আশুরার ফজিলত ও ইতিহাস Ashura-Muharram

আশুরার ফজিলত ও ইতিহাস

আশুরার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে সমস্ত তথ্য কি আপনি জানতে চান? প্রবন্ধটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন মহরম ও আশুরা সম্পর্কে সমস্ত বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পারবেন । ইনশাআল্লাহ

আজকের  আলোচনার বিষয় 

  • আশুরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও গুরুত্ব
  • আশুরার রোজা
  • আশুরার রোজার ফজিলত
  • আশুরার রোজা ১টি নাকি ২টি
  • করণীয় ও বর্জনীয়

আশুরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও গুরুত্ব

আল্লাহ তালার নিকট অতি সম্মানিত মাস চারটি, জিলকদ, জিলহজ, মুহররম, রজব।
{বোখারি:২৯৫৮} এই চারটি মাসের মধ্যে একটি মাস হল মহররম এই মহররম মাসের ১০তম দিনকে আশুরার দিন বলা হয় । আর পূর্বের রাত্রি অর্থাৎ ৯ইমহররম দিবাগত রাত্রিকে আশুরার রাত্রি বলা হয় ।

এই দিনে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়।এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসেবে নবী আদম-(আঃ)কে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেন করেন।এ দিনেই হযরত আদম (আঃ) কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় । আবার এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা তিনার দোয়া কবুল করেন ( গন্ধম ফল খাওয়ার লাগছিস) ক্ষমা করেন । এ দিনে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন, আবার এদিনেই নমরুদের বিশাল অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তিলাভ করেন।

এই আশুরাতেই তুর পাহাড়ে আল্লাহর সাথে হযরত মুসা (আঃ)এর কথোপকথন হয় এবং তিনি আসমানী কিতাব ‘তাওরাত’ লাভ করেন, আবার এই ১০ই মহররমেই জালেম ফেরাউনের কবল থেকে হযরত মুসা (আ:) মুক্তি পান এবং ফেরাউনের দলবলসহ নীল দরিয়ায় তলিয়ে যায়। ইত্যাদি বহু ইতিহাস এই দিনের সঙ্গে জড়িত ।
তবে এসব থেকে করুন ইতিহাস হল নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম এর নাতি হযরত হুসাইন (রা) দ্বীন ইসলামের খাতিরে কারবালার ময়দানে শহীদ হন ।
এবং তার সঙ্গে আরো ৭২জন শহীদ হন ।
সেই কারবালার করুন কাহিনী শুনলে প্রত্যেকটা ঈমানদার চোখে জল আসে । সেই মর্মান্তিক কাহিনী ঘটে যায় এই ১০ মহররম আশুরার দিন ।
যার কারণে এই আশুরা মানুষের কাছে আরো বেশি পরিচিতি ও সম্মান
লাভ করেছে ।

আশুরার রোজাঃ-

নবী করিম (সাঃ)মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবী (সাঃ) বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা (আঃ) রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। {বোখারি}

আশুরার রোজার ফজিলত

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা
হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম
(মাসের রোজা)। { সহিহ মুসলিম,}

নবী (সাঃ) এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি । আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। {সহিহ মুসলিম}

আশুরার রোজা ১টি নাকি ২টি?

আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখতে হয় ।  ৯মহররমর, ১০ই মহররম। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। {সহিহ মুসলিম}

ইমাম শাফেয়ী ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।

আতা বিন আবি রিবা (রহঃ) বলেন, নিশ্চয় তিনি ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা নয় ও দশ তারিখ সিয়াম রাখো এবং ইহুদীদের বৈপরীত্য করো( বায়হাক্বী হা/৮৪০৪)।

তাহলে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আশুরা উপলক্ষে দুইটি রোজা রাখতে হবে ৯ মহররম এবং ১০ই মহররম ।

করণীয় ও বর্জনীয়

আশুরার রাত্রে বা দিনে করণীয়

  • রোজা রাখা
  • বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
  • কোরআন তেলাওয়াত করা
  • শোহাদায়ে কারবালার জন্য ঈসালে সওয়াব করা
  • বেশি বেশি দান করা । ইত্যাদি

আশুরার রাতে বা দিনে বর্জনীয়

  • তা’যিয়া বানানো
  • ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা।

ছোট্ট একটি কথা হযরত হাসান হুসাইন মা ফাতিমা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম আজমাইন (এনাদের কে ভালবাসতে হবে এটা মুমিনের পরিচয়) এনাদের সঙ্গে শত্রুতা করা মানে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে শত্রুতা করা । তবে মাতম করে ছুরি দিয়ে পিঠ ও বুক কেটে আহলে বাইতকে ভালোবাসা হয় না বরং তাদের সঙ্গে বেয়াদবি করা হয় । ফলে মাতম করা বর্জন করতে হবে।

  • ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো
  • গান বাজনা করা
  • পটকা ফাটানো -ইত্যাদি

তথ্য সংগ্রহ করেছেন- আব্দুল আজিজ কাদেরী

প্রশ্নঃ- আশুরার রোজা ১টি নাকি ২টি?

উত্তরঃ- আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখতে হয় । ৯মহররমর, ১০ই মহররম।

প্রশ্নঃ- মহরম উপলক্ষে মাতম করার বিধান কি?

উত্তরঃ-  মাতম করা দ্বারা হোসাইন (রাঃ) কে ভালোবাসা হয় না বরং কষ্ট দেওয়া হয় । হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সে ব্যক্তি আমাদের দলের লোক নয়, যে (মৃতের শোকে) নিজ মুখমন্ডলে হাত দ্বারা আঘাত করে, জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং অন্ধকার যুগের লোকদের মত হা-হুতাশ করে। (মুসনাদে আহমাদ৩৬৫৮, সহীহ বুখারী ১২৯৭, ১২৩৫, সহীহ মুসলিম-১৬৫, ১০৩)

এবার পড়ুন

ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের বিষয়ে ইয়াজিদ কি জড়িত ছিল?

বেতর নামাজ কত রাকাত জানতে এখানে ক্লিক করুন

Spread the love

Leave a Comment