জিলহজ্ব মাসের ৫টি বিশেষ আমল

১. প্রথম ১০ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা:
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে এই দিনগুলিতে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করলে অগণিত নেকী লাভ করা যায়।
যেমন
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে কুরবানীর আগের দিন পর্যন্ত দিনে সম্ভব হলে নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা, যথা: নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।
ফযীলত:
হান্নাদ (রহঃ) …… ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোন দিন নাই যে দিনসমূহের নেক আমল আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা অধীক প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর পথে জিহাদও কি তদপেক্ষা প্রিয় নয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না। আল্লাহর পথে জিহাদও তদপেক্ষা অধীক প্রিয় নয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হয়ে যায় এবং দুটির কিছু নিয়ে আর ফিরে না আসতে পারে তার কথা স্বতন্ত্র। – (ইবনে মাজাহ ১৭২৭)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোন দিন নাই যে দিনসমূহের ইবাদত আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয়। এর প্রতিটি দিনের সিয়াম এক বছরের সিয়ামের সমতুল্য। এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লায়লাতুল কাদরের ইবাদতের সমতুল্য। ( ইবনে মাজাহ ১৭২৮, সুনান এ তিরমিজী হাদিস ৭৫৮)

২. চুল-নখ না কাটা:
যারা কুরবানী করবে তাদের জন্য যিলহজ্বের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব।
হাদীস:
হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করবে, তারা যেন [এই ১০ দিন] চুল ও নখ না কাটে।
(সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৫২৩৬)

৩. আরাফার দিন রোজা রাখা:
প্রথম নয় দিন বিশেষ করে আরাফার দিন অর্থাৎ নয় জিলহজ্বে নফল রোযা রাখা।(তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য নয়)
ফযীলত:
হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।
{তিরমিজী শরীফ,হাদিস ৭৪৯}

৪. তাকবীরে তাশরীক বলা
যলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হল-
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।
{ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}

৫.স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা:
১০, ১১ অথবা ১২ ই যিলহজ্বের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে,তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য। {ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭ ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}
ফযীলত:
যায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবা রা. গণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা (রা.) পুনরায় আবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা (রা.) আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}
কঠোর হুশিয়ারী:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদের সবাইকে আমলগুলো করার তৌফিক দান করেন,, আমিন

Spread the love

Leave a Comment