মুসলিম রমণীদের পর্দা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ❓

প্রশ্ন:- ইসলামী বোন আধুনিক ডিজাইনের মুক্তো গাঁথা দৃষ্টিনন্দন বোরকা পরিধান করে বাইরে যাবে কিনা?

উত্তর:- এতে পুরোপুরি ফিতনা রয়েছে যে, মনের রোগী এই আকর্ষনীয় বোরকা চোখ তুলে তুলে দেখবে। মনে রাখবেন! মহিলার বোরকা যতই দৃষ্টিনন্দন ও ডিজাইনেবল হবে ততই ফিতনার আশংকা বৃদ্ধি পাবে।

প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “মহিলার জন্য আবশ্যক হলো; উচ্চমানের পোশাক এবং উন্নত মানের বোরকা পরিধান করে যেন বাইরে না যায়। কেননা, সুশোভিত বোরকা পর্দা নয় বরং তা সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা।” (মিরআত, ৫ম খন্ড, ১৫ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:- মহিলা (যদি) সাদা অথবা সুন্দর চাদরের মাধ্যমে সম্পূর্ন দেহ ঢেকে বের হয় তাহলে?

উত্তর:- চাদরের মধ্যে কোন ধরনের আকর্ষনীয় কিছু না থাকা উচিত। যেমনিভাবে- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মাদ গাযালী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর মর্যাদা পূর্ণ বর্ণনার সারাংশ হচ্ছে: “সাধারনত মহিলা যে দৃষ্টিনন্দন চাদর ও ঘোমটা পরিধান করে, তা যথেষ্ট নয়। বরং যখন তারা সাদা চাদর পরিধান করে অথবা সুন্দর ঘোমটা পরিধান করে তখন তার মাধ্যমে উত্তেজনা আরও নাড়া দিয়ে উঠে যে, হয়ত মুখ খোলার পর তাকে আরও সুন্দর দেখা যাবে! সুতরাং সাদা চাদর ও সুন্দর ঘোমটা এবং বোরকা পরিধান করে বাইরে বের হওয়া মহিলাদের জন্য হারাম। যে মহিলা এমন করবে, সে গুনাহগার হবে এবং তার পিতা, ভাই বা স্বামী যে তাকে এর অনুমতি প্রদান করবে সেও তার সাথে গুনাহে লিপ্ত হবে।” (কিমিয়ায়ে সাআদাত, ২য় খন্ড, ৫৬০ পৃষ্ঠা)

বোরকাঃ

প্রশ্ন:- তাহলে বোরকার ধরণ কেমন হবে?
উত্তর:- মোটা কাপড়ের ঢিলেঢালা ও অনার্কষনীয় রংয়ের তাবু সাদৃশ্য সাদাসিদে বোরকা হওয়া চাই, যাতে পরিধানকারীনীর ব্যাপারে অনুমান করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় যে, “সে যুবতী নাকি বৃদ্ধা।”

ইসলামী বোনদের জন্য সতর্কতা
আমার মর্ডান পরিবারের অবস্থাদি, ইংরেজী সভ্যতার প্রেমিক, আত্মীয় স্বজনদের চিন্তাধারা ও আজকালের অনৈতিক অবস্থাদির ব্যাপারে পরিপূর্ণ উপলব্দি রয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও আমি ইসলামী বিধিবিধান উপস্থাপন করেছি। যেন শরয়ী পর্দার সঠিক ইসলামী চিত্র সবার সামনে প্রকাশ পায়। নিশ্চয় সকল মুসলমান এ ব্যাপারে অবগত যে, “আমাদেরকে শরীয়াতের অনুসরন করতে হবে, শরীয়াত আমাদের অনুসরন করবে না।” ইসলামী বোনদের নিকট অনুরোধ যে, কাউকেই যেন ঢিলেঢালা অনাকর্ষনীয় রংয়ের একেবারে অনাকৃষ্ট তাবু সাদৃশ্য সত্যিকারের বোরকা পরিধান করার জন্য বাধ্য না করেন। কেননা, অনেক পরিবারের কঠোরতা খুবই বেশি, শরীয়াত ও সুন্নাতের বিধানের আমলকারী ও কারীনিদের সাথে আজকাল সমাজের অধিকাংশই সীমাহীন অসদাচরন করা হয়, যার কারণে অধিকাংশ ইসলামী বোন নিরাশ হয়ে যায়। আপনার সমালোচনার কারণে হতে পারে কোন ইসলামী বোন বর্তমান সামাজিক অবস্থার প্রতি অসহায় হয়ে মাদানী পরিবেশ থেকেই বঞ্চিত হয়ে যাবে। নিশ্চয় যতই পুরাতন ইসলামী বোন হোক না কেন এবং সে যতই আকর্ষনীয় বোরকাই পরিধান করুক না কেন অথবা মেকআপ করুক না কেন তাকে অপমানিত করে তার অন্তরে কষ্ট দিবেন না। কেননা, শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে মুসলমানের অন্তরে কষ্ট দেয়া হারাম ও জাহান্নামের নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ।

নিজের মহল্লায় এসে বোরকা খুলে ফেলা কেমন?

প্রশ্ন:- কিছু ইসলামী বোন নিজের বিল্ডিং অথবা গলি ইত্যাদিতে পৌঁছেই ঘরে প্রবেশ করার পূর্বেই বোরকা খুলে ফেলে, এরূপ করা কেমন?

  1. উত্তর:- যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরের ভেতর প্রবেশ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বোরকা তো নয়ই, চেহারা থেকে ঘোমটাও সরাবে না। কেননা, সিঁড়ি অথবা বিল্ডিং ইত্যাদিতেও পর-পুরুষ থাকতে পারে এবং তাদের থেকে পর্দা করা আবশ্যক।

 

যদি বোরকা পরিধান করতে গরম অনুভব হয়?

প্রশ্ন:- গরমকালে বোরকা পরিধান করতে অথবা মোটা চাদর দ্বারা শরীর ঢেকে বাইরে বের হওয়াতে গরম অনুভব হয় এবং (এমতাবস্থায়) যদি শয়তান কুমন্ত্রনা দেয় তবে কি করবে?

উত্তর:- শয়তানের কুমন্ত্রনার দিকে মনোযোগ না দেয়াও কুমন্ত্রনার প্রতিরোধ করা। এমতাবস্থায় মৃত্যু, কবর, হাশর ও জাহান্নামের কঠোর গরমকে স্মরণ করুন। ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ শরয়ী পর্দা করার কারণে অনুভব হওয়া গরমও ফুল মনে হবে। যদি সম্ভব হয় তবে এই ঘটনাকে স্মরণ করুণ। তাবুকের যুদ্ধের সময় প্রচন্ড গরম ছিলো। এ অবস্থায় মুনাফিকগন বললো: ﻟَﺎ ﺗَﻨْﻔِﺮُﻭْﺍ ﻓِﻰ ﺍﻟْﺤَﺮِّﻁ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এই গরমকালে বের হয়ো না।’ এর প্রতিউত্তরে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: ﻗُﻞْ ﻧَﺎﺭُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺍَﺷَﺪُّ ﺣَﺮًّﺍ (হে মাহবুব) আপনি বলুন! জাহান্নামের আগুন সব চেয়ে কঠিন গরম।’ (পারা: ১০, সূরা: তাওবা, আয়াত: ৮১)

খোদার শপথ! বোরকার গরম বরং দুনিয়ার বৃহৎ আগুনও জাহান্নামের আগুনের তুলনায় কিছুই নয়।

মহিলাদের পুরুষের মতো চুল কাটানোঃ

প্রশ্ন:- মহিলাদের জন্য পুরুষের মতো চুল কাঁটানো কেমন?

উত্তর:- নাজায়েয ও গুনাহ।

মহিলাদের মাথা মুন্ডন করাঃ

প্রশ্ন:- মহিলাদের মাথা মুন্ডন করা কেমন?
উত্তর:- হারাম। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ৬৬৪ পৃষ্ঠা)

মহিলাদের দর্জিকে মাপ দেয়া কেমন?

প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা নিজের কাপড় সেলাই করার জন্য পর-পুরুষ দর্জিকে নিজের শরীরের মাপ দেয়া কেমন?

উত্তর:- হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। এতে দর্জিও কঠিন গুনাহগার ও জাহান্নামের আগুনের ভাগিদার হবে। কেননা, দৃষ্টি না দিয়ে এবং শরীরে হাত স্পর্শ না করে মাপ নেয়া সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হয় তবে ইসলামী বোনের দ্বারাই কাপড় সেলাই করাবে। যদি এটাও সম্ভব না হয় তবে ঘরের মহিলারাই মাপ নিবে আর কোন মাহরাম গিয়ে দর্জিকে সেলাই করার জন্য দিয়ে আসবে। ইসলামী বোনেরা যেন যখন তখন ঘরের বাইরে চলে না যায়। শুধুমাত্র শরীয়াতের অনুমতিক্রমে পর্দার সমস্ত বিধানাবলী মেনে বাইরে বের হবে।

নারীদের চুলের ব্যাপারে প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন:- ইসলামী বোনদের যে চুল আঁচড়ানোর কারণে ছিড়ে যায়, তা কি করবে?

উত্তর:- এই চুলগুলোকে লুকিয়ে ফেলুন অথবা দাফন করে দিন। যাদের বাড়িতে নরম মাটি অথবা বাগান রয়েছে তাদের জন্য এ কাজটি করা অতি সহজ। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “(মহিলাদের) যে অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া নাজায়েয, যদি সেই অঙ্গটি দেহ থেকে পৃথক হয়ে যায়, এমতাবস্থায়ও তার দিকে দৃষ্টি দেয়া নাজায়েযই থাকবে। (দুররে মুখতার, ৯ম খন্ড, ৬১২ পৃষ্ঠা)

গোসলখানা অথবা পায়খানায় অনেক লোক নাভীর তলদেশের চুল কর্তন করে রেখে দেয়। এরকম করা উচিত নয়, বরং সেগুলোকে এমন জায়গায় ফেলে দিন যেখানে কারো দৃষ্টি না পড়ে অথবা মাটির মধ্যে পুঁতে রাখুন। মহিলাদের জন্যও এটা আবশ্যক, চিরুনি করার দ্বারা অথবা মাথা ধৌত করার দ্বারা যে সমস্ত চুল বের হয়ে যায়। সেগুলোকে যেন কোথাও লুকিয়ে ফেলে। যেন তাতে পর-পুরুষের দৃষ্টি না পড়ে।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম খন্ড, ৯১, ৯২ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ্ তাআলা ২৮ পারার সূরা তাহরিম এর আয়াত নম্বর ৬ এ ইরশাদ করেন:

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍٰﻣَﻨُﻮﺍ ﻗُﻮْﺍ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ﻭَﻗُﻮْﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ হে ঈমানদারগণ! নিজেকে ও নিজের পরিবারবর্গকে ওই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর; (পারা: ২৮, সূরা: তাহরীম, আয়াত: ৬)

পরিবারের সদস্যদের দোযখ থেকে কিভাবে বাঁচাবেন?

বর্ণিত আয়াতের সম্পর্কে খাযায়িনুল ইরফানে উল্লেখ রয়েছে; “আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ َﺳَﻠَّﻢ এর আনুগত্য অবলম্বন করে, ইবাদত সমূহ পালন করে, গুনাহ থেকে বিরত থেকে, পরিবারের সদস্যদের নেকীর দাওয়াত ও গুনাহ থেকে বারণ করে ও তাদেরকে ইলম ও আদব শিখিয়ে। (নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও)।”

হিজড়া থেকেও পর্দাঃ

প্রশ্ন:- ইসলামী বোনদের কি হিজড়া থেকেও পর্দা রয়েছে?

উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ। হিজড়াও পুরুষের হুকুমে গন্য, সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “হিজড়ারা পুরুষ। জামাআতে তারা পুরুষের কাতারেই দাঁড়াবে।” (ফতোওয়ায়ে আমজাদিয়া, ১ম খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা)

দৃষ্টির ব্যাপারে প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন:- শুনেছি মহিলার উপর প্রথম যে দৃষ্টি পড়ে, তা ক্ষমাযোগ্য এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর:- যদি অনিচ্ছায় কোন মহিলার প্রতি প্রথমবার দৃষ্টি পড়ে এবং সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, তবে তা ক্ষমাযোগ্য। যদি ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয় তবে প্রথমবারই দৃষ্টি দেয়া হারাম আর জাহান্নামের নিয়ে যাওয়া মতো কাজ।

আল্লাহ্ তাআলা পুরুষদেরকে দৃষ্টি হিফাযতের ব্যাপারে ১৮ পারার সূরা নূরের ৩০নং আয়াতে ইরশাদ করেন: ﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:
মুসলমানপুরুষদেরকে নির্দেশ দিন যেন তারা নিজেদের দৃষ্টিসমূহকে কিছুটা নিচু রাখে; (পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ৩০)

মহিলাদেরকে দৃষ্টি হিফাযতের ব্যাপারে ইরশাদ করেন: ﻭَﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং মুসলমান নারীদেরকে নির্দেশ দিন যেন তারা নিজেদের দৃষ্টিগুলোকে কিছুটা নিচু রাখে; (পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)

দৃষ্টি দেয়া সম্পর্কিত ৪টি হাদীস শরীফঃ

দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও:

(১) হযরত সায়্যিদুনা জারির বিন আবদুল্লাহ্ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বর্ণনা করেন: “একবার আমি তাজেদারে মদীনা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করলেন: “নিজের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নাও।” (সহীহ মুসলিম, ১১৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১৫৯)

ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দিওনা:

(২) তাজেদারে মদীনা, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ হযরত সায়্যিদুনা আমীরুল মু’মিনীন শেরে খোদা মাওলায়ে কায়েনাত আলী মুরতাদ্বা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ কে ইরশাদ করলেন: “এক দৃষ্টি দেয়ার পর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দিওনা।” (অর্থাৎ যদি হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও এবং দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দিওনা। কেননা, প্রথম দৃষ্টি জায়েয আর দ্বিতীয় দৃষ্টি নাজায়েয।) (সুনান আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ৩৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১৪৯)

দৃষ্টি হিফাযতের ফযীলত:

(৩) খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেছেন: “যে মুসলমান কোন মহিলার সৌন্দর্য্যরে প্রতি প্রথমবার (অনিচ্ছাকৃত) দৃষ্টি দেয়, অতঃপর নিজের দৃষ্টিকে নত করে নেয়, আল্লাহ্ তাআলা তাকে এমন ইবাদতের সামর্থ্য দান করবেন যার স্বাদ সে অনুভব করবে।” (মুসনদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৮ম খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২২৩৪১)

শয়তানের বিষাক্ত তীর:

(৪) রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেছেন; হাদীসে কুদসী হচ্ছে: “দৃষ্টি শয়তানের তীর সমূহের মধ্যে একটি বিষাক্ত তীর, সুতরাং যে ব্যক্তি আমার ভয়ে সেটাকে ত্যাগ করবে, তবে আমি তাকে এমন ঈমান দান করবো, যার স্বাদ সে তার অন্তরে অনুভব করবে।” (আল মু’জামুল কাবীর লিত তাবারানী, ১০ম খন্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১০৩৬২)

চোখে আগুন ভর্তি করা হবেঃ
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ উদ্বৃত করেন:“যে ব্যক্তি নিজের চোখকে হারাম দৃষ্টি দ্বারা পূর্ণ করবে। কিয়ামতের দিন তার চোখে আগুন ভর্তি করে দেয়া হবে।” (মুকাশাফাতুল কুলুব, ১০ পৃষ্ঠা)

আগুনের শলাকাঃ

হযরত আল্লামা আবুল ফরজ আব্দুর রহমান বিন জাওযী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ উদ্বৃত করেন: “মহিলার সৌন্দয্যের্র প্রতি তাকানো ইবলিসের বিষাক্ত তীর সমূহের মধ্যে থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি না-মাহরাম থেকে নিজের দৃষ্টিকে হিফাযত করবে না, কিয়ামতের দিন তার চোখে আগুনের শলাকা প্রবেশ করানো হবে।” (বাহরুল দুমু, ১৭১ পৃষ্ঠা)

দৃষ্টি অন্তরে কামভাবের বীজ বপন করে
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: যে ব্যক্তি নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখার ক্ষমতা রাখে না, সে নিজের লজ্জাস্থানকেও হিফাযত করতে পারে না।

۞ হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ্ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ বলেন: নিজের দৃষ্টিকে হিফাযত করো, এটা অন্তরে কামভাবের বীজ বপন করে, ফিতনার জন্য শুধুমাত্র এটাই যথেষ্ট।”

۞ হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহ্ইয়া ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো যে, যিনার (ব্যভিচারের) সূচনা কিভাবে হয়? তখন তিনি ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ বললেন: “দেখা এবং কামনা করার মাধ্যমে।

۞ হযরত সায়্যিদুনা ফুযাইল ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “শয়তান বলে যে, দৃষ্টি আমার পুরাতন তীর এবং কামান, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না।” (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা)

۞ আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “প্রথমে দৃষ্টি প্রভাবিত হয়, অতঃপর অন্তর প্রভাবিত হয়, অতঃপর লজ্জাস্থান প্রভাবিত হয়।” (আনওয়ারে রযা, ৩৯১ পৃষ্ঠা)

মহিলাদের চাদরের দিকেও দৃষ্টি দিওনা
হযরত সায়্যিদুনা আ’লা বিন যিয়াদ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “নিজের দৃষ্টিকে মহিলার চাদরের উপরও নিক্ষেপ করোনা। কেননা, দৃষ্টি অন্তরে কামভাব সৃষ্টি করে।” (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ২য় খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা)

Spread the love

Leave a Comment