ফজরের নামাজ দেরি করে পড়লে কি হয়?

ফজরের নামাজ দেরি করে পড়াটা, বর্তমান সময়ে, একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। রাত্রিতে দেরি করে ঘুমিয়ে, সকালবেলায় দেরি করে উঠে, ৮টা ৯টা বা ১০ টার সময় ফজরের নামাজ আদায় করে, যুব নামাজীদের একটি অংশ। এমনিতেই মুসলিম সমাজের অধিকাংশ মানুষই নামাজ আদায় করেনা, তারপরেও মুসলিম যুবসমাজের যারা নামাজ আদায় করে, তাদের অধিকাংশই আবার ফজরের নামাজ দেরি করে আদায় করে। রাত্রিতে অবাঞ্ছিত কিছু কাজে সময় নষ্ট করে, যেমন ইউটিউব ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ, অথবা গেম খেলে খেলে সময় নষ্ট করে, আর সকালবেলায় দেরি করে নামাজ আদায় করে।

আবার হতদরিদ্র মুসলিম সমাজের মধ্যে, বড়লোক টাইপের কিছু বয়স্ক মুসল্লি আছে, যারা ভোগবিলাসে নিজেকে এতই ব্যস্ত রেখেছে যে, জীবনের শেষ বয়সেও ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনি। তারা আবার অহংকারের সাথে, দাম্ভিকতা দেখিয়ে, গর্ভ করে বন্ধুদের সামনে বলে, আমি সকালবেলায় তাড়াতাড়ি উঠতে পারিনা তো, এইজন্য ফজরের নামাজটা ওই আটটা নটা দশটার দিকে আদায় করি। ব্যবসা বাণিজ্যের হিসাব, জমি জায়গার হিসাব, আমি মাস্টার ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো, খাতা পত্রের হিসাব করতে করতে রাত্রি হয়ে যায়। যার কারণে ফজরের নামাজটা আমি কোনদিনই জামাতে আদায় করতে পারি না।
কেউ আবার কাজের দোহাই দিয়ে, রাত্রিতে ডিউটির দোহাই দিয়ে, বছরের প্রত্যেকটা দিন ফজর নামাজ দেরি করে আদায় করে।

প্রিয় পাঠক, নামাজ ইচ্ছেমত যেকোন সময়ে আদায় করা চলবে না, বরং নামাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا ‘مَّوْقُوتًا ‘নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের উপর ফরয, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।’ (সূরা নিসা ১০৩) । আর ফজরের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় হল– সুবহে সাদিক হতে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত। সুতরাং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই সময়ের মধ্যে আদায় না করলে তার কবিরা গুনাহ হবে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী মানুষ একটি হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে বলে থাকে যে, ফজরের নামাজের জন্য কোন জোরজবস্তি নেই, বরং যখনই ঘুম ভাঙ্গবে তখনই ফজরের নামাজ আদায় করতে পারবে। এই হাদীসের ভিত্তিতে তারা রাত্রিতে দেরি করে ঘুমিয়ে, সকালবেলায় দেরি করে ওঠে ফজরের নামাজ আদায় করে। তারা যে হাদীসটির ভুল ব্যাখ্যা করে সেই হাদীসটি হল :

: من نام عن صلاة أو نسيها فليصلها إذا ذكرها، فإن ذلك وقتها
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন ব্যক্তি যদি ঘুমিয়ে যাই অথবা ভুলে যায়, তো যখনই তার স্বরন পড়বে তখনই নামাজ আদায় করবে, এটাই হলো তার নামাজের সময়।

এই হাদিসের দোহাই দিয়ে যারা ফতোয়া জারি করে যে, দেরি করে ফজরের নামাজ আদায় করাতে কোন দোষ নেই, তাদের এটাও জেনে রাখা উচিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় কেবলমাত্র একদিন ফজরের নামাজ দেরি করে পড়েছিলেন। সেটাও আবার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আগমনের সময়। বাড়িতে ঘুমিয়ে থেকে ফজর নামাজ দেরি করে পড়েছেন এমন দলীল, হাদীসের কোন কিতাবে পাওয়া যাবে না।
বরং আল্লাহপাক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে এই ঘটনা সংঘটনের মধ্য দিয়ে, তার উম্মতের জন্য একটু অবকাশ দিয়েছেন যে, একান্তই যদি কোনদিন ফজরের নামাজ আদায় করতে সক্ষম না হও, তাহলে তোমরা দেরি করে হলেও আদায় করে নেবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ছুটে যাওয়া নামায কোনদিন পুরোপুরি ছেড়ে দেবে না।

এমনিতেই ফজরের নামাজের খুবই গুরুত্ব রয়েছে, যেমন হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন : মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশা নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানতো, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে হলেও অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হত।
বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১ তিরমিযি ২১৭ নাসায়ি ৮৪৮ আবু দাউদ ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৯ দারেমি ১২১২, ১২৭৪)
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, ফজর ও এশার নামাজ হলো মোনাফেকদের জন্য খুব ভারী একটি এবাদত। সুতরাং যারা প্রতিদিন ফজরের নামাজ দেরি করে আদায় করে, তাদের অন্তর যে নিফাক বা মোনাফেকি দ্বারা আক্রান্ত এর মধ্যে কোন সন্দেহ আছে কি ?।।

এমনিতে যারা নামাজ আদায় করে, কিন্তু গুরুত্বের সাথে আদায় করেনা, নামাজ নিয়ে আলসেমি করে, যখন ইচ্ছা ছেড়ে ছেড়ে নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য পবিত্র কোরআনে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে : মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন : – : فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ ۝ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ۝ [ الماعون
দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা তাদের নামাজের ক্ষেত্রে উদাসীন। (সূরা আল মাউন)। সুতরাং কোন নামাজের ক্ষেত্রেই উদাসীনতা দেখানো চলবে না।

অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে
আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম ৬৩৪, নাসায়ি ৪৭১, ৪৮৭, আবু দাউদ ৪২৭, আহমদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩)

তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত, গুরুত্বের সাথে নামাজ আদায় করা, বিশেষ করে ফজর ও আসর নামাজের নামাজের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আজকে এইসব বিষয় গুলি না জানার কারণে, অনেক যুব মুসল্লী, এমনকি বৃদ্ধ মুসল্লিরাও ফজরের নামাজ দেরি কর আদায় করছে। অতএব ভিডিওটি বেশি বেশি শেয়ার করুন, হয়তো ঘুনে ধরা মুসলিম সমাজ একটু হলেও সজাগ হবে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে যথাসময়ে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন।।

আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا ‘مَّوْقُوتًا ‘নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।’ (সূরা নিসা ১০৩) আর ফজরের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় হল– সুবহে সাদিক হতে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত। সুতরাং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই সময়ের মধ্যে আদায় না করলে তার কবিরা গুনাহ হবে।

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً

আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১ তিরমিযি ২১৭ নাসায়ি ৮৪৮ আবু দাউদ ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৯ দারেমি ১২১২, ১২৭৪)

অপর হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبي زُهَيرٍ عُمَارَةَ بنِ رُؤَيْبَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا» يعني: الفَجْرَ والعَصْرَ

আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম ৬৩৪, নাসায়ি ৪৭১, ৪৮৭, আবু দাউদ ৪২৭, আহমদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩)

লেখেছেন

মৌলানা-আব্দুর রউফ

Spread the love

Leave a Comment