জান্নাতে পুরুষরা হুর পেলে নারীরা কি পাবে?

জান্নাতে পুরুষরা হুর পেলে নারীরা কি পাবে?

জান্নাতে পুরুষেরা ৭০ জন হুর পাবে। কিন্তু নারীর জন্য কি আছে? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নের উত্তরে যেটা পাওয়া যায় তা হলো, নারীরা তার (দুনিয়ার) স্বামীকে পাবে। পুরুষের জন্য ৭০ জন হুর আর নারীর জন্য দুনিয়ার স্বামী। নারীদের ভাগে তো কম দেওয়া হয়ে গেলো। এর চেয়ে বড়ো প্রশ্ন হলো, ৭০ জন হুরের কাছে নিজের স্বামী যাচ্ছে, এটা একজন নারী কিভাবে মেনে নিবে? দুনিয়াতে নারীরা তো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বঞ্চিতো। জান্নাতেও কি তারা বঞ্চিতো হবে?

বিষয়টি বুঝতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে, কোন চরিত্রের লোকেরা জান্নাতে যাবে। যখন আদম-হাওয়াকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিলো তখন দুনিয়াটা স্বর্গের মতনই ছিলো। কোলাহল, পরিবেশ দুষন, রোগ বালাই, হিংসা, চুরি, ডাকাতি, মারামারী, খুন, ধর্ষন এসব কিছুই ছিলো না। ধীরে ধীরে মানুষ দুনিয়াকে আজকের মতন বানিয়ে ফেলেছে। দুনিয়া তো ক্ষনস্থায়ী, জান্নাত অনন্তকালের জন্য। দুনিয়ার সব মানুষকে যদি একসাথে জান্নাতে ঢোকানো হয় তাহলে ওখানের পরিবেশ নস্ট করে ফেলতে বেশীদিন লাগবে না। একজন আরেকজনের জমি দখল করবে, একজন আরেকজনের হুরকে ধর্ষন করবে, ইত্যাদি। দুনিয়ার জীবন। দুনিয়াতে যাদের আকাম করে অভ্যাস আছে তারা জান্নাতে গেলেও আকামই করবে। এজন্যই বাছাই করা , সৎ চরিত্রের, আকাম-কুকাম মুক্ত লোকই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও জান্নাতে প্রবেশের প্রথম শর্ত হলো ঈমান। আর ঈমানদার লোক অসৎ চরিত্রের হয় না। জান্নাতের নারী পুরুষ উভয়েই হবে উত্তম চরিত্রের অধিকার।
আসুন এই প্রসঙ্গে কোরআন হাদিসের আলোকে কিছু কিছু উত্তর জেনে নেওয়া যাক।

প্রশ্ন: জান্নাতি নারীর জন্য ‘পুরুষ হুর‘ থাকবে আর জান্নাতি পুরুষের জন্য নারী হুর থাকবে, এটা কতোটুকু সঠিক?

উত্তর: যে মহিলার বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে জান্নাতি কোনো অবিবাহিতো পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দিবেন। (মাজমাউল ফতোয়া ১৫/৩)

২য় প্রশ্ন: দুনিয়ার কোনো বিবাহিতো নারী যদি জান্নাতি হয় কিন্তু তার স্বামী যদি জাহান্নামি হয় তাহলে সে নারীর কি জান্নতি ‘হুর (পুরুষ)’ থাকবে? থাকলে তার সংখ্যা হাদিস অনুযায়ী কতো? আবার তার স্বামী যদি কোনো সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতি হয় তাহলে সে কি তার দুনিয়ার স্ত্রীর সাথে মিলিতো হবে? হলে ওই স্ত্রীটির আগের ‘পুরুষ হুর’ দের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কি?

২য় উত্তর: জাহান্নাম থেকে মুক্তির পর স্বামীর সাথে মিলিতো হবে জান্নাতি স্ত্রী। আর যদি স্বামী চিরোস্থায়ী জাহান্নামি হয়, তাহলে তার এখতিয়ার থাকবে, সে ইচ্ছে করলে অবিবাহিতো জান্নাতি পুরুষও বিয়ে করতে পারে, অথবা পুরুষ হুরও বিয়ে করতে পারে। একজন নারী একাধিক হুর পুরুষ পাওয়ার কথা সহিহ সনদে কোথাও বর্ণিতো আছে কি না? আমাদের জানা নেই।

৩য় প্রশ্ন: তাহলে সে নারীর কি জান্নাতী হুর (পুরুষ) থাকবে? আর হাদীসের আলোকে তার সংখ্যা কতো? আর একজন জান্নাতি পুরুষের বিবাহিতো স্ত্রীও জান্নাতি হলে তার স্ত্রী কি হুরদের সর্দার হয়ে শুধু তার স্বামীকেই পাবে না স্বামীর সাথে সাথে আরো পুরুষ হুর পাবে? পেলে তার সংখ্যা কতো?

উত্তর: মহিলাদের ক্ষেত্রে একাধিক পুরুষ পাওয়ার কথা সহীহ সনদে আমাদের দৃষ্টিতে পরেনি।

প্রসঙ্গ–নারীরা বেহেশতে কি হুর পাবে এবার দেখা যাক, দুনিয়াতে নারী ও পুরুষের কেমন চাহিদা থাকে। আগেকার দিনে রাজাতন্ত্র চালু ছিলো। রাজা ছিলো সবচেয়ে শক্তিমান। রাজার কথাই ছিলো আইন। কাউকে বিনা কারনে মেরে ফেললেও কারো কাছে কৈফিয়ত দিতে হতো না। এমন রাজাদের ইতিহাস সবাই জানি। তাদের থাকতো ডজনখানিক বউ, কয়েকশতো রক্ষিতা, বাইজী ইত্যাদি। এর পরেও কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে তাকে তুলে এনে ধর্ষন করতো। ইতিহাস ঘেটে দেখুন, অনেক সময় এমন হয়েছে যে কোনো রাজ্যের রাজ্য ক্ষমতায় একজন নারী থাকে। রানী থাকে রাজার ভুমিকায়। পুরুষের চেয়ে নারী শাষকেরা যুদ্ধ, অত্যাচার, শোষন ইত্যাদি কোনোটাই কম করেনি। কিন্তু এমন কি কোনো উদাহরন আছে যে ক্ষমতাশীল রানীর এক ডজন স্বামী ছিলো, বা তার হারেমে শ-খানেক পুরুষ যৌনকর্মী ছিলো। এমন কি কোনো উদাহরন আছে যে ওই রানী পথে একটা জোয়ান ছেলে পেয়ে তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন ধর্ষন করার জন্য। না, এমন উদাহরন নেই। কারন এমন করাটা ঐ রানীর জন্য অপোমানজনক। ইচ্ছে থাকলেও

তিনি সেটা করতে পারেন না। একজন জান্নাতী নারীর মর্যাদা হবে দুনিয়ার সকল রানীর উপরে। কোনো পর পুরুষের সংস্পর্শে যাওয়াটা তার জন্য চরম অপোমানজনক। তাছাড়া, এক পুরুষে মন ভরে না, এমন নারী তো জান্নাতে পাওয়া যাবে না।

জান্নাতে উন্নতো চরিত্রের পুরুষ ও নারী থাকবে। এক পুরুষে মন ভরে না এমন নারীর স্থান জান্নাত নয়। জান্নাতের নারীরা এমন মর্যাদা সম্পন্ন হবে যে অন্য পুরুষের সংস্পর্শে আশাটা তার জন্য অপমান জনক। জান্নাতের নারীরা তার স্বামীর সাথে থাকবে। অবিবাহিতো হলে তাকে বিয়ে দেওয়া হবে। এর পরেও যদি কোনো নারী একাধিক পুরুষ চায়, তাকে অবশ্যই সেটা দেওয়া হবে। কিন্তু, জান্নাতী কোনো নারীর, এমন ইচ্ছেই হবে না।

তথ্য সংগ্রহ কারীর জন্য দোয়া করবেন । আল্লাহ যেন তাকে এমন আরো সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিতে সাহায্য করেন । আমিন

Spread the love

1 thought on “জান্নাতে পুরুষরা হুর পেলে নারীরা কি পাবে?”

  1. উপরোক্ত আলোচনায় কুরআন হাদীসের কোনরকম রফারেন্স না আনার কারণে বিষয়টিকে হালকা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা আবশ‍্যক ছিল।
    জাজাকাল্লিহ।

    Reply

Leave a Comment