যদি প্রত্যেক সপ্তাই পরিষ্কার করে তাহলে সেটা আরো বেশি ভালো ।

(২) সম্পূর্ণ পরিষ্কার না করা

শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করার সময় কাঁচি দ্বারা হালকা করে কেটে বাকি কিছু অংশ রাখা যাবে না । সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে বা চেছে ফেলতে হবে যাতে অবশিষ্ট না থাকে । পুরুষের জন্য চেঁছে ফেলা এবং মহিলাদের জন্য উপড়িয়ে ফেলা মুস্তাহাব। (কিতাবুল ফিকহ আ’লাল মাযাহিবিল আরবাআ’ ২/৪৫)

ব্লেড, ক্ষুর, কাঁচি, হেয়ার রিমুভার দ্বারা গোপনাঙ্গের লোম পরিস্কার করা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য জায়েয। কেউ যদি কাঁচি দ্বারা ছোট করে রাখে, তাহলে একদম পুরোপুরি কেটে ছোট করতে হবে যাতে নখ দিয়ে ধরা না যায় তাহলে জায়েয হবে, তবে চেঁচে ফেলার বেশি উত্তম হবে। নারীরা ব্লেড, কাঁচি ব্যবহার করবে না তারা ভালো ব্রান্ডের হেয়ার রিমুভার অথবা অন্য কোন উপায় উপড়ে ফেলতে পারে ।

(৩) নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা চিনতে ভুল করা

নাভির নিচে কোন জায়গা থেকে অবাঞ্ছিত লোম হিসাবে ধরা হয় এটা অনেকেই জানেনা ।
পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় সেখান থেকেই অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা শুরু। ঐ ভাঁজ থেকে দুই উরু পর্যন্ত ডান বামের লোম, গোপনাঙ্গের চার পাশের লোম, এভাবে একদম নিচে পর্যন্ত মলদ্বারের আশ-পাশের লোম অবাঞ্ছিত লোমের অন্তর্ভুক্ত। (আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়্যা ৩/২১৬-২১৭, মরদূকে লেবাস আউর বালূঁকে শরয়ী আহকাম ৮১)

নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সঠিক নিয়ম

মনে রাখবেন নাভির নিচের লোম প্রতি সপ্তাহে ১ বার সাফ করা সুন্নত। ১ সপ্তাহে না পারলে অন্ত ১৫ দিনে সাফ করা উচিত । ১৫ দিন পর যত দিন বেশী হবে তত কারাহাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে ।

আর যদি ৪০ দিনের ভিতর না কাটেন আর না কাটা অবস্থায় যদি ৪০ দিন পার হয়ে যায় তাহলে গুনাহগার হবেন। আর এ অবস্থায় আপনার নামাজ, হজ্ব এসব মকরূহ হবে।

পুরুষরা নাভির নিচের কোমরের ভাজ এর নিচ থেকে অর্থাৎ গোপনাঙ্গের চার আঙ্গুল উপর থেকে পরিস্কার করতে হবে এবং গোপনাঙ্গের আশেপাশে ও অন্ডকোষ সহ পায়ুপথে লোম থাকলেও তা পরিস্কার করবেন। নারীদের ও গোপনাঙ্গের লোম পরিস্কার করবে ও তার আশেপাশে লোম থাকলেও পরিস্কার করবে রেজার বা ক্রিম দিয়ে । ব্লেড ব্যবহার করবে না।

শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করার সময় কাঁচি দ্বারা হালকা করে কেটে বাকি কিছু অংশ রাখা যাবে না । সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে বা চেছে ফেলতে হবে যাতে অবশিষ্ট না থাকে । পুরুষের জন্য চেঁছে ফেলা এবং মহিলাদের জন্য উপড়িয়ে ফেলা মুস্তাহাব। (কিতাবুল ফিকহ আ’লাল মাযাহিবিল আরবাআ’ ২/৪৫)

আপনার সুবিধা মত আপনি পরিস্কার করবেন । সেনসেটিড যায়গা গুলোর লোম কাটার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন ।

FAQ

Q: নাভীর নিচের লোম কাটলে কি গোসল করতে হয়?

An: এগুলো নাপাক কোনো বস্তু নয় তবে ৪০দিনের বেশি রাখা নিষেধ। সুতরাং নাভীর নিচের লোমগুলো কাটার পর গোসল করা জরুরি নয়।

Q: ৪০ দিনের মধ্যে শরীরের লোম পরিষ্কার না করলে কি ইবাদত কবুল হবে না?

An: কেউ যদি অবহেলাবশত ইচ্ছাকৃতভাবে এই মেয়াদ অতিক্রম করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে। ৪০ দিনের বেশি হলে গুনাহগার হবে, এই মর্মে একদল ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু ইবাদতই কবুল হবে না এমন কোন দলি পাওয়া যায় না। তবে ইবাদত মাকরূহ হবে । আর যদি ৪০ দিনের মধ্য শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করার হাদিস অশিকার করে তাহলে তার ইবাদত তো দূরের কথা ইমান হারিয়ে যাবে । আমাদের উচিৎ সুন্নত মুতাবিক কাজ করা । অযাথা প্রশ্ন করে সুন্নাতের অবহেলা করা চরম বেয়াদবী ।

Q: নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমারেখা কতটা?

An: নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো- পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় সেখান থেকে শুরু করে দুই উরু পর্যন্ত ডান বামের লোম, গোপনাঙ্গের চার পাশের লোম, অণ্ডকোষ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত উদগত লোম এবং প্রয়োজনে মলদ্বারের আশ-পাশের লোম অবাঞ্ছিত লোমের অন্তর্ভুক্ত।

তথ্য সংগ্রহ- আব্দুল আজিজ কাদরী

এবার এটা পড়ুন- ফরজ গোসল করার সঠিক পদ্ধতি জানুন

Spread the love

2 thoughts on “নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সঠিক নিয়ম”

  1. গাছের আঠা দিয়ে কি নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা যাবে

    Reply

Leave a Comment