নামধারী আহলে হাদীসরা কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ নিয়েও ষড়যন্ত্র করল

নামধারী আহলে হাদীসরা কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ নিয়েও ষড়যন্ত্র করল

সাম্প্রতিক কালে নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা কালিমায়ে তাইয়্যিবা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। এমনকি তাদের কয়েকটি বইয়ে কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ সম্পর্কে জনগণকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুল ধারণা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

তন্মধ্যে একটি বইয়ের নাম “ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমাহ তাইয়্যিবাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, লেখক আব্দুল্লাহ আল-ফারুক বিন আব্দুর রহমান, ৩/১ বংশাল লেন, ঢাকা। পকাশক : নওফেল বিন হাবীব, পাঁচবাড়িয়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ। মুদ্রণ ও বাঁধাই : আল মদীনা প্রিন্টার্স, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা।

২৩০ পৃষ্ঠার এ বইটিতে লেখক প্রতি পৃষ্ঠায়-পৃষ্ঠায়, লাইনে-লাইনে এই কালিমা কোন হাদীসে নেই, এই কালিমা পড়া শিরক, যারা পড়বে ওরা মুশরিক ইত্যাদি ইত্যাদি ভ্রান্ত মতবাদে ভরপুর করেছে। নাউযুবিল্লাহ । সম্পূর্ণরূরে এরা ইয়াহুদিদের জালে ফেঁসে গেছে,না হলে এত জঘন্য কথা বলতে পারত না । এমতাবস্থায় এই কালিমা সম্পর্কে হাদীসের অবস্থান আংশিক উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

হাদীসে কালিমায়ে তায়্যিবা

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এই কালিমাটি প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি নির্ভরযোগ্য হাদীসে আমার হস্তগত হয়েছে। এর মধ্যে আধা ডজন হাদীসকে হাদীস বিশারদ বিজ্ঞ ইমামগণ সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এ ছাড়া এক ডজনের মতো আছে হাসান বা উত্তম ও নির্ভরযোগ্য হাদীস। আরও অনেকগুলো রয়েছে জয়ীফ হওয়া সত্ত্বেও আমল করার যোগ্য। সব মিলে এর গ্রহণযোগ্যতা আরো অনেক অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। বেড়ে যায় দলিল হিসেবে এর স্বচ্ছতা। নীচে কয়েকটি হাদীস শুধু উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হল :

১. হাদিসঃ-

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত লম্বা একটি হাদীসে রাসূল (সা.) তখনকার কাফের ও সত্যিকারের মুসলমানদের অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে নীচে বর্ণিত আয়াতের আলোকে বলেন :

إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَى وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا وهى لا اله إلا الله محمد رسول الله”

কাফেররা মুসলমানদের সাথে সেই অজ্ঞ যুগের বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা (মুসলমানদের একত্মবাদের ফলে) রাসূল (সা.) ও মুমিনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি অবতরণ করেন। আর তাদের জন্য তাকওয়ার কালিমা আবশ্যক করে দেন। যার সত্যিকার ধারক তারাই। এই তাকওয়ার কালিমাটি হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (বায়হাকী পৃ. ১৩১, কিতাবুল আসমা ওয়াস সিফাত)

এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, হাদীসটি সহীহ।

উল্লেখ্য, এই হাদীসটি মূলত কুরআনে কারীমের সূরায়ে ফাতহ-এর ২৬ নম্বর আয়াতে উল্লিখিত كلمة التقوى (কালিমায়ে তাক্বওয়া)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত অসংখ্য হাদীসের একটি মাত্র। এ ছাড়া তাফসীরের প্রায় সব কিতাবে কালিমায়ে তাক্বওয়ার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, তা হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। প্রায় ৫০টিরও বেশি তাফসীর গ্রন্থ আমরা যাচাই করেছি। বিশেষ কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১৬৫, রূহুল মা’আনী ১৩/২৯২, কুরতুবী ১৬/১৯০, তাবারী ১১/৩৬৫, বাগাবী ৫/১১৬)

২. হাদিসঃ-

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, কুরআনে কারীমের সূরায়ে কাহাফের ৮২ নম্বর আয়াত “এর নিচে ছিল তাদের গুপ্ত ধন” গুপ্ত ধন বলতে একটি স্বর্ণের বোর্ড, এতে কয়েকটি বিষয় লেখা ছিল। সবশেষে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (তাবরানী, কিতাবুদ দু’আ, হাদীস নং ১৬২৯, বায়হাকী, যুহদ, হাদীস নং ৫৪৪, সুয়ূতী, আদদুররুল মনসূর ৯/৬০০)

এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী পরিপূর্ণ নির্ভরযোগ্য বা ثقة শুধু বুশাইর নামক একজন যাকে صدوق বা গ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে। তাই হাদীসটি হাসান বা অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে সহীহ।

৩. “হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, মেরাজকালে আমি জান্নাতে প্রবেশের সময় এর দু’পাশে দেখি তিনটি লাইনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা :

ক. লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

খ. আমরা যে ভালো কর্ম পেশ করেছি, তা পেয়েছি। যা খেয়েছি তা থেকে উপকৃত হয়েছি। যা ছেড়ে এসেছি, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

ঘ. উম্মত হলো গোনাহগার, আর রব হলো ক্ষমাশীল।

(জামেউস সগীর সুয়ূতী ১/৮৭১, হাদীস নং ৪১৮৬, ইমাম সুয়ূতী লেখেন, হাদীসটি সহীহ)

৩. হাদিসঃ-

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, কুরআনে কারীমের সূরায়ে কাহাফের ৮২ নম্বর আয়াত “এর নিচে ছিল তাদের গুপ্ত ধন” গুপ্ত ধন বলতে একটি স্বর্ণের বোর্ড, এতে কয়েকটি বিষয় লেখা ছিল। সবশেষে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (তাবরানী, কিতাবুদ দু’আ, হাদীস নং ১৬২৯, বায়হাকী, যুহদ, হাদীস নং ৫৪৪, সুয়ূতী, আদদুররুল মনসূর ৯/৬০০)

এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী পরিপূর্ণ নির্ভরযোগ্য বা ثقة শুধু বুশাইর নামক একজন যাকে صدوق বা গ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে। তাই হাদীসটি হাসান বা অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে সহীহ।

৪. হাদিসঃ-

বুরাইদা (রা.) বলেন, আবুজর ও নুআইম তারা দুজন রাসূল (সা.)-এর খুঁজে বের হন। আমি তাঁদের সাথে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন এক পাহাড়ের আড়ালে ছিলেন। তখন আবুজর তাঁকে বলেন, হে মুহাম্মদ আপনি কি বলেন আমরা শুনতে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি বলি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আল ইসাবা ইবনে হাজর ৬/৩৬৫, হাদীস নং ৮৮০৯, যিয়াদাতুল মাগাযী ইউনুস ইবনে বুকাইর)

এই হাদীসের সনদ সহীহ, সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

৫. হাদিসঃ-

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঝান্ডাটি ছিল কালো এবং পতাকাটি ছিল সাদা রঙের। এই পতাকায় লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আল মু’জামুল আওসাত তাবরানী ১/১২৫, হাদীস নং ২২১, শামায়েলে ইমাম বাগাবী, হাদীস নং ৮৯৪) এই হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য। একজন বর্ণনাকারী “হাইয়্যান” কেউ কেউ অপরিচিত বলে আপত্তি করার সুযোগ খুঁজেছেন। কিন্তু এতে এমন কোনো সুযোগ নেই। তার সম্পর্কে হাদীস বিশারদ ইমাম আবু হাতেম (রহ.) বলেন صدوق নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া ইমাম বাযযার (রহ.) তাকে সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস বলে অবিহিত করেন। ( অ াল জা রহ ওয়াত্তা’দিল ৩/২৪৬)

কএকটি হাদিস উদাহারণসরূপ তুলে ধরা হলো । আশা করি বিষয়টি পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন ।

এবার পড়ুন

Spread the love

Leave a Comment