রমজান মাসে শয়তান বন্দি থাকে তাহলে মানুষ গুনাহ করে কেন?

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:“হে মানবজাতি তোমাদের মাঝে পবিত্র রমযান মাস সমাগত এবং আল্লাহ তোমাদেরকে এই মাসে রোযা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আর এই মাসে বেহেশেতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয় আর এই মাসেই আছে কদরের রাত যেটি হাজার মাস থেকে উত্তম এবং যে ব্যক্তি এই মাসের অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হলো সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই বঞ্চিত, দুর্ভাগা।” 
[মুসনাদ-ই আহমদ,সুনানে নাসাঈ]

হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে যে পবিত্র রমজান মাসে শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ বা বন্দি রাখা হয় ।
এবার খুব সহজভাবেই এই প্রশ্ন মনের মধ্যে জাগতে পারে যে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে ।তাহলে পবিত্র রমজান মাসে মানুষ খারাপ কাজ করে কেন বা পাপ কাজে লিপ্ত থাকে কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর কয়েকভাবে দেওয়া যায় উত্তরগুলি শুনলে আপনাদের ধারণা ক্লিয়ার হয়ে যাবে । ইনশাল্লাহ

১ম উত্তরঃ- পবিত্র রমজান মাসে অবাধ্য জিন ও শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ বা বন্দী হয় ঠিকই । কিন্তু তাদের পদাঙ্ক পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে রয়েছে ।
শয়তানের পদাঙ্ক যেমন বাদ্যযন্ত্র, মদ, সুদ, ঘুষ, এবং বিভিন্ন পাপের কাজ ।
শয়তান জোর কদমে গুনাহ করতে বাধ্য করতে পারে না এবং মনের ভিতর জঘন্য ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করতে পারে না । এক্ষেত্রে যারা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তারাই গুনাহের কাজ করে । তাই আল্লাহ আমাদের সকলকে সাবধান করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা আহর করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। 
[সূরা বাকারা, অধ্যায়-২, আয়াত-১৬৮]

২য় উত্তরঃ-
সারাবছর শয়তান মানুষকে বিভিন্ন খারাপ কাজ করতে বাধ্য করে এবং বিভিন্ন চক্রান্ত দ্বারা মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে । শয়তান নিয়মিত ট্রেনিং দিতে থাকে । ফলে যে সমস্ত মানুষ শয়তানের দেখানো পথে চলতে শুরু করে এবং শয়তানের ট্রেনিং গ্রহণ করে ,তাদেরকে শয়তান কিছুদিনের জন্য ছেড়ে দিলেও তারা অটোমেটিক সেই পথেই চলে ।
যেমন ভাবে ব্যাটারীতে চার্জ দিলে সেই ব্যাটারি একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সার্ভিস দেয় । এমনি ভাবেই শয়তান সারাবছর চার্জ দেয় আর রমজান মাস আসলে শৃংখলাবদ্ধ হয়ে যায় । আর সেই সময় আল্লাহর অবাধ্য বান্দা সেই চার্জেই সারা মাস সার্ভিস দেয় ।

৩নাম্বার উত্তরঃ-
“শয়তানরা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে, যেমনভাবে বাঘ খাঁচার মধ্যে বন্দী থাকেন । স্বল্প জায়গায় ঘোরাফেরা করতে পারে। সেই বাঘের খাঁচা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলে বাঘ কোন ক্ষতি করতে পারবে না
তবে যদি কেউ খুব কাছাকাছি তার আওতার মধ্যে চলে যায়, তাহলে বাঘ তাকে আক্রমণ করবে । সেইরূপ শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে বা বন্দী থাকে,শয়তানের ঘোরাফেরার আওতার বাইরে থাকলে শয়তান কোন প্রকার গুনাহের কাজ করাতে পারবেনা তবে যদি কেও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কাছে যায় তাহলে শয়তান তাকে গুনার কাজ করাতে বাধ্য করবে ।

রমজান মাসের শয়তান বন্দি থাকে তবুও মানুষ খারাপ কাজ করে কেন আশা করি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন ।

তবে মনে রাখবেন যারা আল্লাহকে মনে প্রানে ভয় করে তারা কোন ভাবেই শয়তানের কোন প্রকার চক্রান্তে ফাঁসবে না এবং কোনভাবেই তার দেখানো পথে চলে না বা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না ।
যদি কখনো ভুলবশত কোন গুনাহের করে ফেলে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তারা তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে এটাই প্রকৃত ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য ।

হে আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের যাবতীয় চক্রান্ত থেকে সর্বদাই হেফাজত করো

আমিন

A.Aziz Qadri

Spread the love

Leave a Comment