দাউদ নবীর উম্মত কেন বানরে পরিণত হয়েছিল?

দাউদ নবীর উম্মত কেন বানরে পরিণত হয়েছিল? এই বিষয়ে আজকের আলোচনা । দাউদ (আঃ) এর কওম কঠিন শাস্তি পেয়ে ছিল । আজ সেই বিষয়ে আলোচনা ।

সমুদ্রের তীরবর্তী ‘আইলাহ’ অঞ্চলে বসবাস করতো তারা, তাদের প্রধান পেশা ছিল মৎস্যশিকার। মাছ শিকার ছিল তাদের জীবিকার মূল উৎস । হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন তাদের নবী । সময়টা ছিল ১০১৩-৯৮৩ খ্রিস্টপূর্ব ।

পুরো সপ্তাহ তারা মাছ শিকার সহ অন্যান্য কাজ করত শুধুমাত্র শনিবার মাছ শিকার বা অন্যান্য কাজকর্ম নিষেধ ছিল কারণ এটা ছিল তাদের জন্য ইবাদতের দিন। শনিবারের দিন মাছ শিকার করা কঠিনভাবে নিষেধ ছিল ।

প্রথম প্রথম তারা আল্লাহর হুকুম মান্য করে চলত। তবে একদিন একজন দুষ্টপ্রকৃতির লোক ফন্দি বের করল।শনিবারে যেসব মাছ তীরবর্তী হয়, সেগুলোকে সুতো দিয়ে আটকে আটকে রেখে রোবিবার ধরে নিয়ে আসে।

সে এত বেশি মাছ বাড়িতে নিয়ে আসত যে অন্যরা তা দেখে অবাক হয়ে যায়। লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘আমি তো শনিবার নয়, রোববারে মাছ শিকার করেছি।’

অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার এই কৌশল জানাজানি হয়ে যায় এবং আরও কিছু লোক এই কৌশলে মাছ ধরা শুরু করে।

কেউ কেউ সমুদ্রের তীরে গর্ত খনন করে ঝোপ-ঝাড় দিয়ে জাল পেতে রাখে। শনিবার মাছগুলো গর্তের ভেতর জমা হলে তারা সেটার মুখ বন্ধ করে দেয় আর রোবিবার মাছগুলো ধরে নিয়ে আসে।

তবে আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) এর খাঁটি অনুসারী ও সৎ লোকরা তাদের এ অন্যায় কাজে বাধা দিতেন এবং মাছ শিকার করতে নিষেধ করতেন।

তবে তারা নিষেধ অমান্য করত আর বলত ‘আমরা তো শনিবার দিন শিকারই করি না; আমরা মাছ শিকার করি রবিবারের দিন।’

অবশেষে ঈমানদাররা অপারগ হয়ে সেসব কৌশলী লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন এবং তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যান।

তারা গ্রামের মাঝখানে একটি দেয়াল তৈরি করে দেন। সৎ লোকেরা একটি দরজা দিয়ে যাতায়াত করতেন আর ওয়াসাধু সীমালংঘনকারী লোকেরা অন্য দরজা দিয়ে যাতায়াত করত।

এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হয়। এক দিন হঠাৎ এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। রাত শেষে ভোর পেরিয়ে বেলা বেড়ে গেলেও সেই লোকেরা ঘরের দরজা খুলছে না। ভেতর থেকেও তাদের কোনো সাড়া-শব্দ নেই।

অনেক্ষণ কেটে যাওয়ার পর খোঁজ নিতে গেলে এক বিস্ময়কর চিত্র দেখা যায়। দেখা যায় সেসব পরিবারের সব নারী-পুরুষ-শিশু বানরে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। তাদের লেজও গজিয়েছে। তাদের সবাইকে চেনা যাচ্ছিল, সে অমুক পুরুষ, সে অমুক নারী এবং এ অমুক শিশু ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,”তোমরা তো তাদের ভালোভাবে জানো, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও। অতঃপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ হিসেবে রেখে দিলাম।” (সুরা বাকারা : ৬৫-৬৬)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায়, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে ইবনে কাসির সহ প্রায় সকল তাফসীর গ্রন্থেই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে ।

তবে বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাসকারী বানর তাদের উত্তরসূরি নয়। হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক দিন কয়েকজন সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন হে রাসুল! এ যুগের বানর-শূকরগুলো কি সেই আকৃতি পরিবর্তিত ইহুদি সম্প্রদায়ের উত্তরসূরি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন, কিংবা তাদের ওপরে আকৃতি পরিবর্তনের আজাব নাজিল করেন, তখন তাদের বংশধারা থাকে না। আর বানর-শূকর পৃথিবীতে তাদের আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’ (মুসলিম : ৬৭৭০)।

তথ্য সংগ্রহ:- আব্দুল আজিজ কাদেরী

ইউটিউব চ্যানেল লিংক-

বনী ইসরাঈলের ৩ব্যক্তি ও ফেরেস্তার ঘটনা

Spread the love

Leave a Comment