আবু বকর (রাঃ) এর জীবনী ও MCQ

প্রথম খলিফা হযরত ابو بكر আবু বকর (রাঃ) ২৭ অক্টোবর ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন প্রধান সাহাবী এবং ইসলামের প্রথম খলিফা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী। মেরাজের ঘটনা শোনা মাত্রই তিনি বিশ্বাস করেছিলেন এবং এর জন্য সিদ্দিক উপাধি লাভ করেছিলেন ।

আবু বকর (রাঃ) এর জীবনী

পূর্ণ নাম: আব্দুল্লাহ বিন আবি কুহাফা (عبدالله بن ابى قحافة) তিনি আবু বকর নামে বেশি পরিচিত ।

পিতার নাম: উসমান বিন আমির (عثمان بن امير) তিনি আবু কুহাফা (ابو قحافة) নামে পরিচিত ।

মায়ের নাম: উম্মুল খায়ের সালমা বিনতে সাখার (أم الخير سلمى بنت صخر بن عامر) ।

প্রথম জীবন:

আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ৫৭৩ সালে মক্কার কুরাইশ বংশের বানু তাইম (بنو تيم) গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন ।

অন্যান্য আরব শিশুদের মতো আবু বকর (রাঃ) তার বাল্যকাল অতিবাহিত করেন । তিনি তার পিতার সাথে ১০ বছর বয়সে বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে প্রথম সিরিয়া যান । পরে তিনি বাণিজ্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন ।

বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তিনি সিরিয়া ইয়ামেন সহ বিভিন্ন স্থানে সফর করেছেন । বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি ব্যবসা সফল হন এবং তিনি ধনী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়ে ওঠেন । কাপড়ের ব্যবসা তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল এবং তিনি তাই করতেন ।

তিনি শিক্ষিত ছিলেন এবং কাব্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি এছাড়া তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অনেক শক্তিশালী এর কারণে আস্তে আস্তে তিনি গোত্রের প্রধান হিসাবে সম্মান পেতে থাকেন ।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ:

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হযরত আবু বকার (রাঃ) প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । তিনি বিনা দ্বিধায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । ইসলাম ধর্মের গ্রহণ করার পূর্বে অন্যদের মতো দ্বিধা করেন নাই ।

ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার জীবন

আবু বকর (রাঃ) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রতি উৎসাহ দিয়েছিলেন এবং তারা উৎসাহিত হয়ে অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ।

যখন আস্তে আস্তে চতুর্দিকে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে, তখন সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি অনেক দাস-দাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল । স্বাধীন ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ করার ফলে, কাফেরদের অত্যাচার সহ্য করত হত, তার পরও তারা নিজের গোত্রের নিরাপত্তা ভোগ করতে পারত । কিন্তু দাস দাসীদের কোন নিরাপত্তা ছিল না ।

তাই তারা তাদের মালিকের নির্যাতনের সম্মুখীন হত । হযরত আবু বকর দাসদের প্রতি সদয় হয়ে তাদেরকে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দেন । তাই তাকে বলা হয় আতিক (عتيق) মুক্তকারী । তার মুক্ত করা দাসদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- হযরত বিলাল, আবু ফাকিহ, আম্মার ইবনে ইয়াসির, প্রমুখ (রাঃ) ।

হিজরতের পর মদিনার জীবন

৬২২ খ্রিস্টাব্দে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর সঙ্গে হযরত আবু বকর (রাঃ) মদিনায় হিজরত করেন । একের পর এক মুসলিমরা মদিনায় আসতে শুরু করে । এরপর আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) মদিনায় একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন । হযরত আবু বকর (রাঃ) নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি জমি ক্রয় করার জন্য ১০ দিনার প্রদান করেছিলেন ।

মদিনার জীবন আনসারদের সঙ্গে মিলেমিশে খুব সুন্দর কাটাতে থাকেন । আর দিনের পর দিন মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে । আর ঐদিকে মক্কার কাফেরেরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে । এই খবর মদিনায় আসলে নবী (সাঃ) সাহাবীদের প্রস্তুত করেন এবং তার প্রাণপ্রিয় চাচা আমির হামজা (রাঃ) কে, সেনা প্রধান বানিয়ে দেন ।

৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদরের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় । এই যুদ্ধে হযরত আবু বকর অংশ নেন ।

এরপর একের পর এক বিভিন্ন যুদ্ধ হতে থাকে আর প্রায় যুদ্ধে আবুবকর অংশ নিয়েছিলেন এবং সাধ্যমত অর্থ সম্পদ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন ।

তাবুকের যুদ্ধের সময় (৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ) আবু বকর (রাঃ) নিজের সমস্ত সম্পদ দান করে দিয়েছিলেন। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বাড়িতে কি রেখে এলেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন ।
اختفظت لعائلتى الله و رسوله
‘আমি আমার পরিবারের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে রেখে এসেছি’ ।

৬৩১ সালে মুসলিমদের একটি দল হজের উদ্দেশ্যে মক্কা গমন করে । আবু বকর (রাঃ) এই দলের নেতৃত্ব দেন । ইসলামের ইতিহাসে তিনি প্রথম আমিরুল হজ্জ (امير الحج) বা হজের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান ।

আবু বকর (রাঃ) এর পরিবার

স্ত্রীগণের নাম

(১) উম্মে রুমান।
(২) কুতাইলা।
(৩) আসমা বিনতে উমাইস।
(৪) হাবিবা বিনতে খারিজ।

কুতাইলা (তালাকপ্রাপ্ত) তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি । বাকি সকলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিয়েছিলেন ।

পুত্র সন্তানদের নাম

(১) আব্দুল্লাহ বিন আবুবকর (রাঃ)।
(২) আব্দুর রহমান বিন আবুবকর (রাঃ)।
(৩) মুহাম্মাদ বিন আবুবকর (রাঃ)।

কন্যা সন্তানদের নাম

(১) আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)।
(২) আয়েসা বিনতে আবু বকর (রাঃ)।
(৩) উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর (রাঃ)।

খলিফা পদে আবুবাকর (রাঃ)

আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর (রাঃ) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে খলিফা হন । প্রথমত কেক খলিফা হবে এ বিষয়ে মহাযীর ও আনসারদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব চলছিল । ইতিমধ্যে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর আনুগত্য প্রকাশ করেন। এরপর আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) আনুগত্য প্রকাশ করেন বা বায়াত গ্রহণ করেন। এরপর বাকিরা সকলেই আবুবকরকেই খলিফা বলে মেনে নিয়ে আনুগত্যের প্রকাশ করেন।

মৃত্যু: হযরত আবু বকর ৬৩২-৬৩৪ পর্যন্ত খিলাফতের দায়িত্ব পালন করে, ২৩/২২ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন ।

প্রশ্নঃ- আতিক (عتيق) কার উপাধি?

উত্তরঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ)

প্রশ্নঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) এর পূর্ণ নাম কি?

উত্তরঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) এর পূর্ণ নাম হল- আব্দুল্লাহ বিন আবি কুহাফা (عبدالله بن ابى قحافة) ।

প্রশ্নঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) কত সালে খেলাফত লাভ করেন?

উত্তরঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) ৬৩২ সালে খেলাফত লাভ করেন।

প্রশ্নঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) এর মোট কতজন স্ত্রী ছিল?

উত্তরঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) ৪জন স্ত্রী ছিল।
(১) উম্মে রুমান
(২) কুতাইলা (তালাকপ্রাপ্ত)
(৩) আসমা বিনতে উমাইস
(৪) হাবিবা বিনতে খারিজ

প্রশ্নঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) এর মোট কতজন সন্তান ছিল?

উত্তরঃ- হজরত আবু বকর (রাঃ) এর মোট ৬জন সন্তান ছিল । ৩জন পুত্র এবং ৩জন কন্যা ।

Spread the love

Leave a Comment