মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব

মিলাদুন্নবী (ﷺ) বিরুধীদের ১৫টি প্রশ্নের জবাব নিচে দেওয়া হলো :

👉প্রশ্নঃ ১। রাসুল (ﷺ) জীবদ্দশায় প্রথম কত হিজরীতে তাঁর জন্ম দিবস উদযাপন করেছেন?

উত্তরঃ– রাসূল ﷺ প্রত্যেক হিজরীতে জন্মদিবস পালন করেছেন। শুধু প্রত্যেক হিজরীতে নয় বরং প্রত্যেক হিজরীর প্রত্যেকটি সপ্তাহে পালন করেছেন। উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক সপ্তাহ একটি বছর বা হিজরীর ভিতরেই হয়। তাই প্রত্যেক হিজরীর সকল সোমবারে পালন করছেন।

মুসলিম শরীফে এই সম্পর্কে ৫ টি হাদিস রয়েছে। নিচে প্রমাণস্বরূপ একটি হাদিস দেওয়া হলোঃ-


وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ غَيْلاَنَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ، رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ ‏ “‏ فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ ‏”‏ ‏.

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে সোমবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ঐদিন আমার মিলাদ (জন্ম) হয়েছে এবং ঐদিন আমার উপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে। [ সহিহ মুসলিম, (كتاب الصيام) হাদিস নং ২৭৫০]
এর পরে যারা বলবে নবীজি ﷺ পালন করেনি তারা নিঃসন্দেহে কাজ্জাব ও মুনাফিক।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَرَّرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ قَالَ:«عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نَفْسِهِ بَعْدَ مَا بُعِثَ بِالنُّبُوَّةِ
হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
নবী (সাঃ) নবুওয়াত পাওয়ার পর নিজের আকীকা নিজে করেছেন”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জার, হাদিস নাম্বার- ৭৯৬০, ৪র্থ খণ্ড, ৩২৯ পৃষ্টা, মাকতাবাতে শামেলা। এবং ইমাম বায়হাকী তার সুনানু কুবরার মধ্যে এরকম একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এবং ইমাম তাবরানী রহঃ উনার কিতাবে বর্ণনা করেছেন।)

আকীকা হলোঃ– আকিকা শব্দটি عَقَّ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে কাটা বা পৃথক করা।
আকিকার সংজ্ঞা হলোঃ- সন্তান জন্ম লাভের কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া আদায়ার্থে যে পশু যবাই করা হয় তাকে আকিকা বলে। (বাহারে শরীয়ত, ৩য় খণ্ড, ৩৫৫ পৃষ্টা।)

👉প্রশ্নঃ ২। তাঁর মৃত্যুর বছর তাঁর সর্বশেষ মিলাদুন্নাবী উৎযাপন কোন শহরে উদযাপিত হয়েছিলো? তাতে কতজন সাহাবী উপস্থিত ছিলো?

উত্তর:- এটা একটা ভ্রান্ত প্রশ্ন। আর এ রকম প্রশ্ন কারী মুসলমান হতে পারে না। কারণ কেউ যদি বলে নবীজী ﷺ সর্বশেষ কখন জুরে আমিন বলেছে কিংবা রফউল ইয়াদাইন করছে তা কতজন সাহাবী দেখেছে বলেন? এই প্রশ্নটা যেমন ভিত্তিহীন তদ্রুপ ওপরের প্রশ্নটাও তেমন ভিত্তিহীন।
তাছাড়া ১নং প্রশ্নের উত্তরের হাদিসটি প্রমাণ করতেছে যে, নবীজি ﷺ প্রত্যেকটি সপ্তাহেই পালন করেছেন। এতে সকল বছর বিদ্যমান। এই ক্ষেত্রে ত আমিও প্রশ্ন করতে পারি যে, পিস টিভিতে নবীজী ﷺ কত টাকা যাকাত দিছে বলুন? অথচ আপনারা পিস টিভিতে যাকাত দেওয়ার কোনো বিরুধীতা করেন না। তাহলে কি ধরে নিবো আপনি মুনাফিক?

তাছাড়া রাসূল (ﷺ) এঁর ওফাত শরীফও আমাদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। এতে শোক দিবস পালনের কোনো সুযোগ নাই। হাদিস শরীফে এসেছে–
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حَيَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُحَدِّثُونَ وَنُحَدِّثُ لَكُمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنَ خَيْرٍ حَمِدْتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنَ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكُمْ»
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘‘আঁমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম। কেননা আঁমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরা ও আঁমার সাথে কথা বলতে পারছ।এমনকি আঁমার ওফাত ও তোমাদের জন্য উত্তম নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আঁমার নিকট পেশ করা হয় এবং আঁমি তা দেখি।যদি তোমাদের কোন ভাল আমল দেখি তাহলে আঁমি তোমাদের ভাল আমল দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করি,আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য গুনাহ মাফের জন্য (তোমাদের পক্ষ হয়ে) ক্ষমা প্রার্থনা করি।’’

উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হাযার হাইসামী (রঃ) বলেন:

ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒَﺰَّﺍﺭُ، ﻭَﺭِﺟَﺎﻟُﻪُ ﺭِﺟَﺎﻝُ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ –

-‘‘ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছে। আর উক্ত হাদীসের সমস্ত রাবী সহিহ এর ন্যায়।’’ তাই হাদিসটি সহিহ।
[সূত্রঃ-*১.বাজ্জার,আল-মুসনাদ,৫/৩০৮পৃ.হাদিস,১৯২৫
*২.সুয়ূতি,জামিউস সগীর,১/২৮২পৃ.হাদিস,৩৭৭০-৭১
*৩.আল্লামা ইবনে কাছির ,বেদায়া ওয়ান নিহায়া,৪/২৫৭পৃ.
*৪. আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী,কানযুল উম্মাল,১১/৪০৭পৃ. হাদিস,৩১৯০৩
*৫.ইমাম ইবনে জওজী,আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা,২/৮০৯-৮১০পৃ.
*৬. আল্লামা ইবনে কাছির,সিরাতে নববিয়্যাহ,৪/৪৫পৃ.]

ইমাম ইবনুল হাজ্জ ও ইমাম কুসতালানী (রহঃ) বলেন:

وَقَدْ قَالَ عُلَمَاءُ نَالَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِه وَحَيو تِه عَلَيْهِ السَّلَامُ فِىْ مُشَاهِدَ تِه لِاُمَّتِهِ وَمَعرِ فَتِه بِاَحْوَ الِهِمْ وَنِيَّا تِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِ هِمْ وَذلِكَ جَلِىٌّ عِنْدَهُ لَاخَفَاءَبِه

আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে,হুযুর আলাইহিস সালামের জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।তিঁনি নিঁজ উম্মতকে দেখেন,তাদের অবস্থা,নিয়ত,ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট। কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে।
[ ইমাম ইবনুল হাজ্জ مدخل গ্রন্থে,
ইমাম কুসতালানী (রঃ) مواهب (মাওয়াহিব) গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদে زيارة قبره شريف শীর্ষক বর্ণনা।]

👉প্রশ্নঃ ৩। রসুল (ﷺ) এর মৃত্যুর পর মা আয়েশা (রা) সহ তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণ কিভাবে
মিলাদুন্নাবী তথা তাঁর জন্মদিবস উদযাপন করতেন?

উত্তরঃ– যে এই প্রশ্নটা করছে সে নিশ্চয় জাহেল নতুবা জারজ সন্তান। কারণ এই সম্পর্কে ত সরাসরি হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে হাদিস-ই বর্ণিত আছে।

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ صَالِحٍ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ أَبِي الْأَسْوَدِ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا،قَالَتْ: «تَذَاكَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِيلَادَهُمَا عِنْدِي، فَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْبَرَ مِنْ أَبِي بَكْرٍ، فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ، وَتُوُفِّيَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ لِسَنَتَيْنِ وَنِصْفِ الَّتِي عَاشَ بَعْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

হযরত আয়েশা (রাঃ) বণর্না করেছেন যে, রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট নিজ নিজ মিলাদ শরীফের বণর্না করেছেন (ইমাম বায়হাকী এই বণর্না কে হাসান বলেছেন)।
[ ইমাম তাবরানী (রহঃ) আল মুযামুল কাবীর ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ, মযমাঊল যাওয়াঈদ ৯ম খন্ড ৬৩ পৃঃ]

👉প্রশ্নঃ ৪। রসুল (ﷺ) এর জন্মদিন উপলক্ষে ৪ জন প্রসিদ্ধ সাহাবীসহ অন্যান্য সাহাবীগণ কি ধরনের উৎসব পালন করতেন?

উত্তরঃ– আল্লামা শাহাবুদ্দীন ইবনে হাজর হায়তামী (রহঃ) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও অর্থাৎ প্রসিদ্ধ ৪জন সাহাবীদের যুগেও মিলাদুন্নবী ﷺ পালন করার নীতি প্রচলন ছিল। যেমন-

(১)
قَالَ اَبُوْ َبكَرِ الْصِدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِى فَىْ الْجَنَّةِ-
অর্থাৎ- হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ ﷺ পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করবে, সে ব্যক্তি বেহেশ্তে আমার সাথী হবে”।

(২)
قََالَ عُمَرَابْنِ الْخِطَّابٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْىِ اَلْاِسْلِامَ
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ ﷺ কে তাজীম ও সম্মান করলো, সে যেন ইসলামকেই জীবিত রাখলো”।

(৩)
قال عثمان رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرِ وَحُنَيْنٍ-

হযরত ওসমান (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী ﷺ পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করলো, সে যেন বদর ও হোনাইনের যুদ্ধে শরীক হলো”।

(৪)
قال علي رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبِبًا لِقِرْاَتِهِ لَايَخْرُجُ مِنْ الدُّيْنَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةِ بِغَيْرِ حِسَابِ –
হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী ﷺ কে সম্মান করবে এবং মিলাদুন্নবী ﷺ পাঠ করার উদ্যোক্তা হবে, সে দুনিয়া থেকে (তওবার মাধ্যমে) ঈমানের সাথে বিদায় হবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
[সূত্রঃ আন নে’মাতুল কোবরা আলাল ফি মাওলিদি সাইয়্যেদ ওলদে আদম ৭-৮ পৃষ্ঠা।
‘খোলফায়ে রাশেদীনের অভিমত ও আমল আমাদের জন্য একটি শক্ত দলীল।
এবং জাওয়াহেরুল বিহারঃ- ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠায়ঃ- ৩৫০, প্যালেষ্টাইনের আল্লামা ইউসুফ নাবাহানী (রহঃ)}
{মন্তব্যঃ- “জাওয়াহেরুল বিহার” গ্রন্থকার প্যালেষ্টাইনের আল্লামা ইউসুফ নাবাহানী (রহঃ) তাঁর কিতাবের ৩য় খন্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বর্ণনা উপস্থাপন করে বলেছেন যে, আমার উপরোক্তা হাদীস সমূহের সনদ জানা রয়েছে কিন্তু কিতাব বড় হয়ে যাবার আশংকায় আমি সেগুলো অত্র কিতাবে উল্লেখ করিনি ।}

(৫) হাদীস বিশারদ আল্লামা আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে কলবী (র.) বিরচিত কিতাবুত তানভীর ফী মাওলিদিল বশীর ওয়াননযীর কিতাবে একটি হাদিস বর্ণিত আছে-
হযরত আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- আমি নবী করিম (ﷺ) -এর সাথে মদিনার আবু আনসারীর গৃহে গমন করে দেখি- তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজনকে নবী করিম (ﷺ) -এর জন্ম বৃত্তান্ত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং বলেছেন- আজই সেই দিন । তখন তাদেরকে দেখে নবী করিম (ﷺ) – এরশাদ করলেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমার উপর রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং আল্লাহ্‌র ফেরেস্তাগণও তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন ।
(সূত্রঃ- হাদীস বিশারদ আল্লামা আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে কলবী (র.) বিরচিত ‘কিতাবুত তানভীর ফী মাওলিদিল বশীর ওয়াননযীর’ কিতাবে। এবং আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়তী কর্তৃক বিরচিত সাবিলুল হুদা ফি মউলিদিল মুস্তফা কিতাবে। এবং আব্দুল হক এলাহাবাদীর, দোররে মুনাজ্জাম কিতাবে।)

(৬) হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) মিম্বারে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পাঠ করেছিলেন । দীর্ঘ কবিতার একাংশ অর্থ দেওয়া হলো ।
“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সর্ব দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্ম গ্রহন করেছেন। আপনারা এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছা আনুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে । আল্লাহ্‌ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন । এর প্রমাণঃ- যখন মুযাজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাজের জন্য “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আজান দেয় । আল্লাহ্‌ তায়ালা আপন নামের আংশ দিয়ে নবীজীর নাম রেখেছেন- তাঁকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে । এর প্রমান হচ্ছে- আরশের অধিপতির নাম হলো “মাহমুদ” এবং ইনির নাম হলো “মুহাম্মাদ” (ﷺ) । { সুত্রঃ- দিওয়ানে হাসসান }

👉প্রশ্নঃ ৫। তাঁর জন্মদিবস উৎযাপনের হাদীস সমূহ বর্ননা করেছেন যে সকল সাহাবীগণ তাদের সবার নাম লিখুন!

উত্তরঃ– জন্মদিবস উৎযাপনের হাদীস সমূহ বর্ননা করেছেন যে সকল সাহাবীগণ তাদের সবার নাম নিচে দেওয়া হলোঃ-
১। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:)
২। হযরত ওরম ফারুক (রা:)
৩। হযরত ওসমান (রা:)
৪। হযরত আলী (রা:)
৫। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)
৬। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:)
৭। হযরত আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)
৮। উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)
৯। হযরত ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রা:)
১০। হযরা আবী উমামাহ্ (রা:)
১১। হযরত মায়সারাহ্ ফাজরি (রা:)
১২। হযরত যুবাইর ইবনে মুতঈম (রা:)
১৩। হযরত হাসসান বিন সাবেত (রা:)

👉প্রশ্নঃ ৬। প্রসিদ্ধ কয়েকজন তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈ এর নাম লিখুন, যারা মিলাদুন্নবী উদযাপন করতে না পারলে ঘুমাতে পারতেন না।

উত্তর:– যেখানে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ নিজে এবং উনার সাহাবীরা মিলাদুন্নাবী ﷺ পালন করেছেন। সেখানে অন্য কারো আমল প্রমাণের প্রয়োজন নাই। তারপরও নিচে কয়েকজন তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণের নাম দিলাম। যারা মিলাদুন্নাবী সাঃ পালন করতেন–

১) বিশিষ্ট তাবিয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম (রা) গণের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন, ইমাম হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেন-
আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]

২) বিশিষ্ট তাবে-তাবেঈ, ইমাম শাফেয়ী (রা:) বলেন–
যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :

  • লোকজন একত্রিত করলো,
  • খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,
  • জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং
  • এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো
  • তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!
    [আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]

👉প্রশ্নঃ ৭। হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু হানিফা (রহ) সহ অন্য ৩ মাযহাবের ইমামগণ মোট কতবার ঈদে-মিলাদুন্নাবী উদযাপন করেছেন?

উত্তরঃ– যেখানে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ নিজে এবং উনার সাহাবীরা মিলাদুন্নাবী ﷺ পালন করেছেন। সেখানে অন্য কারো আমল প্রমাণের প্রয়োজন নাই।
তারপরও নিচে চার জনের একজন ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর বক্তব্য দিলাম।
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন–
যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :

  • লোকজন একত্রিত করলো,
  • খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,
  • জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং
  • এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো
  • তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!
    [আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]

তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো যারা এর বিরুধীতা করে, সেই লামাযহাবীদের বড় ইমাম প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম ইবনে জওযী (৫১০-৫৭৯হি.) বর্ণনা করেন, সর্বদা মক্কা মদীনায়, মিশর, ইয়েমেন, সিরিয়া, এমনকি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র আরববাসীরা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মাহফিল আয়োজন করে আসছেন, রবিউল আউয়াল শরীফের নবচন্দ্র উদিত হলে তারা খুশী, আনন্দে উদ্বেলিত হয় এবং বিশেষ গুরুত্বসহকারে মিলাদ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে থাকেন এতে তাঁরা অসংখ্য সওয়াব ও মহা সাফল্য অর্জন করে থাকেন। (আল্লামা ইমাম ইবনে জওযী ৫৭৯হি. কর্তৃক বিরচিত মীলাদুন্নবী)।

👉প্রশ্নঃ ৮। ১৪০০ বছর আগে রসুল (ﷺ) এর জন্মদিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে যে ধরনের খেজুর ও মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হতো সেগুলোর নাম কি?

উত্তরঃ– মানুষ কে খাবার খাওয়ানো এটা ইসলামে উত্তম কাজ। আর খাবারের মধ্যে মিষ্টান্ন দ্রব্য রাসূল ﷺ খুব পছন্দ করতেন।
হালার খাবার যে কোনো সময়, যে কোনো দিন মানুষকে খাওয়ানো যাবে। নিচে এই সম্পর্কে দুইটা হাদিস দিলাম–

হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সাঃ) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’(বুখারি, ৫১১৫; মুসলিম,২৬৯৫) বুখারী শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ঔষধ। ’ (৫৩৫৯)

ওমর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে।
– হাদিস নাম্বার:১১, অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান, গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
উল্লেখিত হাদিসে কোনো সময় কিংবা দিনের উল্লেখ নাই। যে কোনো দিন হোক সেটা নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট। সকল সময় মানুষকে খাবার খাওয়ানো জায়েজ। হোক সেটা মিলাদুন্নাবী সাঃ এর দিন অথবা হোক অন্যকোন দিন।

👉প্রশ্নঃ ৯। রসুল (ﷺ) এর জন্মদিবস উপলক্ষে তিনি আমাদের কি কি না’ত শিক্ষা দিয়েছেন?

উত্তর:– এই প্রশ্নকারী আসলেই একটা জাহেল। কারণ নবীজি ﷺ এর শান ( যাকে উর্দূতে বলা হয় না’ত আর আরবিতে বলা হয় জিকির। )

আর নবীজির জিকির সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন-
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ ( الشرح- ٤)

আমি আপনার আলোচনাকে অর্থাৎ শানও মানকে সমুচ্চ করেছি অর্থাৎ বাড়িয়েছি।
( সূরা আল-ইনশিরাহ(৯৪), আয়াত -৪)
আল্লাহ্ নিজে যাকে শান ও মান দিয়েছেন তার জন্য আর কোনো প্রমাণের দরকার নাই।

👉প্রশ্নঃ ১০। দরুদে ইব্রাহীম পড়লে ১০ বার আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা…’,‘সালাতুনিয়া রাসুল্লাহ…’, ‘মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম…’ প্রভৃতি মানুষের বানানো দরুদ পড়লে কতটুকু রহমত বর্ষিত হবে?

উত্তর:- দরূদে ইব্রাহীম বলতে হাদিসে কোনো দরূদ নাই। হ্যাঁ, তবে যেই দরূদ কে তারা দরূদে ইব্রাহীম বলে তা দরূদে ইব্রাহীম নয় বরং এটা তাশাহুদের দরূদ যা নবীজী ﷺ এর ওপর পড়া হয়। তাই এটা দরূদে ইব্রাহীম হবে না, এটা হবে দরূদে মোহাম্মাদ ﷺ। এটা নামাজের দরূদ।

আর আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই বলেন–

﴿إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴾ (الاحزاب: ٥٦)

“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর নবীর প্রতি সালাত-(দরুদ) পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” (সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত)
উক্ত আয়াতে দরূদ এবং সালামের কথা বলা হলেছে- আর এই গুলো হলো সালাম। যেমন, ইয়া নবী সালামু আলাইকা…’,‘সালাতুনিয়া রাসুল্লাহ…।আর উর্দূ ভাষায় হলোঃ- মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম। প্রশ্ন কারীকে বলি আগে এই গুলোর অর্থ জেনে নেন তাহলে সব বুঝে যাবেন।

👉প্রশ্নঃ ১১। রাসুল (ﷺ) এর জন্মস্থান মক্কা, ইন্তিকালের স্থান মদিনা। মক্কা মদিনায় কোন আওলাদে রসুল পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থানে এত আওলাদে রাসুল আসল কোথা হতে?

উত্তরঃ– নবীজি ﷺ নিজেই ইরশাদ করেন–
عن النبي صلى الله عليه وسلم ( كُلُّ سَبَبٍ وَنَسَبٍ مُنْقَطِعٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلاَّ سَبَبِي وَنَسَبِي )

নবীজি ﷺ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক কেয়ামতের আগে কেটে যাবে একমাত্র আমার রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক টিকে থাকবে (কেয়ামত পর্যন্ত)।” এই হাদিসটি সহিহ।

এই হাদিস খানা অসংখ্য সাহাবি বর্ননা করেছেন।
মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বলে হজরত আবু সায়ীদ খুদরী রা: থেকে ১৭/২২০, তাবরানী মুজামুল কাবিরে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রা: থেকে ৩/১২৯, মুস্তাদরাকুল হাকিমে ৩/১৪২, বায়হাকি তাঁর সুনানে ৭/১১৪ হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে, মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বলে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা: থেকে ৩১/২০৭।
এমনকি কট্টরপন্থী আহলে হাদিস বা সালাফি শায়খ আলবানী সাহেবও তার সিলসিলাতু আহাদিসে সাহিহা কিতাবে (হাদিস নং-২০৩৬) এই হাদিসখানাকে সহিহ বলেছেন।

হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা (রাঃ) এর বংশধরগনকেই {ইমাম হাসান (রা:) ও ইমাম হোসাইন (রা:) বংশকে} নিজের বংশ বলে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন, এ সংক্রান্ত এতো অসংখ্য বর্ননা আছে যা আসলে প্রমান করারও প্রয়োজন পড়ে না। এই বংশ থেকেই এমনকি ইমাম মাহদি আলাইহিস সালাম শেষ জমানাতে আবির্ভূত হবেন বলে উল্লেখ আছে। কাজেই “বর্তমানে আওলাদে রাসূল নেই” এই কথা বলে ও প্রচার করে ফিতনা সৃষ্টি করা আসলেই একটা গোমরাহি। তাছাড়া ইরাকসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আওলাদে রাসূল ﷺ বিদ্যমান আছে। আর সৌদিআরব আমাদের দলিল না, আমাদের দলিল কোরআন ও হাদিস। তাছাড়া সৌদিআরব বর্তমানে আমেরিকার দালালি করতেছে। তাই সেখানে আওলাদে রাসূল না থাকলে যে, অন্য কোথাও থাকা যাবে না এমন কোনো কথা কোনো ইমানদার বলতে পারে না। এটা শুধু মুনাফিক-ই বলতে পারে।

👉প্রশ্নঃ ১২। ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ -সকল ঈদের সেরা ঈদ এর সালাত কয় রাক’আত ও কয় তাক্ববীরের সহীত আদায় করতে হবে?

উত্তর:– পারিভাষিক অর্থে ঈদ হলো দুইটা কিন্তু শাব্দিক অর্থে ঈদ আরো বেশী। যেমন শুক্রবার ও আরাফাতের দিন কেও ঈদের দিন বলা হয়েছে।

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় এটা (জুমাবার) ঈদের দিন। আল্লাহ তা’য়ালা এটা মুসলমানদেরকে দান করেছেন। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১৬৬৬)

আরেক খানা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
ﻋﻦ ﻋﺒﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﺎﻕ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻣﺮﺳﻼ
ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻰ
ﺟﻤﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻡ
ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻴﺪﺍ .

অর্থঃ “হযরত ওবায়েদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।”
(ইবনে মাযাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)

অথচ জুমু’আর দিন ও আরাফাতের দিনে ঈদের কোনো নামাজ নেই। অনেকে বলতে পারেন যে, শুক্রবারে ত আমরা জুমু’আ পড়ি এটাকে ঈদের নামাজ বলা যেতে পারে। ত আমার প্রশ্ন দিনে কত ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ? অবশ্যয় পাঁচ ওয়াক্ত। যদি জুমু’আর নামাজ কে ঈদের নামাজ বলেন তাহলে জুহরের নামাজ গেলো কই? কাজেই জুহরের পরিবর্তে জুমু’আ পড়া হয়, ঈদ হিসেবে নয়। অথচ এটা ঈদের দিন। আর অন্যদিকে ঈদের নামাজ ছাড়াও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে পাঁচ ওযাক্ত নামাজ পড়া হয়। তাই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ছাড়া অন্য কোনো ঈদের নামাজ নাই। তার মানে ‘ঈদ’ বা আনন্দোৎসব হলেই সেখানে নামাজ থাকবে তা জরুরি নয়। এইক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থে ঈদ আর ইসলামি পরিভাষায় ঈদের পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন;
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ, আমাদের পালনকর্তা! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্য ‘ঈদ’ বা আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রিজিক দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রিজিকদাতা।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে আকাশ থেকে খাঞ্চা ভর্তি খাবার আসাটাকে “ঈদ” শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যেটা ছিলো মূলত ঈসা (আ.) এর দোয়া। ঈসা (আ.)এর দোয়ার মাধ্যমে আকাশ থেকে খাবার আসলে সেটা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের জন্য ‘ঈদ’ হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলোঃ মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার তুলনায় আকাশ থেকে খাবার আসাটা কি খুব বেশি বড় বিষয়?

খাঞ্চা ভর্তি খাবার পেয়ে ঈসা (আ.) নামাজ আদায় করেছেন কিনা, তা কতো রাকাতের নামাজ ছিলো, তা কি কেউ প্রশ্ন করেছে? না, করেনি। তার মানে ‘ঈদ’ বা আনন্দোৎসব হলেই সেখানে নামাজ থাকবে তা জরুরি নয়। এইক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থে ঈদ আর ইসলামি পরিভাষায় ঈদের পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন।

কেন মিলাদুন্নবী ﷺ কে ঈদ বলা হয়?
এই সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন–
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-

(٥٨) قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ.
(৫৮) অর্থঃ-হে হাবীব আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত ধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা ইউনুছ, আয়াত নং- ৫৭-৫৮)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর এ উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম নূরে মোজাচ্ছম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।
যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَٰلَمِينَ
অর্থাৎ হে হাবীব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।(সূরা আম্বিয়া আয়াত নং- ১০৭)

তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী (রহঃ) কৃত তাফসীরই আদ দুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ড- ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ্ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ করেনঃ-
لَقَدْ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ
“আল্লাহ্ মু’মিনদের প্রতি অবশ্যই শ্রেষ্ট অনুগ্রহ(রহমত) করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্যে থেকে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।” (সূরা- আলে-ইমরান, আয়াত-১৬৪)
উক্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে বুঝা যায় যে, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট রহমত হলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আর আল্লাহ্ তা’য়ালা সূরা-ইউনুস এর ৫৮ নাম্বার আয়াতে বলেন – “হে হাবিব আপনি বলুন! তোমরা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফযল এবং রহমত পাও তাহলে তোমরা আনন্দ উৎসব করো।
আর আনন্দ উৎসবের আরবি-ই হলো ঈদ এটা শাব্দিক অর্থে ঈদ পারিভাষিক অর্থে নয়। তাই আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শ্রেষ্ট রহমত হিসেবে পেয়ে ঐদিন উৎসব করি অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করি।

মীলাদুন্নবী বিদ্বেষী এক শ্রেণির লোকেরা প্রচার করে থাকে ইসলামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দুই ঈদ ছাড়া তৃতীয় কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। এ দাবি ভিত্তিহীন, মনগড়া কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। দেখুন! ঈসা (আ)’র উপর আসমান থেকে খাবার ভর্তি দস্তরখানা অবতীর্ণ হওয়ার দিন, আরাফাতের দিন, শুক্রবার জুমার দিনসহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন সমূহকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করার বর্ণনা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

👉প্রশ্নঃ ১৩। সিহাহ সিত্তাহ তথা বোখারি, মুসলিস, তিরমিযি, নাসায়ি, ইবনে মাজা, আবু দাউদ শরীফের লেখকগণ পালন করছেন কি না?

উত্তরঃ হ্যাঁ, সিহাহ সিত্তার ঈমামগণ পালন করেছেন। সিহাহ সিত্তার অন্যতম কিতাব সহিহ মুসলিম শরীফে ত মিলাদুন্নাবী সাঃ সম্পর্কে পাচটি হাদিসই উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া তিরমিযী শরীফে ইমাম তিরমিযী রহঃ কিতাবুল মানাকেব অধ্যায়ে মিলাদুন্নাবী সাঃ সম্পর্কে স্বতন্ত্র আলাদা একটা পরিচ্ছেদ-ই রাখছেন। যার নাম হলোঃ- باب ما جاء في ميلاد النبي صلى الله عليه وسلم তারপরও যারা বলে ইমামগণ মিলাদুন্নাবী সাঃ করে নাই, তারা নিঃসন্দেহে কাজ্জাব ও মুনাফিক।

👉প্রশ্নঃ ১৪। কয়েকটি বিদ’আত- হাসানা এর নাম লিখুন। বিদ‘আত হলেও এগুলো করে সাওয়াব পাওয়া যাবে, এই বক্তব্য এর পক্ষে কোরআন হাদীছের দলিল পেশ করুন।

উত্তর:- পবিত্র কোরআন শরীফের হরকত (যের, যবর, পেশ) যা বিদ‘আতে হাসানা। কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ইবাদত। আর সেই ইবাদতটি করতে হলে অবশ্যই হরকত (বিদ‘আত) যুক্ত করে পড়তে হবে। (বর্তমানে প্রত্যেকটি লামাজহাবী গায়রে মুকাল্লিদ অর্থাৎ জাহেল সালাফিরা এই বিদ‘আতটি ছাড়া একটি আরবি শব্দও পড়ার যোগ্যতা নাই।) তাছাড়া যত প্রকার ইবাদতে গায়রে মাকসুদা আছে সবই তো বিদ‘আতে হাসানাহ্। যেমন- ওয়াজ-মাহফিল ইত্যাদি।

তাছাড়া এই ওহাবী সালাফি মালাউনগুলোর করা কিছু বিদ‘আতি আমল!

১) টঙ্গীর ইজতেমা (যা কোরআন ও হাদিসের কোথাও নাই)
২) ৬ উসূলী তাবলীগ (যা কোরআন ও হাদিসের কোথাও নাই)
৩) তাফসীর মাহফিল নাম দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলা। (যা কোরআন ও হাদিসের কোথাও নাই)
৪) পিস টিভিতে যাকাতের টাকা দেওয়া (যা কোরআন ও হাদিসের কোথাও নাই)
৫) সালাফিদের বিভিন্ন অ্যাপ্স এ সদকায়ে জারিয়ার নামে টাকা দেওয়া। (যা কোরআন ও হাদিসের কোথাও নাই)
এত্তগুলো বিদ‘আত মালাউনগুলোর চোখে পড়লো না অথচ নবীজি ﷺ এর মহব্বতে আমরা যা করি তাতেই শতানের দল আহলে হদসরা শুধু বিদ‘আত খুঁজে।

👉প্রশ্নঃ ১৫। সর্বপ্রথম কোন সাহাবী মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জসনে ঝুলুছের আয়োজন করেছেন?

উত্তর:- উপরের বহু সাহাবী থেকে মিলাদুন্নবী ﷺ এর দলিল দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয়বার দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না।

বি:দ্র: উক্ত প্রশ্নকারীকে প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য ১০টি করে জুতার বারী দেওয়া মোস্তাহাব হয়ে গেছে।

শেষ কথা: ওহাবী, সালাফিসহ ৭২ দল বাতিল ফিরকা’কে যতই দলিল দেওয়া হোক না কেন তারা কখনোই মানবে না। কারণ তাদের অন্তরে আল্লাহ্ কুফুরীর মোহর মেরে দিয়েছেন।

Spread the love

2 thoughts on “মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব”

  1. আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের রাসুলুল্লাহ সাঃ কে মাইনাস করে কোন কথা বলা কোনো প্রকার সূযোগ নেই। আপনাদের এই ওয়েবসাইট টি আমাকে অনেক ভালো লেগেছে। আমিন।

    Reply
  2. একজন মানুষ প্রশ্ন করতেই পারে তাই বলে জুতার বারি দিতে হবে.?? তাহলে সুন্নিয়ত শিখবে কোথ থেকে.??

    Reply

Leave a Comment