শায়েখ পূজায় আসক্ত যুবক-শিক্ষামূলক গল্প

শায়েখ পূজায় আসক্ত যুবক-শিক্ষামূলক গল্প

স্টেশনে পৌঁছাতেই দেখলাম ট্রেন এসে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে মানুষ ছোটাছুটি করছে । কেউ ট্রেন থেকে নেমে বাইরের দিকে যাচ্ছে কেউ বাইরের দিক থেকে এসে ট্রেনে উঠছে । আমি সাইকেলটা গ্যারেজে রেখে দ্রুত গতিতে গিয়ে ট্রেনে উঠলাম । ধীরে ধীরে ট্রেন চলতে শুরু করল ।

জানালার ধারে একটাও সিট খালি নেই । অনেকদূর যেতে হবে জানালার ধারে একটা সিট পেলে বেশি ভালো হতো । এদিক ওদিক তাকিয়ে একটি সিট দেখে বসে পড়লাম । জানালার এক পাশে একজন মধ্যবয়সী লোক (৪০) বসে ছিলেন । আর আরেক পাশে একজন যুবক ছেলে (২৫) । দুজনে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করছিলেন । আমার বয়স তখন ১৯ বছর, ধর্মীয় বিষয়ে তেমন জ্ঞান ছিল না ।

ব্যাগটা ঘাড় থেকে নামিয়ে পাশে রেখে, চোখ দুটো হালকা বন্ধ করে একটু হেলান দিয়ে বসলাম । হঠাৎ একজন হকার, এই যে বাদাম বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো । ছোট থেকেই বাদাম খেতে ভালবাসি তাই ১০ টাকার বাদাম কিনলাম ।

জানালার ধারে বসে থাকা দুইজন ব্যক্তি একের পর এক, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছেন । দুজনেই কোরআন ও হাদিস থেকে বিভিন্ন কথা আলোচনা করছিলেন । কোরআন ও হাদিসের কথা শুনলেই মনটা নরম হয়ে যায় । তাই তাদের কথা শোনার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মালো এবং বাদাম খেতে খেতে আমি মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনতে লাগলাম ।

কিছুক্ষণ পর মধ্যবয়সি লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল যে আমি মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনছি । তখন সে আমাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করল । আমি আমার নাম বলে চুপ করে গেলাম, অতিরিক্ত কোন কথা বললাম না এমনকি তার নামও জিজ্ঞেস করলাম না ।

ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি স্টেশন অতিক্রম করে চলে এসেছি আস্তে আস্তে ট্রেনের মধ্যে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে । সবাই কথা বলছে কারো মুখ বন্ধ নেই। যার যা মনে আসছে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে । আমি এই চেঁচামচির মাঝেও সে দুইজন ব্যক্তির আলোচনার প্রতি আবার মনোযোগ দিলাম ।

এখন মাজহাব সম্পর্কে তাদের আলোচনা চলছে । মধ্য বয়সি ব্যক্তি মাযহাব মানার পক্ষে দলিল দিচ্ছেন । আর যুবক ছেলে মাযহাব মানাকে মূর্খতা বলছেন । দুজনেই ভদ্রতার সঙ্গে নম্রভাবে একে অপরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন । আমার আর বুঝতে বাকি থাকল না যে মধ্যবয়সী লোকটি হলো মাযহাবি (হানফি) এবং যুবক ছেলেটি লা মাযহাবী (আহলে হাদিস) । তাদের আলোচনার ধারাবাহিকতা ঠিক এমন ছিল-

আহলে হাদিস: আমি আগে হানফি ছিলাম এখন আহলে হাদিস হয়েছি ।

হানফি: কেন?

আহলে হাদিস: মাযহাব মানা মানে কোরআন ও হাদিসের বিপক্ষে যাওয়া । কোরআন ও হাদিস থাকতে মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই ।

হানফি: মাযহাব কি কোরআন ও হাদিসের বিপক্ষে?

আহলে হাদিস: আমার তো তাই মনে হয় ।

হানফি: এ ধারণা ভুল । যার মাধ্যমে কোরআন ও হাদিস সহজ ভাবে বুঝে সহজ ভাবে আমল করা যায় তারই নাম মাযহাব । মাযহাব কোরআন ও হাদিস বিরোধী নয়, বরং কোরআন ও হাদিস থেকে বেরিয়ে আসা এক আলো, যা মানুষকে বিভিন্ন জটিল বিষয়ে পথ দেখায় ।

আহলে হাদিস: আমাদের মাঝে পবিত্র কুর’আন ও হাদিস রয়েছে যার মধ্যে সমস্ত বিষয়ে তথ্য রয়েছে। তারপর মাযহাব বলে আর কিছু হয় না । মাযহাব মানা বা তাকলীদ করা গুমরাহী । আমি আহলে হাদিস হয়েছি এবং পরিবারের মানুষদেরও এই পথে নিয়ে আসার চেষ্টায় রয়েছি । কোরআন ও হাদিসের পথেই সহীহ পথ । বাকি সব পথভ্রষ্ট ।

হানফি: মাজহাব সম্পর্কে আপনি কতটা গবেষণা করেছেন যে এ ধরনের ধারণা মনের মধ্যে ধারণ করেছেন?

আহলে হাদিস: আমার কিছু প্রিয় শায়েখ আছে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি । এছাড়া YouTube এবং Facebook এ বড় বড় শায়েখদের মুখে এমনই কথা শুনেছি ।

হানাফি: আপনি কি শায়েখদের তাকলীদ করেন ?

আহলে হাদিস: ছি ছি একি বলছেন ? তাকলীদ করা গুমরাহী আমি কারো তাকলীদ করি না।

হানফি: তাহলে কি শায়েখ পূজা করেন?

আহলে হাদিস: আপনি কিন্তু বাজে কথা বলে যাচ্ছেন । ক্ষমতা থাকলে প্রমাণসহ ভদ্রভাবে আলোচনা করুন নচেৎ চুপ থাকাই ভালো ।

হানাফি: আমি কিন্তু রাগের কোন কথা বলিনি আপনি এমনিতে রেগে যাচ্ছেন । আমি সত্য কথা বলেছি । আপনি বুঝতে ভুল করছেন । আপনি বললেন শায়েখদের কাছ থেকে আপনি মাজহাব সম্পর্কে এই জাতীয় কথা শুনেছেন। আর তা সম্পূর্ণরূপে মেনে নিয়েছেন । যেহেতু আপনি নিজে থেকে গবেষণা করেননি বা সত্য জানার চেষ্টা করেননি শুধুমাত্র শায়েখদের কথার উপর ভরসা করেছেন । এটাই হল শায়েখদের তাকলীদ করা বা সায়েখদের মাযহাব মান । একইভাবে যারা মাযহাব মানে তারাও কিন্তু ইমামদের গবেষণামূল কথা গুলো গ্রহণ করে । বিষয়টা একই । তবে আপনাদের মতে আপনারা করলে ঠিক আর অন্যরা করলে ভুল ।

আহলে হাদিস: আপনি খুব বেশি কথা বলছেন । আমরা শায়েখদের কথা শুনি ঠিক আছে কিন্তু নিজেও কোরআন ও হাদিস পড়তে জানি । অযু, নামাজ, রোজা,হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ইসলামী সমস্ত বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে সমস্ত তথ্য রয়েছে । নিজে থেকে পড়েই বোঝা যায় । এরপর মাযহাব মান অজ্ঞ লোকের পরিচয় ।

হানফি: আপনি কতটা কোরআন ও হাদিস বোঝেন সে বিষয়টা একটু পরে আলোচনা করছি । আচ্ছা বলুন তো যারা কুরআন ও হাদিস পড়তে জানে না তারা কি করবে?

আহলে হাদিস: তারা যোগ্য শায়েখদের কথা শুনবে অথবা নিজে বাংলা অনুবাদ পড়ে শিখবে । যে যেমনভাবে পারবে কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করবে । কোনোভাবেই মাযহাব মানা যাবে না ।

হানফি: শায়েখদের কথামতো চলা, বাংলা অনুবাদ পড়ে অনুবাদকের উপর বিশ্বাস রেখে সঠিক বলে মেনে নেওয়া এটাই তাকলীদ । এটাও এক ধরনের মাযহাব । আপনার বিবেকে তালা লেগে গেছে বলে বুঝতে পারছেন না ।

আহলে হাদিস: দেখুন এভাবে তর্ক করতে গেলে আলোচনা অনেক লম্বা হয়ে যাবে । আমি আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করছি যে, কোরআন ও হাদিসে এমন কোন বিষয় রয়েছে যার জন্য মাযহাব মানতে হবে । পারলে সে বিষয়ে আমাকে কয়েকটি উদাহরণ দিন ?

হানফি: কোরআন ও হাদিস থেকে মাসআলা বের করার ক্ষমতা কি সবার আছে?

আহলে হাদিস: দেখুন আপনি অনেক প্রশ্ন করেছেন কিন্তু উত্তর দিচ্ছেন না । আপনি কয়েকটি উদাহরণ দিন তারপর বাকি আলোচনা করুন ।

হানফি: ঠিক আছে আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি । কোরআন ও হাদিস থেকে সরাসরি আপনাকে এর উত্তর দিতে হবে ।

(১) যে চুরি করবে তার হাত কেটে দিতে হবে । (সূরা ১৩) এ আদেশ রয়েছে । এখন বলুন কতটা পরিমাণ চুরি করলে হাত কাটা যাবে? কেউ যদি গাছ থেকে একটি ফল চুরি করে বা কলম, খাতা, বই ইত্যাদি চুরি করে তাহলে কি তার হাত কেটে দিতে হবে?

(২) আগুনে রান্না করা খাবার খাওয়ার পর ওযু করা এবং অজু না করা, দুই ধরনের হাদিস পাওয়া যায়। আপনি কোনটা মানবেন?

প্রথমে এই দুটি প্রশ্নের উত্তর দিন? তাহলে বুঝবো আপনার ইজতেহাদ করার ক্ষমতা রয়েছে, মাজহাব মানার প্রয়োজন নেই ।

আহলে হাদিস: এর ব্যাখ্যা না দেখে আমি বলতে পারব না । শায়েখগণ এ বিষয়ে কি বলেছেন সেটা দেখতে হবে ।

হানফি: আবার শায়েখদের কথা বলছেন কেন ? শায়খরা যা বলেছে সেটা আপনি মানবেন এটাই তো শায়েখদের তাকলিদ হয়ে গেল। তাই নয় কি?

আহলে হাদিস: দেখুন অতো গভীরে যেতে চাই না । কোরআন ও হাদিস মেনে চলি এবং শিরিক ও বেদাত থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি এটাই যথেষ্ট ।

হানফি: আহলে হাদিস এটা কি বেদআতি দল নয়?

আহলে হাদিস: আপনি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন । ভালো করে আগে হাদিস পড়ুন হাদিসের মধ্যে আহলে হাদিস দলের কথা আছে ।

হানফি: কি আছে, সেটা কি বলতে পারবেন ?

আহলে হাদিস: জি অবশ্যই পারব ।

হানফি: বলুন তাহলে ?

আহলে হাদিস: তিরমিজি ২২১০ নাম্বার হাদিসের শেষ অংশে ইমাম তিরমিজি “قَدْ تَكَلَّمَ فِيهِ بَعْضُ أَهْلِ الْحَدِيثِ” অর্থাৎ ,এই বিষয়ে কিছু আহলে হাদিস বলেছেন’ । এতে আহলে হাদিস নামটা রয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে আহলে হাদিস শব্দ আছে।

হানাফি: اهل البيت “আহলুল বাইত” কোরআন ও হাদিসের মধ্যে রয়েছে তাহলে কি এই নামে একটি দল তৈরি করা সঠিক হবে ?

আহলে হাদিস: কিসের সঙ্গে কিসের উদাহরণ দিচ্ছেন আপনি ?

হানফি: উদাহরণ ঠিকই দিয়েছি । “আহলুল হাদিস” একটি উপাধি যা হাদিস শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জনকারীদের দেওয়া হতো । হাদিসে যেখানে যেখানে আহলুল হাদিস বা আসাবুল হাদিস শব্দ ব্যবহার হয়েছে তার দ্বারা মুহাদ্দিগণকে বোঝানো হয়েছে । “আহলে বাইত” যার দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আত্মীয় ও পরিবারকে বোঝানো হয়েছে । এটাও এক ধরনের উপাধি ।
কোরআন ও হাদিসে শব্দ থাকলেই যে তা দ্বারা দল বানিয়ে নিতে হবে এটা সম্পূর্ণ রুপে মুর্খামি । তারপরও যদি কেউ ইহুদিদের চক্রান্তে পড়ে দল বানিয়ে ফেলে তাহলে সেটা সম্পূর্ণরূপে বেদাতী এবং পথভ্রষ্ট দল বলে গণ্য হবে । সেজন্য আমি বলেছি আহলে হাদিস একটি বেদাতী দল ।

আহলে হাদিস: তাহলে আপনি বলছেন “আহলে সুন্নাত” এটা কি সঠিক দল ?

হানফি: জি অবশ্যই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” সঠিক দল । এরাই হলো একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল ।

আহলে হাদিস: কি করে দলিল ছাড়া এত বড় কথা বলতে পারলেন?

হানাফি: অবশ্যই দলিল রয়েছে ।

আহলে হাদিস: কি দলিল রয়েছে আপনার কাছে বলুন একটু শুনি?

ফানফি: প্রথম কথা হল সব হাদিসের উপর আমল করা যায় না তবে সব সুন্নাতের উপর আমল করা যায় । ফলে “আহলে সুন্নাত” হাওয়াটা বিবেকের কাছে প্রমাণিত । এছাড়া হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে –
নবী (সাঃ) বলেছেন,
আর নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ছিল ৭২ দলে বিভক্ত। আর আমার উম্মত হবে ৭৩ দলে বিভক্ত। এই সব দলই হবে জাহান্নামী একটি দল ছাড়া। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন-সেটি কোন দল? নবীজী (সাঃ) বললেন-যারা আমার ও আমার সাহাবাদের মত ও পথ অনুসরণ করবে।
{সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৪১)

সুন্নাত এর অর্থই হলো তারিকা, রীতিনীতি, মত ও পথ অনুসরণ করা । হাদিসের মধ্যে সাহাবাদের অনুসরণের কথাও বলা হয়েছে ।
তাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” বলা হয়ে থাকে । হাদিসের মধ্যে যাদেরকে একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল বলা হয়েছে ।

আহলে হাদিস: আপনি একটি কথা বলেছেন সব হাদিসের উপর আমল করা যায় না কিন্তু সব সুন্নাতের উপর আমল করা যায় । দয়া করে জানাবেন এমন কোন হাদিস আছে যার উপর আমল করা যায় না?

হানফি: এমন বহু হাদিস রয়েছে যার উপর আমল করা যায় না উদাহরণস্বরূপ একটি হাদিসের ভাব হল – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ১৩ জন স্ত্রীর ছিলেন । এটা হাদিস । আপনি কি এর উপর আমল করতে পারবেন?

আহলে হাদিস: চুপ (তিনি কোন কথা বললেন না)

হানফি: আপনি বলুন এমন কোন সুন্নত আছে যা আমল করা যায় না?

আহলে হাদিস: আমার সেটা জানা নাই।

হানফি: আপনি জানার চেষ্টা করলেও পাবেন না। কারণ এমন হতেই পারে না ।

আহলে হাদিস: সুন্নাত ও হাদিসের মধ্যে কি কোন পার্থক রয়েছে?

হানাফি: জি অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে । তার মধ্যে একটি হলো, প্রত্যেক হাদিসের উপর আমল করা যায় না কিন্তু প্রত্যেক সুন্নত আমলযোগ্য ।

আহলে হাদিস: সবকিছুই যখন কোরআন ও হাদিসে রয়েছে তাহলে কেন মাযহাব মানেন?

হানাফি: আপনি কি কোরআন ও হাদিসের সব কিছু বোঝেন?

আহলে হাদিস: সবকিছু বোঝে এমন আর কে আছে ?

হানাফি: কোন মাসআলা কোরআন ও হাদিসে না পেলে কি করেন?

আহলে হাদিস: সমস্যা হলে শায়েখদের জিজ্ঞাসা করে নেই। তারা একটা সমাধান বের করে দেন ।

হানাফি: প্রিয় ভাই ঘুরেফিরে সে আপনি শায়েখদের তাকলীদ করছেন । মনে রাখবেন এটাও কিন্তু মাজহাব মানা হচ্ছে । আপনি সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না তাই শায়েখদের জিজ্ঞাসা করছেন । আপনার শায়েখ সঠিক বলল, নাকি ভুল বলল বোঝার মত শক্তি আপনার নেই। এটা কি অন্ধ তাকলীদ হলো না ?

কোরআন ও হাদিস জ্ঞানের সমুদ্র । সাধারণ মাওলানা ও মুফতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সেইখান থেকে জটিল বিষয়ের সমাধান দিয়ে জ্ঞান বের করা অসম্ভব । তাই ইমামদের গবেষণা ও মতামত নেওয়া হয়ে থাকে । মাজহাব কোন ভাবেই কোরআন ও হাদিসের বিপক্ষে যায় না বরং কোরআন ও হাদিসের আলোতেই হয়ে থাকে ।
আপনি যে শায়েখের তাকলীদ করছেন এমন হাজার হাজার শায়েখ , ইমামদের পায়ের ধুলোর যোগ্য হতে পারবে না । মনে রাখবেন আপনাদের মত সাধারন যুবক ভাইদের ভুল বুঝিয়ে পথভ্রষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ।

আহলে হাদিস: তাহলে আমাদের কি করা উচিত ?

হানাফি: আমাদের ধর্ম একমাত্র “ইসলাম” হবে, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” দল হবে ।

আহলে হাদিস: আর মাযহাব?

হানাফি: যেকোনো জটিল সমস্যার সম্মুখীন হলে মাযহাবের সাহায্য নেওয়া হয় । আবারো বলছি মাজহাব কোরআন ও হাদিসের বিপক্ষে নয় বরং কোরআন ও হাদিস কে সহজ ভাবে বোঝার নাম ।

আহলে হাদিস: শায়েখগণ বলেছেন মাযহাব মানা শিরক ।

হানফি: আপনার জ্ঞানচক্ষুতে তালা পড়ে গেছে । সত্যিই আপনি শায়েখ পূজাতে আসক্ত ।

দুজনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক চলছিল । হঠাৎ দেখি ট্রেন আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছে । আমি ট্রেন থেকে নেমে চলতে শুরু করলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছিল তা অজানাই রয়ে গেল । আমি মাসুম বিন আব্দুল হাদি ১৯ বছর পেরিয়ে এখন ২৬ বছর বয়সে পদার্পণ করেছি, সেই দিনের কথা আজও মনে আছে। বর্তমানে ইসলাম সম্পর্কে খুব গভীরভাবে জানার জন্য বিভিন্ন বই পড়ে থাকি । আহলে হাদিসের শায়েখরা আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি । সেই ৪০ বছর বয়সে লোকের কথা ও যুক্তি গুলো তাদের সামনে তুলে ধরলে লেজ গুটিয়ে পালায় । আমি জানিনা সেই লোক কোন মাওলানা ছিলেন নাকি সাধারণ শিক্ষিত মানুষ ছিলেন । তিনি যেই হোন না কেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন । আজ বর্তমান যুগে বিশেষ করে জেনারেল শিক্ষিত ছেলেরা কথিত বেদাতি আহলে হাদিস দলের চক্রান্তের শিকার ।

কথা গুলো গুছিয়ে আপনাকে বললাম। যেহেতু আপনি বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেন । আমার এ কথাগুলো দয়া করে লিখবেন। যাতে বর্তমান যুবকদের কাছে পৌঁছে যায় এবং তারা চক্রান্তের জাল থেকে দূরে থাকতে পারে ।

গল্পের লেখক
আব্দুল আজিজ কাদরী

এবার পড়ুন

Spread the love

Leave a Comment