স্ত্রীর মুখ থেকে স্বামী যে ৫টি কথা শুনতে চাই না

স্ত্রীর মুখ থেকে স্বামী যে ৫টি কথা শুনতে চাই না

স্বামী-স্ত্রীর জন্য পবিত্র কোরআন শরীফে মহান রব্বুল আলামিন এবং পবিত্র হাদীস শরীফে নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অসংখ্য উপদেশ দিয়েছেন । সেই সমস্ত উপদেশ গুলি দাম্পত্য জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং তা সারা জীবন অটল থাকবে । ইনশাআল্লাহ

স্বামী ও স্ত্রী বিষয়ক প্রায় আমি বলে থাকি যে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক যত গভীর হবে সংসার জীবনে সুখ তত বেশি হবে । আর যদি সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় তাহলে সুখের সংসার ভেঙে যেতে খুব বেশী দেরী লাগবে না ।

সংসারকে সুখের গড়ে তুলতে দুজনকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে । একে অপরকে কোন কথা বলার সময় খুব ভেবেচিন্তে বলতে হবে যাতে করে কেউ কষ্ট না পায় । যেমন স্বামীদের কিছু কথা যা একজন স্ত্রী কখনোই পছন্দ করেনা তেমনি স্ত্রীদেরও কিছু কথা যার স্বামী পছন্দ করেনা বা সেই কথা শুনতে চাই না । অনেক স্ত্রী অজান্তে এসমস্ত কথা স্বামীকে বলে থাকে যার ফলে স্বামী অনেক কষ্ট পেয়ে থাকে । স্ত্রীকে এ সমস্ত অপ্রয়োজনীয় একথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে ।

স্ত্রীর মুখ থেকে স্বামী যে ৫টি কথা শুনতে চাই না

(১) তুমি আমার যোগ্য নওঃ-
মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন ,আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা না থাকলে কেউ চেষ্টা করে সফল হতে পারবে না । মানুষ যখন কর্ম করে তখন আল্লাহ তার প্রতিদান দিয়ে থাকেন ফলে সে সফল হয় । বিবাহের জন্য মানুষ চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনা, এমন অনেক প্রমান রয়েছে যেখানে বিয়ে হওয়ার কথা সেখানে বিয়ে না হয়ে অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে । মূলকথা হলো মানুষ বিয়ের জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লাহ যেখানে রাজি থাকেন সেখানে হয়ে থাকে । ফলে বিয়ের পর একে অপরকে কোন প্রকার দোষ দেওয়া ঠিক হবে না । দুজনকে ভাবতে হবে এটা আমাদের ভাগ্য । তবুও বিয়ের পর বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে বিতর্ক হলে একজন স্ত্রী স্বামীকে খুব সহজেই বলে দেয় তুমি আমার যোগ্য নও । এই জাতীয় কথা একজন স্বামী স্ত্রীর মুখ থেকে কখনোই শুনতে পছন্দ করে না ।

(২) তুমি আমাকে কিছুই দাওনিঃ-
সংসার জীবনের বিতর্ক হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার, তাই বিতর্ক সময় খুব মেপে কথা বলতে হবে যাতে করে, বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয় । বিশেষ করে দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারে অনেক সময় স্ত্রী রেগে গিয়ে স্বামীকে বলে তুমি আমাকে কিছুই দাওনি বা তোমার কাছে কখনো ভালো ব্যবহার পাইনি। এধরনের কথা একজন স্বামী কখনো শুনতে পছন্দ করেন না । তাছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে এই জাতীয় কথা বলা কাবীরা গুনাহ যার জন্য নারীদেরকে জাহান্নামের শিকার হতে হয়।
যদি কোন স্ত্রী (প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাওয়ার পরেও) নিজের স্বামীকে বলে তুমি আমাকে কিছুই দাওনি বা তোমার কাছে কখনো ভাল ব্যবহার পাই নি, তাহলে সে নাফরমানী করলো,আর এই স্বভাবের জন্য একজন মেয়ে খুব সহজেই জাহান্নামের শিকার হয়ে যাই ।
ইব্‌নে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের বেশির ভাগই নারীজাতি; (কারণ) তারা কুফরী (নাফরমানী) করে। জিজ্ঞেস করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে?’ তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং অকৃতজ্ঞ হয়।’ তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, ‘আমি কক্ষণো তোমার নিকট হতে ভালো ব্যবহার পাইনি।’ (সহিহ বুখারী, ২৯)

কোন স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী ইহসান করে অর্থাৎ ভালো ব্যবহার করে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয় , এবং ভালোবাসে এরপরেও যদি একজন স্ত্রী রেগে গিয়ে বলে আমি তোমার কাছে কখনো কিছু পাইনি অথবা ভালো ব্যবহার পাইনি , তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে সে বড় ধরনের অপরাধী বলে গণ্য হবে এবং কিয়ামতের দিন আজাবের সম্মুখীন হবে ।

কিন্তু যদি স্বামীর দুষ্টু হয় ইসলামবিরোধী কাজ করে স্ত্রীর প্রয়োজন মেটাতে অস্বীকার করে, স্ত্রীর প্রাপ্য দিতে কৃপণতা করে, ক্ষমতা থাকার সত্বেও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া থেকে বিরত থাকে । তাহলে সে স্বামীও বড়ো অপরাধি বলে গণ্য হবে, এবং কিয়ামতের ময়দানে তাকে জবাবদিহি করতে হবে । স্ত্রী যদি সত্যি সত্যি অসুবিধার মধ্যে পড়ে থাকে, স্বামীর অত্যাচারের শিকার হয়, স্বামীর অবহেলার শিকার হয়, তাহলে সত্য কথাগুলো পরিবারের সামনে বলতে পারবে যাতে করে পরিবার এ বিষয়ে ফয়সালা করতে পারে ।

মূলকথা হলো সব কিছু পাওয়ার পরেও একজন স্ত্রী স্বামীকে কখনোই বলবে না যে আমি তোমার কাছ থেকে কিছুই পাইনি বা তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পাইনি ।

(৩) তুমি তার মতো হতে পারো না?
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকমের প্রতিভা দিয়েছেষ, সব মানুষ সমান হয় না । আর সবাই চেষ্টা করলেও সবার মত হতে পারে না । সকলেই নিজের মত বাঁচতে পছন্দ করে । কর্মজীবনে স্বামী কোন কাজ করতে অপারগ হলে, বা একটু কম স্মার্ট হলে অনেক স্ত্রী সহজে বলে থাকে তুমি তার মত হতে পারো না সে কত স্মার্ট, সব কাজ জানে, ইত্যাদি । একজন স্বামীর সামনে যদি তার স্ত্রী অন্য পুরুষের সুনাম করে তাকে ছোট করে তাহলে স্বামী খুব বেশি কষ্ট পেয়ে থাকে । সে এই জাতীয় কথা স্ত্রীর মুখ থেকে কখনো শুনতে চান না ।

(৪) পছন্দ না হলে তালাক দিয়ে দাওঃ-
গ্রামগঞ্জে বাংলায় একটি প্রবাদ আছে “হাঁড়ির পাশে হাড়ি থাকলে টক্কর লাগবেই” কথাটা কিন্তু সত্য । আপনার বাড়িতে যদি পাশাপাশি একাধিক হাড়ি থাকে তাহলে সেগুলি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে একটা সঙ্গে আরেকটা স্পর্শ করবে এটা সাধারন ব্যাপার । এখানে হাড়ির একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে , প্রত্যেকটা বিষয় এ উদাহরণটি ফিট করতে পারবেন । পাশাপাশি থাকলে একে অপরকে স্পর্শ লাগবে মানে আমি বলতে চাইছি স্বামী-স্ত্রী দুজন সংসার জীবনে যতই ভালোভাবে চলুক না কেন তবুও মাঝে মাঝে একে অপরের প্রতি বিভিন্ন কারণে রাগান্বিত হয়ে যায় । তবে তা বেশিদিন থাকে না আবার ঠিক হয়ে যায় । আর যখন ঠিক হয়ে যায় তখনি দুজনের মধ্যে সম্পর্ক আরো বেশি গভীর হয় । এ সময় অনেক স্ত্রী রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্বামীকে বলে থাকে আমাকে তালাক দিয়ে দাও । এই কথা কখনও বলা উচিত নয় বিতর্ক যতই বড় হোক না কেন , এতে স্বামী খুব কষ্ট পান পাশাপাশি শয়তান স্বামীর মনে রাগ সৃষ্টি করে দেয় , ফলে অনেক সময় অনেক স্বামী তালাক দিয়ে বসে যার কারনে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয় এরপর স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার জন্য স্বামী কান্নাকাটি করে আর মাওলানা মুফতি দের দরবারে ছোটাছুটি করে । মূল কথা হলো বিতর্ক বা রাগারাগির সময় স্ত্রী কখনোই যেন স্বামীকে না বলে যে আমাকে তালাক দিয়ে দাও ।

(৫) আমার ভাগ্যটা খারাপ বলে তোমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছেঃ-
বিয়ের পর স্বামীর ছোটখাটো ত্রুটি পেলেই একজন স্ত্রী বলতে দ্বিধা করে না যে আমার অমুক অমুক জায়গায় ভালো ভালো বিয়ের সম্পর্ক এসেছে সেখানে হলেই ভালো হতো । আসলে আমার ভাগ্যটা খারাপ তাই তোমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে । এই জাতীয় কথা স্বামীর মনে তীরের মত আঘাত করে ।

এছাড়া বাবা মা সম্পর্কে, আত্মীয় স্বজন সম্পর্কে, খারাপ মন্তব্য একজন স্বামী কখনোই স্ত্রীর মুখ শুনতে চাই না ।

তাই যে সমস্ত কথা স্বামীর শুনতে ভালোবাসে সে সমস্ত কথা বলাই একজন বুদ্ধিমান স্ত্রীর দায়িত্ব যাতে করে সে স্বামীর কাছ থেকে চাওয়ার বেশি ভালোবাসা পায় ।

Spread the love

Leave a Comment