উম্মে মাবাদের ঘটনা

উম্মে মাবাদের ঘটনা

মদিনার পথে দানশীল আবু মা’বাদের বাসস্থান। তার স্ত্রীর নাম উম্মে ম’বাদ । ছোট তাঁবু আর এক পাল মেষ নিয়ে তার সংসার। ক্লান্ত খুদার্থ পথিকদের তাঁরা আশ্রয় দেন। সাধ্যমত খাদ্য ও পানীয় দিয়ে পথিকদের সেবা করেন তাঁরা।

মহানবী (সাঃ) এর কাফিলা গিয়ে সেখানে হাজির হলো। আবু মা’বাদ তখন গৃহে ছিলেন না, মেষ চরাতে গেছেন। আবু মা’বাদের স্ত্রী উম্মে মা’বাদকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিছু খাদ্য-পানীয় কিনতে পাওয়া যাবে কিনা।

উম্মে মা’বাদ খুবই দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, “না, কোন খাবার নেই। থাকলে মূল্য দিতে হতো না। আমি নিজেই ওগুলো হাজির করতাম আপনাদের কাছে। এখন আমার কাছে দেবার মত কিছুই নাই । উম্মে মা’বাদের তাবুর পাশে দুর্বল একটা ছাগী শুয়ে ছিল। মহানবী(সা) উম্মে মা’বাদকে বললেন, ঐ ছাগী দোহন করে দুধ নেয়া যেতে পারে কি?

উম্মে মা’বাদ বড় আনন্দের সাথেই বললেন, ‘ছাগীটি শীর্ণ দুর্বল বলে পালের সাথে জায়নি,তার স্তনে দুধ নেই। যদি স্তনে তার দুধ থাকে তাহলে নিতে পারেন।’ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিসমিল্লাহ বলে দুধ দোহন শুরু করলেন। যে দুধ পাওয়া গেল তা কাফিলার সদস্যদের পরিতৃপ্তির জন্য যথেষ্ট হলো।

মহানবী (সাঃ) সহ কাফিলার সদস্যগণ নিজেরা খেয়ে কিছুটা গৃহকর্তার জন্য রেখে দিলেন। প্রয়োজন সেরে উম্মে মা’বাদকে ধন্যবাদ দিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাফেলা আবার মদিনার পথে যাত্রা করল।

মহানবী (সাঃ) চলে যাবার কিছুক্ষণ পরই আবু মা’বাদ মেষ পাল নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তিনি বাটিতে টাটকা দুধ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন কোথা থেকে এলো এই দুধ। উম্মে মা’বাদ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনের কথথা জানালেন এবং দূর্বল ছাগী থেকে দুধ দোহনসহ সব ঘটনা খুলে বললেন।

এর পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বর্ণনা দিলেন উম্মে মা’বাদ। বেদুঈন জীবনের মুক্ত মন নিয়ে সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যে বর্ণনা উম্মে মা’বাদ দিয়েছিলেন তা হলো- “তাঁর উজ্জ্বল বদনকান্তি, প্রফুল্ল মুখশ্রী, অতি ভদ্র ও নম্র ব্যবহার,সুন্দর, সুদর্শন । কেশ দীর্ঘ ঘনসন্নিবেশিত। তাঁর স্বর গম্ভীর। গ্রিবা উচ্চ। নয়নযুগলে যেন প্রকৃতি নিজেই কাজল দিয়ে রেখেছে। চোখের পুতুলি দুইটি সদা উজ্জ্বল। ভ্রূযুগল নাতিসূক্ষ্ম, পরস্পর সংযোজিত য়ে আছে।

কথা বললে মনপ্রাণ মোহিত হয়ে যায়। দূর থেকে দেখলে কেমন মোহন কেমন মনোমুগ্ধকর সে রূপরাশি, নিকটে এলে কত মধুর কত সুন্দর তাঁর প্রকৃতি।

ভাষা অতি মিষ্ট , তাতে ত্রুটি নেই, অতিরিক্ততা নেই, বাক্যগুলো যেন মুক্তার হার। তাঁর দেহ এত খর্ব নহে এবং এমন দীর্ঘ নহে যা দেখতে বিরক্তি বোধ করে, তিনি নাতিদীর্ঘ নাতিখর্ব (তিনি মাঝারি আকৃতির। সে মুখশ্রী বড় সুন্দর, বড় সুদর্শন ও সুমহান। তাঁর সঙ্গীরা সর্বদাই তাঁকে বেষ্টন করে থাকে। তাঁরা তাঁর কথা আগ্রহ সহকারে শ্রবণ করে এবং তাঁর আদেশ উৎফুল্ল চিত্তে পালন করে।”

স্ত্রীর মুখে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর এই বর্ণনা শুনে আবু মা’বাদ উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলেন, “আল্লাহর শপথ, ইনি নিশ্চয়ই কুরাইশদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে আমরা সত্য-মিথ্যা অনেক কিছু শ্রবণ করেছি। হায় আমার অদৃষ্ট, আমি অনুপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত থাকলে আমি তাঁর আশ্রয় নিতাম, আমি বলছি, সুযোগ পেলে এখনও তা করবো।”

বিভিন্ন হাদিসে সার সংক্ষেপ তুরে ধরা হলো ।

Spread the love

Leave a Comment