রোযা, সাহরী ও ইফতারের জরুরী মাসয়ালা মাসায়েল

রোযা, সাহরী ও ইফতারের জরুরী মাসয়ালা মাসায়েল

* মুসলিম নর-নারীগণ সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদতের নিয়্যতে পানাহার এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাই রোযা। নারীদের বেলায় এ সময় হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র থাকা পূর্বশর্ত। [আলমগীরী]

* রমযানের রোযা রাখা মুসলমান বালেগ, বিবেকবান ও সুস্থ পুরুষ এবং একই ধরনের হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত নারীদের উপর ফরযে আইন। অস্বীকার বা ঠাট্টা করলে কাফির হবে আর বিনা অজুহাতে অবহেলা বশত আদায় না করলে কবীরা গুনাহগার ও ফাসিক্ব হয়ে যাবে। [রদ্দুল মুহতার ও আলমগীরী]

* রমযানের একমাস রোযা পালন করা ফরয। হাদীস শরীফের বর্ণিত, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয় বিধায় চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখেই (রোযা) রাখা বন্ধ কর। যদি ঊনত্রিশে রমযান চাঁদ দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। [খাযাইনুল ইরফান]

রোযার নিয়্যতঃ

* রোযার জন্য নিয়্যত করাও অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক রোযার জন্য অন্তরে ইচ্ছা থাকলে নিয়্যতের শর্ত পূরণ হবে। তবে তা মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। এ নিয়্যত পূর্বদিনের সূর্যাস্তের পর হতে রোযার দিনের দুপুরের আগে পর্যন্ত করা যাবে। এর আগে বা পরে করলে রোযা হবে না।

* রোযার নিয়্যতে সাহরী খাওয়াও নিয়্যত হিসেবে গণ্য হবে। সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়্যত করলে বলবেন-

নাওয়াইতু আন্ আসুমা গাদাম মিন্ শাহরি রামাদ্বা-নাল্ মুবারাকি ফারদ্বাল্ লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস্ সামীউল ‘আলীম। অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য আগামী কাল রমযানের ফরয রোযার নিয়্যত করলাম। আর ফজরের পর নিয়্যত করলে বলবেন-
নাওয়াইতু আন্ আসুমা হাযাল ইয়াওমা লিল্লাহি তা‘আলা মিন ফারদ্বির রমাদ্বানা।
অর্থাৎঃ আল্লাহর জন্য আমি আজকের রমযানের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম।

*রোযার নিয়্যত রাতে বা ফজরের আগে করাই মুস্তাহাব। রোযার নিয়্যত কার্যকর হয় সুহবে সাদিক হতে। অতএব, কারো দিনের বেলার (মধ্যাহ্নের পূর্ব পর্যন্ত) নিয়্যত ঐ সময়ই শুদ্ধ হতে পারে যদি নিয়্যতকারী সুবহে সাদিক হতে রোযা ভঙ্গের কোন কাজ না করে। [রদ্দুল মুহতার]

সাহরী খাওয়ার সময় বা সুবহে সাদিকের পূর্বে যদি মনস্থ করে যে, সকালে রোযা রাখবে না এবং এর উপর নতুন নিয়্যত না করলে রোযা হবে না। যদিও সে সারাদিন পানাহার ও যৌন সঙ্গম পরিহার করে।
[দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]

* সাহরী খাওয়া রোযার নিয়্যত রূপে গণ্য হয়। কিন্তু সে সময় যদি এই ইচ্ছা থাকে যে, সকালে রোযা রাখবে না তাহলে সাহরী খাওয়া নিয়্যত বলে গণ্য হবে না।

* যদি কোন নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় রাতে রোযার নিয়্যত করে থাকে এবং সুবহে সাদিকের পূর্বেই পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার রোযা শুদ্ধ হবে। [জাওহারা]

* মুসাফির ও পীড়িত লোক ব্যতীত অন্য কেউ রমযানের রোযার সময় নফল কিংবা ওয়াজিব কিংবা পূর্ববর্তী কোন কাযার নিয়্যত করে তবুও তার রমযানের রোযাই আদায় হবে। পক্ষান্তরে মুসাফির ও পীড়িত লোক যদি রমযান ব্যতীত অন্য কোন রোযার নিয়্যত করে তবে যা নিয়্যত করে তাই আদায় হবে- রমযানের নয়। [তানভীরু আবসার]

★ রমযানের রোযা যাদের জন্য পরে আদায়ের অবকাশ রয়েছেঃ

* সফর, গর্ভধারণ, সন্তানকে দুগ্ধ পান করানো, পীড়া, বার্ধক্য, শারীরিক ও মানসিক কোন প্রকার ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা এবং জেহাদ এ সব অজুহাতে এ মাসের রোযা না রেখে তা ক্বাযা করলে গুনাহগার হবে না। [আলমগীরী]

* গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী রমণী যদি রোযার কারণে স্বীয় দুগ্ধ পোষ্য সন্তানের জীবনহানি অথবা অসুস্থতার আশংকা বোধ করে তবে তার জন্য পরবর্তীতে রোযা রাখার অবকাশ রয়েছে। এমন কি এ ক্ষেত্রে পেশাদার স্তন্যদানকারীনীর জন্যও। [দুররে মুখতার ও খাযাইনুল ইরফান]

* বিনা ওযরে এ মাসে রোযা না রাখা বড় গুনাহ। পীড়িত লোক নিজ অনুমান বশত রোযা ছেড়ে দিতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি কোন দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামত কিংবা নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা অথবা প্রমাণ দ্বারা দৃঢ় ধারণায় উপনীত না হয় যে রোযার কারণে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় তাকে রোযার ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয় আদায় করতে হবে। কোন লোক সুস্থ; কিন্তু দ্বীনদার চিকিৎসক যদি রোযার কারণে পীড়িত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তবে সে ব্যক্তি ও পীড়িতদের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। [খাযাইনুল ইরফান ও দুররে মুখতার]

* যে মুফাসসির সুবহে সাদিকের পর সফর শুরু করে তার জন্য সেদিনের রোযা না রাখার অবকাশ নেই। কিন্তু যদি সুবহে সাদিকের পূর্বে সফর আরম্ভ করে তবে তার জন্য অবকাশ রয়েছে। আর যদি সেদিন সফরে রোযা ভঙ্গ করে তবে কাফ্ফারা দিতে হবে না; যদিও সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে সফরে যাওয়ার আগেই রোযা ভাঙ্গলে ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই বাধ্যতামূলক হবে। [আলমগীরী]

* বার্ধক্য জনিত দুর্বলতা হেতু রোযা রাখতে অসমর্থ হলে তার জন্য ক্বাযা করার অনুমতি রয়েছে। আর যদি সে ব্যক্তির সুস্থতা ও সামর্থ ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করাবে, অথবা অর্ধসা’ (২ কেজি ৫০ গ্রাম) গম বা গমের আটা কিংবা তার দ্বিগুণ যব কিংবা যবের সমমূল্য ফিদ্য়া হিসেবে সাদকা করবে।

* যদি ফিদ্য়া প্রদানের পর পুনরায় রোযা রাখার মত সামর্থ ফিরে আসে তবে তাকে তখন রোযার ক্বাযাও আদায় করতে হবে।

* মরণোম্মুখ বৃদ্ধ বা শায়খে ফানী (যার সুস্থতা ও সামর্থ ফিরে পাওয়ার আশা নেই) রোযা রাখতে অসমর্থ হলে বা ফিদ্য়া প্রদানেও যদি সক্ষম না হয় তবে সে যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজের অক্ষমতার জন্য মার্জনা চাইতে থাকে। [খাযাইনুল ইরফান ও রদ্দুল মুহতার]

* হায়য ও নেফাস অবস্থায় রমণীদের জন্য রোযা রাখা নিষেধ। তা পরে ক্বাযা করবে।

* কোন নারীর হায়য ও নেফাসজনিত রক্তস্রাব শুরু হওয়া মাত্র তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। অতএব, এ থেকে পবিত্র হওয়ার পর রোযা পালন করবে।

* কোন রমণীর যদি রাতেই হায়য বন্ধ হয় তবে সুবহে সাদিক থেকে সে রোযা পালন করবে।

* কোন রমণীর দশদিনের ভেতর হায়েয বন্ধ হলে তার জন্য গোসলের সময়ও হায়যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই রাতের এমন সময় যদি সে পবিত্র হয় যে, গোসল সমাপন করতে ফজর হয়ে যায় তবে তার জন্য সেদিনের রোযা শুদ্ধ হবে না। এমনভাবে ভোর হওয়ার পরে রক্ত বন্ধ হলেও তার জন্য ওই দিনের রোযা রাখা শুদ্ধ হবে না।

* ক্ষুধা ও পিপাসা যদি এতই তীব্র ও প্রকট আকার ধারণ করে যে, রোযা ভঙ্গ না করলে মৃত্যুর আশঙ্কা বা মানসিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার সংশয় হয় তবে রোযা ভঙ্গ করতে পারে। [আলমগীরী]

* সাপ ও বিষাক্ত কোন কিছুর দংশনে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিলেও রোযা ভঙ্গ করতে পারে। [রদ্দুল মুহতার]

* মুসাফিরের জন্য সফরকালে রোযা রাখা নিজের জন্য এবং সফর সঙ্গীদের জন্য কোন প্রকার বিঘেœর কারণ না হলে রোযা পালন করা উত্তম। বিঘ্ন বা অসুবিধা হলে রোযা না রাখাই উত্তম। [দুররে মুখতার]

* রোযা না রাখার অবকাশ প্রাপ্তরা অর্থাৎ রোযার ক্বাযা পরবর্তী বৎসরের রমযানের আগেই ক্বাযা আদায় করে দেবে। কেননা হাদীস শরীফে এজন্য জোর তাকীদ দিয়ে বলা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী রমযানের রোযা আদায় না করলে তার রোযা কবুলের অযোগ্য হয়ে যায়। [দুররে মুখতার]

* যদি অবকাশ প্রাপ্তগণ তাদের অবকাশকালীন সময়ে মৃত্যু বরণ করে এবং ক্বাযা আদায়ের সময়ই না পায় তাহলে এর বিনিময় স্বরূপ ফিদ্য়া দেয়া ওয়াজিব নয়। এতদসত্ত্বেও তারা অসিয়ত করলে তাদের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে এ অসিয়ত পূর্ণ করা হবে। পক্ষান্তরে, যদি অবকাশের পর মৃত্যুর পূর্বে সময় পাওয়া যায় যাতে সে ক্বাযা করতে পারত তাহলে তার জন্য মৃত্যুকালে এ ফিদ্য়া দান করার অসিয়ত করা ওয়াজিব। মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করলেও ওয়ারিশগণ তাদের পক্ষ থেকে তার ফিদ্য়া আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে।

★ যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় নাঃ

* ভুল বশতঃ পানাহার বা যৌন সম্ভোগ সংঘটিত হলে। কিন্তু রোযার কথা স্মরণ হওয়া মাত্র সেগুলো থেকে বিরত হতে হবে। যদি স্মরণ হওয়া মাত্র বিরত না হয়ে সে কাজে রত থাকে তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কেবল ক্বাযা করবে। [দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]

* কোন রোযাদারকে ভুল বশতঃ পানাহার করতে দেখলে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। কিন্তু যখন উক্ত রোযাদার অতিশয় দুর্বল হয় এবং স্মরণ করানোর ফলে সে ব্যক্তি পানাহার বন্ধ করবে এবং রোযা রাখাও তার অসাধ্য হবে তবে স্মরণ করানো হতে বিরত থাকাই উত্তম। [রদ্দুল মুহতার]

* মাছি বা এ জাতীয় প্রাণী, ধোঁয়া ও ধুলো-বালি গলায় চলে গেলে তাতে রোযা নষ্ট হবে না। যদি উড়ন্ত আটার কনাও অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় ঢুকে যায় তবুও রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে গিললে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

* রোযা রেখে সুরমা বা তেল লাগানো অথবা আতর ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। চোখে সুরমা ব্যবহারের ফলে যদি থুথুতে তার রঙ দেখা যায় এবং কন্ঠনালীতে তার স্বাদও অনুভব হয় তবুও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।

* অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় ধোঁয়া প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা মুখে ধোঁয়া টেনে নিলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযার সাথে সাথে কাফ্ফারাও দিতে হবে।

* রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কিংবা স্বপ্নে কোন পানাহার করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।

* রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করলে, এতে স্বামীর বীর্যপাত না হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। স্ত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকালো কিন্তু স্পর্শ করলো না কিংবা বারবার সেদিকে দৃষ্টিপাত করল এরই ফলে অথবা দীর্ঘক্ষণ যৌনকল্পনার ফলশ্র“তিতে আপনা-আপনি বীর্যপাত হলো, সে ক্ষেত্রে রোযা ভঙ্গ হবে না। [জাওহারাহ্ ও দুররে মুখতার]

* কাঁচা বা শুকনা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজা দূষণীয় নয়। যদি মিসওয়াকের তিক্ত রস বা স্বাদ মুখে অনুভূত হয় তবুও রোযার কোনরূপ ক্ষতি হবে না।

* গোসল করার সময় পানির শীতলতা শরীরে অনুভূত হলেও রোযা ভঙ্গ হবে না। অনুরূপ, কুল্লি করে মুখ থেকে পানি ফেলে দিল কিন্তু এরপর যেটুকু আর্দ্রতা রইল তা থুথুর সাথে গিলে ফেললেও রোযার ক্ষতি হবে না।

* দাঁতে ঔষধ চূর্ণ করতে গিয়ে গলায় তার স্বাদ অনুভূত হল অথবা হাঁড় চোষণ পূর্বক থুথু গিলল কিন্তু হাঁড়ের কোন অংশ কন্ঠনালীতে প্রবেশ করল না, কানে পানি ঢুকল বা খড়কুটো দিয়ে কান পরিষ্কার করতে গিয়ে এবং গায়ে লেগে আসা কানের ময়লা রেখেই বার কয়েকবার তা কানে প্রবেশ করালো, দাঁতের ফাঁকে বা মুখে অতি ক্ষুদ্র কোন দ্রব্য নিজের অজান্তে থেকে গেল যা থুথুর সাথে বেরিয়ে আসার মত, তা বের হয়ে গেল অথবা দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কন্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছল এবং নিচে গেল না, এসব অবস্থায় রোযা নষ্ট হবে না। [দুররে মুখতার ও ফতহুল ক্বদীর]

* কথা বলতে গিয়ে থুথুতে মুখ ভরে উঠলো সেগুলো গিলে ফেলল অথবা মুখের গড়িয়ে পড়া লালা মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই টেনে নিয়ে গিলে ফেলল, নাকের শ্লেষা বা পানি অথবা গলার কফ গিলে ফেলল, এ সবের কারণেও রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে এসব থেকে সতর্ক থাকাই শ্রেয়। [আলমগীরী, দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]

* জিহ্বা দ্বারা লবণের স্বাদ গ্রহণ করে থুথু ফেলে দিল এবং মুখ পরিষ্কার করে নিল, এ অবস্থায় রোযা ভঙ্গ হবে না।

* তিল বা তিল পরিমাণ কোন বস্তু চিবিয়ে থুথুর সাথে গিলে ফেলল এবং তাতে যদি এর স্বাদ অনুভূত হয় তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে অন্যথায় রোযা ঠিক থাকবে। [তফহুল ক্বদীর]

* রোযা অবস্থায় গ্লুকোজ জাতীয় স্যালাইন বা ইনজেকশন কিছু গ্রহণ করলে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে।

★ যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করতে হবেঃ

* সুবহে সাদিক হয়নি ভেবে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগ করেছে কিন্তু পরে জানতে পারলো, তখন সুবহে সাদিক হয়েছিল এ অবস্থায় রোযা রাখবে, তবে ঐ রোযার ক্বাযা করতে হবে।

* সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে সময়ের পূর্বে ইফ্তার করে ফেললে।

* সুবহে সাদিকের পূর্বে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগ রত হলো কিন্তু সুবহে সাদিক হওয়া মাত্রই মুখের খাদ্য বা পানীয় ফেলে দিলনা বা স্ত্রী সম্ভোগ হতে আলাদা হলনা এ অবস্থায় রোযার ক্বাযা করতে হবে।

* ভুলবশতঃ স্ত্রী সম্ভোগ বা পানাহার করল এবং এতে রোযা বিনষ্ট হয়েছে মনে করে স্বেচ্ছায় পানাহার করলো এতেও ক্বাযা করতে হবে।

* নাকের নস্যি টানলে, কানে বা নাকে তেল বা ঔষধ দেয়ায় তা ভিতরে ঢুকলে, মলদ্বার বা স্ত্রী যৌনাঙ্গ দিয়ে পানি, ঔষধ বা তেল প্রবেশ করালে রোযা ভঙ্গ হবে।

* রোযাদারের দাঁত উপড়ানোর পর রক্ত কন্ঠনালীর নিচে পৌঁছালে রোযার ক্বাযা করতে হবে।

* ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি করলে রোযা নষ্ট হয়। অনুরূপ অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়ার পর সামান্য পরিমাণও গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

* খাদ্য বস্তু নয় এমন কিছু যেমন, পাথর, লোহা, মুদ্রা ইত্যাদি যদি গিলে ফেলে তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং ক্বাযা করতে হবে।

* কুলি বা গোসলের সময় রোযার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও কোনভাবে পানি নাক-কান দিয়ে কন্ঠনালীতে কিংবা মগজে প্রবেশ করে তবে রোযার ক্বাযা করতে হবে।

* সাহরীর পর পান মুখে ঘুমিয়ে পড়ে এবং এ অবস্থায় ফজর হয়ে গেলে রোযা ক্বাযা আদায় করতে হবে।

* চিনি বা এ জাতীয় খাদ্য দ্রব্য যা মুখে দিলে গলে যায়, যদি মুখে রাখে এবং থুথু গিলে ফেলে তাহলে রোযার ক্বাযা করতে হবে।

* দাঁতের ফাঁকে চনা পরিমাণ বা তার চাইতেও বড় কোন খাদ্য লেগেছিল, তা খেয়ে ফেলে অথবা এর চাইতে ছোট কণা মুখ হতে বাইরে এনে আবার তা খেয়ে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

* অপরের থুথু খেলেও রোযা নষ্ট হবে। অনুরূপ নিজের থুথু হাতে নিয়ে পুনরায় তা গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হবে।

★ রোযার ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয় ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহঃ

* ইচ্ছাকৃভাবে রোযা অবস্থায় পানাহার বা যৌনমিলন করলে তার উপর ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয় বাধ্যতামূলক।

* এমনিভাবে বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা, বা নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের কারণে রোযা ক্বাযা ও কাফ্ফারা দেয়া আবশ্যক।
* কাঁচা গোস্ত খেলে ক্বাযা ও কাফ্ফারা দিতে হবে। এমনকি যদি তা মৃতের গোস্তও হয়।

* যে ব্যক্তির মাটি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে সে যদি মাটি খায় তবে ক্বাযা কাফ্ফারা দিতে হবে। কিন্তু অভ্যাস বশত না হলে ক্বাযা করলে চলবে। [জাওহারা ও আলমগীরী]

* ঘুমন্ত রোযাদার স্ত্রীর সঙ্গে রোযাদার স্বামী যৌনমিলন করলে উভয়ের রোযাই নষ্ট হবে কিন্তু ক্বাযা ও কাফ্ফারা বাধ্যতামূলক হবে কেবল স্বামীর উপর, স্ত্রী শুধু ক্বাযা করবে।

★ রোযার কাফ্ফারাঃ

এক নাগাড়ে ৬০টি রোযা রাখা। শারীরিক সামর্থ না থাকলে ষাট জন মিসকীন বা অভাবীকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করানো বা তৎপরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

যে সব কারণে রোযা মাকরূহ হয়ঃ

* বিনা প্রয়োজনে কোন কিছুর স্বাদ পরীক্ষা করা বা কোন কিছু চিবানো মাকরূহ।

* মিথ্যা বলা, গীবত (অন্যের দোষ চর্চা), চোগলখোরী, অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা, গালি দেয়া, বেহুদা কথা বলা, কাউকে কষ্ট দেয়া এমনিতেই হারাম ও নাজায়েয। রোযাদারের জন্য এ সমস্ত কাজ কোন মতেই উচিত নয়। এসব কাজ রোযাকে মাকরূহ করে ফেলে।

* রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া, গলাগলি করা বা শরীর স্পর্শ করা মাকরূহ যদি এর ফলে বীর্যপাত কিংবা যৌন মিলনের আশঙ্কা হয়। আর স্ত্রীর ওষ্ঠ চোষা রোযাদারের জন্য সর্বাবস্থায় মাকরূহ। [রদ্দুল মুহতার]

* পবিত্রতা হাসিলে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার করা কিংবা কুল্লি করা ও নাকে বেশী করে পানি দেয়া মাকরূহ। ওযু ও গোসল ব্যতীত অন্য সময় অনাবশ্যক কুল্লি করা বা নাকে পানি দেয়াও মাকরূহ।

* পানিতে বায়ু ত্যাগ করা, মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা প্রভৃতি কাজ রোযাকে মাকরূহ করে ফেলে।
[আলমগীরী]

★ সাহরী ও ইফতারঃ

* সূর্যাস্তের পর পানাহারের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে এবং শেষ রাতে সুবহে সাদিকের আগে রোযার শক্তি যোগানোর জন্য আহার্য গ্রহণ করাকে সাহরী বলে। ইফ্তার ও সাহরী উভয়টাই সুন্নাত ও বরকতময়।

* রোযাদার নিজেও ইফ্তার ও সাহরী গ্রহণ করবে এবং সম্ভব হলে অন্যকেও এতে শরীক করাবে। এতে বিশেষ সওয়াব ও বরকত নিহিত রয়েছে।

★ ইফ্তারঃ

* ইফ্তার করা সুন্নাত। সূর্যাস্তের পর পরই খোরমা বা মিষ্টিজাত দ্রব্য দ্বারা ইফ্তার করা সুন্নাত। অহেতুক বিলম্বে ইফ্তার করা মাকরূহ। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করতে নিষেধ করেছেন। ইফ্তার করার পর এ দু‘আ পাঠ করবে-
আল্লাহুম্মা লাকা সুম্তু ওয়া ‘আলা রিযক্বিকা আফ্তারতু বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আসন্ন মাহে রমজানে আমাদের বেশি বেশি নেক আমল তৌফিক দান করুন। #আমীন

Spread the love

Leave a Comment