মুর্দাকে কবরে দাফনের পর তালক্বীন করা

মুর্দাকে কবরে দাফনের পর তালক্বীন করা

প্রশ্নঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিয়ম অনুযায়ী মুর্দাকে কবরে দাফন করার পর কবর তালক্বীন করা হয়। এই তালক্বীনের নিয়ম কোন ধরণের হবে? এটা কি সবার উপস্থিতিতে যিয়ারতের আগে নাকি সবাই যিয়ারত করে চলে যাওয়ার পরে। এবং কবর তালক্বীনের সময় কোন্‌ ধরণের দু’আ পড়তে হয় জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তরঃ কবর তলক্বীনের ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফের প্রমাণ পাওয়া যায়। রসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

اذ مات احدکم من اخوانکم فسویتم التراب علی قبرہ فلیقم احدکم علی رأس قبرہٖ ثم لیقل یا فلان بن فلانۃ فانہ یسمعہ ثم یقول یا فلان بن فلانۃ فانہ یستوی قاعدًا ثم یقول یا فلان بن فلانۃ فانہ یقول ارشدنا یرحمک اللہ ولکن لاتشعرون فلیقل اذکر ما خرجت علیہ من الدنیا شھادۃ ان لّا الٰہ الا اللہ وان محمدًا عبدہٗ ورسولہٗ وانک رضیت باللّٰہ ربًا وّبالاسلام دینًا وّبمحمّدٍ نبیًا وّبالقراٰن اماما فان منکرا و نکیرًا یأخذ کل واحد منھما بیدصاحبہ ویقول انطلق بنا ماقعدنا عند من لقن حجتہ۔ وقال رجل یارسول اللہ فان لم یعرف امہ قال فینسبہ الی امہ حواء یقول یا فلان بن حوٓاء (رواہ الطّبرانی)

অর্থাৎ- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- তোমাদের কোন মুসলমান ভাই মারা গেলে তাকে কবরস্থ করে উপরে মাটি ঠিকঠাক করে দিয়ে তোমাদের কেউ যেন তার শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে এভাবে আহবান করে বলে, হে অমুক মহিলার পুত্র অমুক! (লোকটি মায়ের নাম এবং তার নাম ধরে ডাক দেবে)। তখন মৃত লোকটি ঐ আওয়াজ শুনতে পাবে। একই ভাবে দ্বিতীয়বার ডাক দিবে তখন সে সোজা হয়ে বসবে। তারপর আবার ডাক দিলে সে কবরের ভিতর থেকে বলবে আমাকে কিছু উপদেশ দিন; আল্লাহ্‌ তায়ালা আপনাকে রহম করুন। নবীজি এরশাদ করেন- যদিও তোমরা তা বুঝতে পারবে না। অতঃপর শিয়রের কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তি যেন বলে- তুমি দুনিয়া হতে যে কালেমায়ে শাহাদাত নিয়ে বিদায় নিয়েছ তা স্মরণ করো। আর স্মরণ করো এ কথা যে, আমি রব হিসেবে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামের উপরে রাজি; নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সন্তুষ্ট এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে পবিত্র কুরআনের উপর সন্তুষ্ট।

নবীজি এরশাদ করেন- তালক্বীনের পর মুনকার-নাকীর ফেরেশ্‌তাদ্বয় একে অপরের হাত ধরে বলাবলি করে চলো। যাকে নাজাতের দলিল শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার কাছে বসে থেকে লাভ নেই। জনৈক সাহাবী আরজ করলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ্‌! যদি মৃত ব্যক্তির মায়ের নাম জানা না থাকে তবে, কার পুত্র বলবো? হুজূর বললেন- সকলের মা হযরত হাওয়া আলাইহাস্‌ সালামঞ্চর দিকেই সম্পর্ক করে বলবে হে হাওয়ার পুত্র অমুক! -[তাবরানী]

সুতরাং, দাফনের পর যিয়ারত করবে আর যিয়ারতের পর একজন পরহেজগার আলেমে দ্বীন উপরোক্ত নিয়মে কবর তালক্বীন করবেন। এটা মুস্তাহাব ও পূণ্যময়।

[শারহুস্‌ সুদূর, কৃত: ইমাম সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও রদ্দুল মুহতার, কৃত: ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি]

উল্লেখ্য থাকে যে, উপরোক্ত নিয়ম ছাড়া ফিকহ ফতোয়ার কিতাবে তালকিন করার সময় অন্য ইবারত দিয়েও তালকিনের নিয়মসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং উক্ত নিয়ম সমূহের যে কোন নিয়মেও তালকিন করা যায় অসুবিধা নাই।[বাহারে শরিয়ত ইত্যাদি]

Spread the love

Leave a Comment