৫টি প্রাণী হত্যা করা কঠিন ভাবে নিষেধ

৫টি প্রাণী হত্যা করা কঠিন ভাবে নিষেধ

মহান আল্লাহ পৃথিবীর সব প্রাণীকেই কোনো না কোনো বিশেষ কারণে সৃষ্টি করেছেন। কিছু প্রাণী এমন আছে, যেগুলো প্রকৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন রাসুল (ﷺ)।

৫টি প্রাণী হত্যা করা নিষেধঃ

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ৪টি প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছেনঃ পিপীলিকা, মৌমাছি, হুদহুদ পাখি ও সূরাদ (এক প্রকার শিকারী পাখি)। (আবু দাউদ ৫২৬৭,আহমাদ ৩০৫৭) অন্য একটা হাদিসে ব্যাঙ এর কথাও উল্লেখ আছে ।

কেন এই প্রাণীগুলো হত্যা করা নিষেধ ?

(১) পিঁপড়া

পিঁপড়া কেন মারা যাবে না—এর কারণ হলো, পিঁপড়ারা আল্লাহর তাসবিহ পড়ে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, কোনো এক নবীকে একটি পিঁপড়া দংশন করলে তিনি সে পিঁপড়ার বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ওহি প্রেরণ করে বলেন, তোমাকে তো একটা পিঁপড়া দংশন করেছে। আর তুমি এমন এক জাতিকে ধ্বংস করলে যারা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করত। (নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৫৮)।

তবে যেহেতু পিঁপড়া আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে তাই অকারনে পিঁপড়া মারা নিষেধ । তবে যদি কোনো পিঁপড়া খুব বেশি ক্ষতি করে, তবে তাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

রাসুল (ﷺ) এর সুন্নাত মোতাবেক খাবারদাবার ঠিকমতো ঢেকে রাখলে পিঁপড়ার আক্রমণ করার আশঙ্কা কমে যায়। কোন মিষ্টি খাবার পড়ে গেলে তা ভালোভাবে মুছে নিতে হবে এরপরেও রান্নাঘরের কেবিনেটে পিঁপড়ার আক্রমণ হলে সেখানে দারচিনি গুঁড়া কিংবা শুকনা মরিচ রেখে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে সেখানে পিঁপড়ারা আক্রমণ করবে না ইনশাআল্লাহ।

(২) মৌমাছি

মৌমাছি মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি। যাকে আরবিতে বলা হয় ‘নাহল’। পবিত্র কোরআনে ‘নাহল’ নামে একটি সুরাই অবতীর্ণ হয়েছে।

মৌমাছি আমাদের জন্য উত্কৃষ্ট মধু আহরণ করে। প্রিয় নবী (ﷺ) এই মধু খেতে খুব ভালোবাসতেন । (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ১২১)।

মৌমাছি খুবই পরিশ্রমী পতঙ্গ। ফুলের রস মুখে নিয়ে, সেটা থেকে জলীয় অংশ দূর করে শতভাগ ভেজালমুক্ত এক ফোঁটা মধু তৈরি করতে যে শ্রম ও সময় ব্যয় করে সেটা বিস্ময়কর!

এক পাউন্ড মধু বানাতে ৫৫০ মৌমাছিকে প্রায় ২০ লাখ ফুলে ভ্রমণ করতে হয়! আবার এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে একটি কর্মী মৌমাছিকে প্রায় ১৪.৫ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়! যা দিয়ে পৃথিবীকে তিনবার প্রদক্ষিণ করা সম্ভব।

সায়েন্স টাইমসের মতে, পৃথিবীতে যত রকমের চাষ মানুষ করে থাকে তার ৭০ শতাংশ নির্ভর করে মৌমাছির ওপর। যদি মৌমাছি ফুলে ফুলে উড়ে মধু আহরণ না করে, তাহলে তাদের গায়ে ফুলের পরাগরেণু লাগবে না। সেই রেণু অন্য ফুলের গায়ে না লাগলে হবে না পরাগায়ণ। খুব কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে আমাদের চেনাজানা কোনো গাছের অস্তিত্ব আর থাকবে না। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘মৌমাছি যদি না থাকে, তাহলে মানুষ নিশ্চিহ্ন হতে সময় লাগবে চার বছর।

মৌমাছি আল্লাহ এক বড় নেয়ামত যা মানুষের উপকারের জন্য আল্লাহতালা বানিয়েছে, সেজন্য নবী (ﷺ) মৌমাছি হত্যা করতে নিষেধ করেছেন ।

তবে যদি মৌমাছি কাউকে আক্রমণ করে বা মৌমাছির ঝাঁক কাউকে ঘিরে ফেলে এমত অবস্থায় যদি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে মৌমাছি হত্যা করে নিজের প্রাণ বাঁচানো যাব । কিন্তু বিনা কারণে কোনভাবেই মৌমাছি মারা জায়েজ নেই ।

(৩) হুদহুদ পাখি

ইংরেজিতে একে হুপো বা হুপি বলে ডাকা হয়। আরবি ও উর্দুতে একে ডাকা হয় হুদহুদ নামে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ, এমনকি ইউরোপের কোনো কোনো দেশেও এর দেখা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতেও মাঝেমধ্যে এই পাখির দেখা পাওয়া যায়। পাখিটির শরীর বাদামি এবং ডানা ও লেজে সাদা-কালো দাগ রয়েছে। মাথায় আছে রাজমুকুটের মতো সুন্দর একটি ঝুঁটি। এরা ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের জন্য উপকারী পাখি হিসেবে পরিচিত। তাই অনেক দেশে আইন করে এদের সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নবী (ﷺ) এ পাখি হত্যা করতে নিষেধ করেছেন ।

(৪) শিকারি পাখি

অনেকের মতে এটি শ্রাইক পাখি কারো মতে বাজপাখি।

এরা ঠিক মাংসের দোকানের মতো শিকার কাঁটাজাতীয় জিনিসে গেঁথে রাখে। মাটিতে থাকা বা উড়ন্ত পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ছোট গিরগিটি, টিকটিকি, নির্বিষ সাপের বাচ্চা, ইঁদুরছানা ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে। এ ছাড়া তাদের খাবার তালিকায় রয়েছে তেলাপোকা ও ঝিঁঝিপোকা। যার প্রতিটি জিনিসই মানুষের ঘর ও ফসলের জন্য ক্ষতিকারক। আর এই শিকারি পাখি মানুষের অজান্তেই অনেক উপকার করে থাকে । তাই এই পাখি হত্যা করা নিষেধ ।

(৫) ব্যাঙ

একজন ডাক্তার নবী ﷺ কে ব্যাঙ কে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন তখন নবী ﷺ তাকে ব্যাঙ হত্যা করতে নিষেধ করেন । (আবু দাউদ)

ব্যাঙ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাঙ সহায়তা করে। ফসলের পোকা মাকড় খেয়ে ফসলের সুরক্ষা করে। ফলে জমিতে অতিরিক্ত কিটনাশক দিতে হয়না। তাই জমির উর্বরতা ঠিক থাকে এবং ফসলের ফলন বাড়ে।

ব্যাঙ কোন ক্ষতি করে না সুধু উপকার করে, কোন বাড়িতে কুনো ব্যাঙ থাকলে নাকি? সে বাড়িতে সাপ আসে না এটাও অনেকে বলে থাকেন তবে এই কথার সত্যতা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই ।

এ সমস্ত প্রাণী হত্যা করা কঠোরভাবে নিষেধ তবে যদি এর মধ্যে কোন প্রাণীর ক্ষতি করে বা ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে বিছানায় উঠে যায় তাহলে তা বিতাড়িত করার কৌশল অবলম্বন করতে হবে, অকারনে হত্যা করা যাবে না ।

আব্দুল আজিজ কাদরী

এবার পুড়ুন

Spread the love

Leave a Comment