পোষাকের পরিধানের সুন্নাত ও আদাব সমূহ

পোষাকের পরিধানের সুন্নাত ও আদাব সমূহ

আল্লাহর দরবারে লক্ষ কোটি কৃতজ্ঞতা যে, তিনি আমাদেরকে কাপড় পরিধানের যোগ্যতা দান করেছেন, পক্ষান্তরে অন্যান্য জীব জন্তুর নিকট কাপড় পরিধানের যোগ্যতা নেই। পোষাক পরিচ্ছদ দ্বারা আমরা লজ্জাস্থান ঢাকতে পারি, ঠান্ডা ও গরম থেকে বাঁচতে পারি। আর কাপড় চোপড় আমাদের মান মর্যাদা সৌন্দর্য কে বহুগুনে বাড়িয়ে তোলে। তবে নানা সম্প্রদায়ের নানা ধরণের পোষাক হয়ে থাকে কিন্তু সর্বাপেক্ষা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত, সম্মানিত ও স্বতন্ত্র হচ্ছে মুসলমানের পোষাক। নিম্নে পোষাকের ব্যাপারে কতিপয় সুন্নাত ও আদাব পেশ করা হলোঃ

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী করীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ যখন জামা কাপড় পরিধান করতেন তখন ডান দিক থেকে আরম্ভ করতেন।” (সুনানে আবি দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪১৪১, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্ঠা-৯৬)

۞ সাদা রংয়ের পোষাক সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। এ রংয়ের পোষাক ছিল নবী করীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর অত্যন্ত পছন্দনীয় ও প্রিয়তর। হযরত সায়্যিদুনা সুমরা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন: নবীয়ে পাক, সাহেবে লাওলাক, হুযুর পুর নূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেন, “তোমরা সাদা পোষাক পরিধান করো, কেননা তা অত্যন্ত পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন এবং তা দ্বারা তোমরা মৃতদের কাফন পরিধান করাবে।” (সুনানে তিরমিযী শরীফ, হাদিস নং-২৮১৯, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্ঠা-৩৭০)

۞ কাপড় পরিধান কালে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করুন, তাতে পূর্বাপর গুনাহ্ গুলো মাফ হয়ে যায়ঃ

– ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻛَﺴَﺎﻧِﻰْ ﻫٰﺬَﺍ ﻭَﺭَﺯَﻗَﻨِﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﺣَﻮْﻝٍ ﻣِّﻨِّﻰْ ﻭَﻟَﺎ ﻗُﻮَّﺓ

অর্থাৎঃ সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার জন্যে, যিনি আমাকে এ কাপড়টি পরিধান করিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতিরেকে তা তিনি আমাকে দান করেছেন।(আল মুস্তাদরাক, হাদিস নং-৭৪৮৬, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-২৭০)

۞ কাপড় চোপড় পরিধান কালে ডান দিক থেকে আরম্ভ করা। উদাহরণ স্বরূপ জামা বা পাঞ্জাবী গেঞ্জী ইত্যাদি পরিধান কালীন প্রথমে ডান হাত প্রবেশ করিয়ে পরে বাম হাত প্রবেশ করানো অনুরূপভাবে পায়জামা বা লুঙ্গি পরিধান কালেও। জামা, কাপড়, লুঙ্গি ইত্যাদি খোলার সময় বিপরীত তথা প্রথমে বাম হাত ও পা থেকে পরে ডান হাত ও পা দিয়ে খুলতে হবে।

۞ প্রথমে পাঞ্জাবী তারপর পায়জামা পরিধান করবে।

۞ পাগড়ী পরিধানে অভ্যস্থ হওয়া। হযরত সায়্যিদুনা ওবাদাহ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী করিম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেন: ‘তোমরা পাগড়ী পরিধান করো কেননা এটা নূরানী ফেরেশতাদের নিদর্শন এবং পাগড়ী শিমলাহ্ (পেছনের ঝুলন্ত অংশটি) পিঠের পেছনে ঝুলিয়ে দাও।’(কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-৪১১৪৩, খন্ড ৮ম, পৃষ্ঠা-১৩৩)

পাগড়ী পড়ে দু’রাকাত নামায আদায় করা পাগড়ী বিহীন সত্তর রাকাত নামাজ আদায়ের চেয়েও অধিক ফজিলতপূর্ণ। (কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-৪১১৩০, খন্ড-১৫তম, পৃষ্ঠা-৩৩)

۞ বালক বালিকাদের কাপড় চোপড়ে পার্থক্য রাখতে হবে, বালাকদেরকে পুরুষের বালিকাদেরকে মহিলাদের পোষাক পরিধান করাতে হবে। আর যখন তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাবে তখন তাদের লজ্জা ঢাকা যায় এমন পোষাক পরাতে হবে।

হযরতে সায়্যিদাতুনা আয়েশা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একদা হযরত সায়্যিদাতুনা আসমা বিনতে আবি বকর ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ পাতলা কাপড় পরিধান করে নবী করীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সামনে আগমন করলে নবী করীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বললেন: হে আসমা! বালিকা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় তখন তার দেহের হাতগুলোর কবজি ও মুখমন্ডল ব্যতিত অন্য কোন অঙ্গ যাতে দেখা না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।”(সুনানে আবি দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪১৪০, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্ঠা-৮৫)

۞ হযরত সায়্যিদুনা আলকামা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হযরতে হাফসা বিনতে আবদুর রহমান ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ একটি পাতলা ওড়না হযরতে সায়্যিদাতুনা আয়েশা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ এর খেদমতে পরিধান করে আগমন করলে হযরত আয়েশা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ তা ফেলে দিয়ে একটি মোটা উরনা পরিধান করিয়ে দিলেন। (মোয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস নং-১৭৩৯, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৪১০)

মাসআলাঃ মহিলাদের যে সকল কাপড় পরিধান করলে তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখা যায় এ ধরণের কাপড় পরিধান করা যেমন হারাম তেমনিভাবে পুরুষদের বেলায় ও লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয় এরকম কাপড় পরিধান করা হারাম। ছোট্ট বালিকা ও বালকদেরকে শিশুকাল থেকে সতর ঢেকে রাখা, ওড়না বোরকা ইত্যাদি মোটা কাপড় পরিধানের অভ্যাস গড়ে তোলা মা বাবা অভিভাবক সহ সকলেরই কর্তব্য। তাহলে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার উপর উদ্দ্যোগী হয়ে উঠবে।

হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তোমার প্রিয়হাবীব হুযুরে পূরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সুন্নাত অনুযায়ী কাপড় পরিধানের তৌফিক দিন। আমীন।

Spread the love

Leave a Comment