মাজার পাকা করা কি হারাম?

মাজার পাকা করা কি হারাম?

প্রশ্নঃ বুজুর্গদের মাজার পাকা করা কি হারাম?

উত্তর:- বুজুরগানে দ্বীনের কবর পাকা করার বিষয়ে আপত্তির দলিল ভিত্তিক জবাব
আপত্তিকারিগন ইমাম আবু হানীফা ফতুয়া বয়ান করে থাকে
وَعَنْ أَبِي حَنِيفَةَ: يُكْرَهُ أَنْ يَبْنِيَ عَلَيْهِ بِنَاءً مِنْ بَيْتٍ أَوْ قُبَّةٍ أَوْ نَحْوِ ذَلِكَ، لِمَا رَوَى جَابِرٌ «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – عَنْ تَجْصِيصِ الْقُبُورِ، وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا

(ফাতাওয়া শামি খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ১৪৪ মাতলাবু ফি দাফানিল মাইয়েত)

অর্থঃ- ইমাম আবু হানিফা কবরের উপুর কোনো ইমারত যেমন ঘর কুবা গুম্বুজ ইত্যাদি বানাতে নিষেধ করেছেন কারন যাবির রাদিয়াল্লহু আনহুর রেওয়ায়াতে কবর কে পাকা করা তাতে ফলক লাগানো,এমারত বানানো ইত্যাদি নিষেধ কওরা হয়েছে।

◼️ এটি শামির এবারত যা কেতাবুল জানায়েয থেকে নেওয়া। কবর কে এক হাতের চেয়ে বেশি উচু করা নিষেধ কারন মুসলিম শরিফে আছে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কবর কে পাকা করা এবং তার উপর কিছু বানাতে নিষেধ করেছেন।

◾দুররে মুখতারের এই বাবেই আছে وَيُهَالُ التُّرَابُ عَلَيْهِ، وَتُكْرَهُ الزِّيَادَةُ عَلَيْهِ) مِنْ التُّرَابِ لِأَنَّهُ بِمَنْزِلَةِ الْبِنَاءِ
কবরের উপর অতিরিক্ত মাটি দেওয়া নিষেধ কারন ইহা এমারত বানানোর অনুরুপ।
এর দ্বারা বোঝা গেল এর দ্বারা উদ্দেশ্য কবরের ঠিক উপরে কোনো কিছু বানানো নিষেধ যার অর্থ দেওয়াল বা বিল্ডিঙ্গের নিচে কবর চাপা না পড়ে।
কবরের উপর গুম্বুজ বানানো ব্যাখ্যা তার চার পাসে দেওয়াল তুলে ঘর করা নিষেধ নয় দ্বিতীয় এটা সাধারন মুসলিমদের জন্য হুকুম তৃতীয়ত এই বিষয়ের ব্যাখ্যা অন্য হাদীস করে দিয়েছে, যা মিশকাত শরীফে বাবুল মাসাজিদে আছে
اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُعْبَدُ. اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
অর্থঃ- হে আল্লাহ আমার কবর কে বুত বানিয়ো না যার পুজা করা হয়,সেই জাতির উপর খোদার কঠিন শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল যারা নিজের নবিদের কবর কে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিল।
(মিরকাত শারাহ মিশকাত শরীফ খন্ড ২ পৃষ্ঠা ৬২৮)

এর দ্বারা আমরা যেটা বুঝতে পারি সেটা হল কোনো কবর কে মসজিদ বানানো তার উপর এমারত তুলে সেদিকে মুখ করে নামাজ পড়া হারাম। এটাই এই হাদীসে উদ্দেশ্য। যে কবরে মসজিদ যেন না বানানো হয় বা সেদিকে কিবলা করে নামাজ জেন সাজদা যেন না করা হয়।
হজরত ইবনে হাজার আসকালানি বলেন
وَقَالَ الْبَيْضَاوِيُّ لَمَّا كَانَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى يَسْجُدُونَ لِقُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ تَعْظِيمًا لِشَأْنِهِمْ وَيَجْعَلُونَهَا قِبْلَةً يَتَوَجَّهُونَ فِي الصَّلَاةِ نَحْوَهَا وَاتَّخَذُوهَا أَوْثَانًا لَعَنَهُمْ وَمَنَعَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থঃ- ইমাম বাইযাবী বলেন যেহেতু ইয়ুহুদি এবং খৃষ্টানগন পয়গম্বর গনের কবরকে সম্মান দেখিয়ে সেজদা করত এবং তাকে কেবলা বানিয়ে তার দিকে ফিরে নামাজ পড়ত আর সেই কবর গুলিকে তারা বুত বানিয়ে রেখেছিল সেই কারনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম্ তাদের প্রতি লানত পাঠান এওং মুসলমানদের এর থেকে নিষেধ করেন (ফাতহুল বারী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা ৫২৫)

সাহাবায়ে কেরামগন খাস খাস কবরের উপর কুবা বানিয়েছেন এটা সাহাবাগনের সুন্নত। যেমন রেওয়াত আছে !
ضَرَبَهُ عُمَرُ عَلَى قَبْرِ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَضَرَبَتْهُ عَائِشَةُ عَلَى قَبْرِ أَخِيهَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَضَرَبَهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَنَفِيَّةِ عَلَى قَبْرِ ابْنِ عَبَّاسٍ
অর্থঃ- হজরত উমর হজরত জায়নাব বিনতে জাহসের কবরে কুবা বানিয়েছেন,এবং হজরত আয়েশা তানার ভাই আব্দুর রহমানের কবরে কুবা বানিয়েছেন, এবং মোহাম্মাদ বিন হানফিয়া হজরত ইবনে আব্বাসের কবরে কুবা বানিয়েছেন।

খারেজীরা নিজেদের দলিল হিসাবে নিম্নক্ত হাদীস পেশ করে থাকে এবং এর উপর ভিত্তি করে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়াদের কবর গুলিকে শহিদ করে থাকে আজ সেগুলির ও যাওয়াব দেওয়া হবে।

ওয়াহাবীদের দলিল
وَعَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ قَالَ: قَالَ لِي عَلِيٌّ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مشرفا إِلَّا سويته. رَوَاهُ مُسلم
অর্থঃ- আবিল হাইয়াজ আল আসাদি হতে বর্ণীত তিনি বলেন আমাকে হজরত আলি বললেন আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাবো না যে কাজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আমাকে পাঠিয়ে ছিলেন সেই কাজ হল তুমি কোনো ছবি ছেড় না বরং মুছে ফেল, তুমি কোনো উচু কবর ছেড় না বরং মাটির সাথে সমান করে দিয়ো (মিশকাত শরীফ হাদীস নং ১৬৯৬)

আপাত্তিকারি গনের পেশ কৃত হাদীসের ব্যাক্ষা এর মাধ্যমেই হয়ে গেল। বোঝা গেল গুম্বুজ বানানোতে নিষেধ নেই কবর কে সেজদার স্থান বানানোতে নিষেধ করা হয়েছে তাছাড়া এটা শরিয়তের হুকুম হিসাবে বলা হয়নি বরং তাকওয়া ও পরহেজগারির শিক্ষা দিতে বলা হয়েছে। যেমন থাকার জন্য পাকা ঘর করতে ও নিষেধ ছিল বরং তা ভেঙ্গে ও ফেলা হয়। এবং এর আর একটি কারন হল যখন বানানে ওয়ালার এই ধারনা হয় যে এই এমারত দ্বারা মাইয়াত কে আরাম হয় তো এটা নিষেধ কারন একটি ভুল ধারণা কিন্তু জিয়ারত কারিদের সুবিধার জন্য বানানো হয় তো জায়েজ আছে।

এই হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা হোল, যে মওলা আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যে সকল কবর ভাঙ্গার আদেশ দিয়ে ছিলেন সেগুলি কোনো মোমিনের কবর ছিল না বরং মুশরিকদের কবর ছিল। এর প্রমান হল এই হাদীসে বলা হচ্ছে আমি কি তোমাকে সেই কাজের আদেশ করব না যেই কাজে সয়ং নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? বোঝা গেল এর আগে সয়ং নবীজি ও একই কাজ করিয়েছেন মওলা আলি কে দিয়ে এখন প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে নবীজি সয়ং সকল দাফনে উপস্থিত থাকতেন বা তার হুকুমে সকল দাফন হত তাহলে মুসলমানদের কবর ইসলাম বহির্ভূত হোল কি করে?

এর দ্বারাই বোঝা যায় এগুলি মুসলমানদের কবর ছিলনা বরং মুশরেকিনদের কবর ছিল। তা ছাড়া সয়ং হাদীসে ও সেই ইঙ্গিত আছে যেমন
বুখারী শরিফ,অধ্যায় মুশরেকিন দের জাহেলি জুগের কবর কে কি ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ ?
فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ المُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ
অর্থঃ- নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন মুশরেকিনদের কবরের ব্যাপারে সুতরাং তা ভেঙ্গে ফেলা হোল
(বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ১২৭)

এবং হজরত ইবনে হাজার আসকালানি উপরুক্ত অধ্যায়ের ব্যাক্ষায় বলেন
أَيْ دُونَ غَيْرِهَا مِنْ قُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ وَأَتْبَاعِهِمْ لِمَا فِي ذَلِكَ مِنَ الْإِهَانَةِ لَهُمْ بِخِلَافِ الْمُشْرِكِينَ فَإِنَّهُمْ لَا حُرْمَةَ لَهُمْ
অরথঃ-নবীগন এবং তার অনুসারীদের কবর ছাড়া কারন এতে তাদের অসম্মান হয়।বরখেলাফ মুশরেকিন দের যেহেতু তাদের কোনো সম্মান নেই।
(ফাতহুল বারী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা ৫২৪)

সুতরাং উপরুক্ত হাদীস ও তার ব্যাক্ষা দ্বারা মওলা আলীর আদেশ কৃত হাদীসের সঠিক অর্থ বোঝা গেল যে ইহা মুশরকিনদের কবর ছিল তাছাড়া এই হাদীসে ফটোর কথা ও আছে আর মুসলমানদের কবরে ফটো থাকে না বরং মুশরেকিন খ্রিষ্টানদের কবরেই থাকে।
আরো একটা বিষয় হলো আমরা সকলেই জানি যে মুসলমানদের কবর এক বালিস্ত উচু করা সুন্নত। বরং একদম মাটির সমান করা মাকরুহ তাহলে মওলা আলী কি সুন্নতের খেলাফ হুকুম দিতে পারেন এর দ্বারা ও স্পষ্ট যে সেগুলি অমুসলিমদের কবর ছিল।

সুতরাং ওয়াহাবীদের এই দাবি ভিত্তিহিন এবং সুধু মাত্র সরল মনা মুসলমানদের ধোকা দেবার চক্রান্ত ও বুজুরগানে দ্বীনদের অসম্মানের ষড়যন্ত্র। আল্লাহ ওয়াহাবী ফেতনা থেকা আহলুস সুন্নাহ কে হেফাযত করুন আমিন ।

📝 (সৈয়দ শাহ মুফতি গোলাম মোস্তারশীদ আলী আল ক্বাদেরী, খিদিরপুর দরবার শরীফ, কলকাতা)

Spread the love

Leave a Comment