ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিত দোয়া করা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের দলিল ভিত্তিক জবাব

প্রশ্ন ও উত্তর

দোয়া করা সর্বদা ভালো কাজ দোয়া সমস্ত এবাদতের মগজ,অনেক ভায় দোয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন,বিশেষ করে সম্মিলিত মোনাজাত বা দোয়া করতে দেখলে তাদের বেশি মাথা ব্যাথা হয় । নিম্নে সম্মিলিত মোনাজাত সম্পর্কে বিরোধীদের কিছু প্রশ্ন ও তার উপযুক্ত উত্তর দেওয়া হল ।

প্রশ্নঃ- ফরয নামাযের পর কেন হাত তুলে দুআ করেন ?

জবাবঃ- ফরয নামাযের পর দুআ কবুল হওয়ার কথা সহীহ হাদীসে আছে তাই দুআ করি । রেফারেন্সঃ ( সুনানে তিরমিযি হাদীস নং- ৩৪৯৯ )

প্রশ্নঃ- ফরয নামাযের পর দুআ কবুল হয় তাই আপনারা দুআ করেন ভালো কথা, কিন্তু একাএকি দুআ না করে সম্মেলিত দুআ করেন কেন ?

জবাবঃ- সম্মেলিত দুআ কবুল হওয়ার গ্যারান্টি সহীহ হাদীস আছে তাই আমরা সম্মেলিত দুআ করি । রেফারেন্সঃ {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাকে হাকীম,হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬}

প্রশ্নঃ- রাসূল সাঃ কি ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করেছেন ?

জবাবঃ- হ্যাঁ রাসূল সাঃ ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করেছেন । রেফারেন্সঃ ( আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪ )

প্রশ্নঃ- বুঝলাম রাসূল সাঃ ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করেছেন, কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো রাসূল সাঃ কখনো সম্মেলিত দুআ করেছেন কি ?

জবাবঃ হ্যাঁ রাসূল সাঃ সম্মেলিত দুআ করেছেন । রেফারেন্সঃ ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯ )

প্রশ্নঃ সাহাবায়ে কেরাম ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মেলিত দুআ করেছেন কি ?

জবাবঃ হ্যাঁ সাহাবায়ে কেরাম ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মেলিত দুআ করেছেন । রেফারেন্সঃ ( আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯ )

প্রশ্নঃ- রাসূল সাঃ সর্বদা পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করেছেন কি ?

জবাবঃ- না রাসূল সাঃ সর্বদা পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করেননি।

প্রশ্নঃ- রাসূল সাঃ যেহেতু ফরয নামাযের পর সর্বদা হাত তুলে দুআ করেননি তাহলে আমরা করবো কেন ?

জবাবঃ- রাসূল সাঃ যদি সর্বদা ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন তাহলে উম্মতের জন্য এটা ফরয হয়ে যেত তাই হয়ত রাসূল সাঃ সর্বদা ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করেননি । কিন্তু উম্মত সর্বদা ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুআ করলে বিশেষ ফজিলতের অধিকারী হবে,এবং দুআ ফরযও হবে না তাই মুস্তাহাব হিসেবে সর্বদা করা যেতে পারে, আর এ কথা সবারই জানা, যে কোন নফল আমল নিয়মিত করা প্রশংসার দাবিদার ।

প্রশ্নঃ- যে কোন মুস্তাহাব বা নফল আমল তখন সর্বদা করা প্রশংসারযোগ্য যখন তা জরুরী মনে না করা হয়। কিন্তু আমরা দেখি অনেকেই ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মেলিত দুআ করাকে জরুরী মনে করে, তাই ফরয নামাযের পর সম্মেলিত দুআ করা থেকে সবার বিরত থাকা উচিত নয় কি ?

জবাবঃ- কোন ব্যক্তি বা গোষ্টীর ভুল ধারণার কারণে একটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আমলকে পরিত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং ইসলামকে ধ্বংস করার নামান্তর । সুতরাং কেউ যদি ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মেলিত দুআকে জরুরী মনে করে তাহলে তাকে বুঝানো উচিত কিন্তু এই বাহানায় আমলটি ছেড়ে দেয়া উচিত নয় । মনে করুন কোন ব্যক্তি নামাযে হাত তুলা এই সুন্নত আমলকে জরুরী মনে করে তাই বলে কি আপনি এই আমলটি ‌নামাযে ছেড়ে দেয়ার কথা বলবেন ? নাকি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন ? নিশ্চয় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন,তাহলে দুআর ক্ষেত্রে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন কেন ?

প্রশ্নঃ- বুঝলাম ফরয নামাযের পর দুআ করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তাহলে সৌদি আরবে ফরয নামাযের পর দুআ করে না কেন ?

জবাবঃ- একটি কথা খুব ভাল করে মনে রাখতে হবে
কোন দেশ বা গোষ্টী মুসলমানদের দলিল নয় । বরং মুসলমানদের দলিল হলো কুরআন ও সহীহ হাদীস, সুতরাং কোন আমল কুরআন বা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলেই যথেষ্ট চাই কোন দেশ বা গোষ্টীতে থাকুক বা না থাকুক । দাঁড়ি রাখার কথা, বিভিন্ন নামাযের আগে পরে সুন্নত নামাযের কথা, সম্মেলিত মুনাজাতের কথা, শবে বরাতের কথা ইত্যাদি সহীহ হাদীসে আছে কিন্তু আরব দেশে এই আমলগুলো নেই বললেই চলে। এখন আপনিই বলুন আরব দেশে নেই বলে কি আপনি আমলগুলো করবেন না ? বড় কথা হলো ফরয নামাযের পর দুআ করা একটি নফল আমল তাই কোন দেশের মানুষ না করলে তার জন্য তাদের তিরস্কার করা যাবে না । কারণ নফল আমল করলে সওয়াব আছে না করলে গোনাহ নেই, তাই যার ইচ্ছা আমল করতেও পারে আবার ছেড়েও দিতে পারে

প্রশ্নঃ- হাটহাজারী মাদরাসায় ফরয নামাযের পর দুআ করা হয় না কেন ?

জবাবঃ- সেই এলাকার মানুষেরা
১-ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরী মনে করে ।
২-দুআকে নামাযের অংশ মনে করে।
৩-দুআ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না আকিদা রাখে।

তাই হাটহাজারী মাদরাসায় ফরয নামাযের পর দুআ করা হয় না, যাতে করে জন সাধারণের মধ্য থেকে উল্লেখিত ভুল ধারণাগুলো দূর হয়ে যায় ।


                                                         জামিরুদ্দিন সেখ

Spread the love

Leave a Comment