রোজার আধুনিক মাসআলা- রোজার মাসয়ালা মাসায়েল

রোজার আধুনিক মাসআলা

একস্থানে রোযা শুরু করে অন্যস্থানে যাওয়ায় রোযা কম-বেশি হলো

মাসআলা: যে ব্যাক্তি ২৭ বা ২৮ রোযা পূর্ণ করার পরই তার (সফর করে আসা) দেশে ঈদের চাঁদ ওঠে যায় সে ওই দেশবাসীর সঙ্গে ঈদ করবে এবং পরবর্তী সময়ে একটি বা দুটি রোযা রেখে ৩০টি পূর্ণ করবে। তবে ওই জায়গায় যদি ২৯ রোযার পরই ঈদের চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে তাহলে ২৯টি পুরো করলেই চলবে।

মাসআলা: আর যে ব্যাক্তির রোযা ৩০টি পুরো হয়ে যাওয়ার পরও ওই দেশের মুসলমানদের রমযান মাস পূর্ণ হয় না সে ওই দেশের লোকজনের সাথে রমযান শেষ হওয়া পর্যন্ত রোযা রেখে যাবে। যাতে রমযানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন না হয়। অতঃপর সকলের সাথে একত্রে ঈদ করবে।

ওষুধের মাধ্যমে মহিলাদের মাসিক নিয়ন্ত্রণ:

মাসআলা: কোনো কোনো মহিলা রমযানের রোযা রমযান মাসেই পুরো করার উদ্দেশ্যে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রেখে থাকে। এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা হচ্ছে, যে পর্যন্ত একজন মহিলার মাসিক দেখা না দিবে ওই পর্যন্ত সে নিয়মিত নামায-রোযা করে যাবে; যদিও কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাসিক বন্ধ রাখা হোক না কেনো। তবে এ ধরনের পদ্ধতি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেওয়া উচিত।

এন্ডোস্কপি:

মাসআলা: এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়; যার মাথায় বাল্বজাতীয় একটি বস্তু থাকে। নলটির অপর প্রান্ত থাকে মনিটরের সাথে। এভাবে চিকিৎসকগণ রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন।

যেহেতু এন্ডোস্কপিতে নল বা বাল্বের সাথে কোনো মেডিসিন লাগানো হয় না, তাই এর কারণে সাধারণ অবস্থায় রোযা ভাঙ্গার কথা নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে জানা গেছে এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে যে, এন্ডোস্কপির সময় টেস্টের প্রয়োজনে চিকিৎসকগণ কখনো কখনো নলের ভেতর দিয়ে পানি ছিটিয়ে থাকেন; যা সরাসরি রোযা ভঙ্গের কারণ। সুতরাং যদি কারো ক্ষেত্রে পানি বা ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো ছাড়াই টেস্টটি সম্পন্ন হয় তাহলে তার রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। অন্যথায় রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

এন্ডোস্কপি করা হয় খালি পেটে, তাহলে একজন রোযাদার রোযা অবস্থায় এ টেস্টটি না করাতে পারলে কীভাবে তা করাবে? এ প্রশ্নের জবাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বললেন, এক্ষেত্রে রোগীর পানি পান করতে বাঁধা নেই। তাই রোগী ইচ্ছা করলে শুধু পানি দ্বারা ইফতার করে টেস্টটি করিয়ে নিতে পারে।

এন্ডোস্কপির মতোই মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।

এনজিওগ্রাম:

মাসআলা: সাধারণ পদ্ধতির এনজিওগ্রামের কারণে রোযা নষ্ট হয় না।

ইনজেকশন ও ইনসুলিন:

মাসআলা: ইনজেকশনের কারণে রোযা ভাঙ্গে না। এমনিভাবে একজন রোযাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে। অবশ্য যে সকল ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোযা মাকরূহ হবে।

স্প্রে জাতীয় ওষুধ:

মাসআলা: বর্তমানে এ্যারোসল জাতীয় বেশ কিছু ওষুধ দ্বারা বক্ষব্যাধি, হার্টএ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। গ্যাস জাতীয় এ সকল ওষুধ রোগীর মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। নিম্নে রমযানে এ ওষুধগুলো ব্যাবহারের হুকুম বর্ণনা করা হলো।

নাইট্রোগ্লিসারিন:

মাসআলা: এ্যারোসোল জাতীয় ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যাবহার করে থাকে। জিহবার নিচে ২/৩ বার ওষুধ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ডাক্তারদের মতে সাথে সাথে ওই ওষুধ শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায়। এ হিসাবে এ ওষুধ ব্যাবহার করলে রোযা নষ্ট হবে না। তবে রোগীর কর্তব্য হলো, জিহবার নিচের ওষুধটি দেওয়ার পর সাথে সাথে তা গিলে না ফেলা।

ভেন্টোলিন ইনহেলার:

মাসআলা: বক্ষব্যাধির জন্য এ ওষুধ ব্যাবহৃতো হয়ে থাকে। রোগীদেরকে মুখের ভেতর এমনভাবে ওষুধটি স্প্রে করতে বলা হয়, যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকে চলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্যনালী হয়ে ওষুধটি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সচিত্র ব্যাখ্যা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, ওষুধটি স্প্রে করার পর এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতেও প্রবেশ করে। সুতরাং এ ধরনের ইনহেলার প্রয়োগের কারণে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। চিকিৎসকগণ বলেছেন যে, মারাত্মক জটিল রোগী ছাড়া অন্য সকলেরই সাহরীতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর পরবর্তী ডোজ ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগীর কর্তব্য হলো বিষয়টি তার চিকিৎসক থেকে বুঝে নেওয়া এবং সম্ভব হলে রোযা অবস্থায় তা ব্যাবহার না করা।

❇অবশ্য যদি কোনো রোগীর অবস্থা এতো জটিল হয় যে, ডাক্তার তাকে অবশ্যই দিনেও ওষুধটি ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই রোগীর এ সময়ে ইনহেলার ব্যাবহার করার অবোকাশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোযা কাযা করে নিবে।

Spread the love

Leave a Comment