কাজা রোজা আদায়ের পদ্ধতি ও রোজার কাফফারা কি?

কাজা রোজা আদায়ের পদ্ধতি কি?

প্রশ্নঃ রোজার কাজা ও কাফফারার বিধান কি? কাজা রোজা কি যে কোনোদিন রাখা যাবে?

প্রথম উত্তর:

প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান ইচ্ছাকৃতো রমজানের রোজা না রাখা মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহের কাজ। কেনোনা রমজানের একটি রোজা ছুটে যাওয়া অনেক বড়ো কল্যাণ থেকে বঞ্চিতো হওয়ার নামান্তর।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,

مَنْ أَفْطَرَ يَوْمًا مِنْ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ رُخْصَةٍ وَلاَ مَرَضٍ لَمْ يَقْضِ عَنْهُ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ وَإِنْ صَامَهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَسَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَقُولُ أَبُو الْمُطَوِّسِ اسْمُهُ يَزِيدُ بْنُ الْمُطَوِّسِ وَلاَ أَعْرِفُ لَهُ غَيْرَ هَذَا الْحَدِيثِ

‘যে ব্যক্তি কোনো অজুহাত বা রোগ ছাড়া রামাযান মাসের একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলে, তার পুরো জিন্দেগীর রোযা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও সে জীবনভর রোযা রাখে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭২৩,ইবনু মাজাহ: ১৬৭২ )

তবে অসুস্থতা বা অন্য ওজর থাকলে ভিন্ন কথা, সে ক্ষেত্রে অন্যদিন পালনের সুযোগ রয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন,

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵﴾

‘রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেনো তাতে রোযা পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। যেনো তোমরা (রোযার) নির্ধারিতো সংখ্যা পূরণ করে নিতে পারো এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আল্লাহর তকবীর পাঠ (মহিমা বর্ণনা) করো এবং যেনো তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

রোজার কাজার বিধান: কোনো সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান ইচ্ছাকৃতো রমজানের রোজা না রাখলে বা অনিচ্ছায় ভেঁঙে ফেললে অথবা কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে পরে ওই রোজার কাজা আদায় করতে হবে। মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে কষ্ট হলে, অনুরূপ গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী নারী যদি নিজের বা বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা করে, তাহলে রমজানে রোজা না রেখে পরে তা কাজা করে নিতে পারবে, এ ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না। (দেখুন: সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫, সুনানে তিরমিজি হাদিস: ৭১৫)

মাসিক ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসবের স্রাবের সময় রোজা রাখা জায়েজ নেই। তবে ওই দিনগুলোর রোজার কাজা দিতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।

রোজা রাখার পর দিনের বেলায় যদি কোনো নারীর মাসিক শুরু হয়, ওই নারীর জন্য খাওয়াদাওয়ার অনুমতি আছে। তবে লোকজনের সামনে না খেয়ে নির্জনে খাওয়া দাওয়া করবে। আর যে নারী মাসিকের কারণে রোজা রাখেনি, দিনের যে সময়ে তার রক্ত বন্ধ হবে, তখন থেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রোজাদারের মতো দিনের অবশিষ্ট অংশ অতিবাহিতো করবে এবং পরে ওই দিনের রোজা কাজা করে নেবে। (আললুবাব: ১/১৭৩)

নারীদের জন্য কৃত্রিম উপায়ে সাময়িক ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা অনুচিত। এতে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তা সত্ত্বেও এ পদ্ধতিতে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা অবস্থায় রোজা-নামাজ করলে তা আদায় হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হলো: ৩/২৭৮)

যেসব কারণে কাফফারা দিতে হয়: শরিয়তসম্মতো কোনো কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতো পানাহার বা সহবাসের মাধ্যমে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে তার কাজা ও কাফফারা অর্থাৎ লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে। পানাহার ও সহবাস ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে ইচ্ছাকৃতো ভাঙলেও কাফফারা দিতে হবে না, তবে কাজা করতে হবে। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/৭২)

কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখার সময় যদি এক দিনও বাদ যায়, তাহলে আবার শুরু থেকে গণনা আরম্ভ হবে, আগেরগুলো বাদ হয়ে যাবে। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/৮২)

কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃতোভাবে একাধিকবার একই রমজানের রোজা ভাঙার কারণে এক কাফফারাই যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দুবেলা খানা খাওয়াবে, অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ সম্পদ সদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করা যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১, রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৩)

৬০ মিসকিনকে দুবেলা খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেককে এক ফিতরা পরিমাণ অর্থাৎ এক কেজি (৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি) গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, ওই টাকা দ্বারা মিসকিনকে খানা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। একজন গরিবকে প্রতিদিন এক ফিতরা পরিমাণ করে ৬০ দিন দিলেও আদায় হবে। ৬০ দিনের ফিতরা পরিমাণ একত্রে বা এক দিনে দিলে আদায় হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫১৩, রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭৮)

দ্বিতীয় উত্তর:

হ্যাঁ! নিষিদ্ধ পাঁচ দিন ছাড়া সে যে কোনো দিন কাজা রোজা রাখতে পারবে,

কেনোনা, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে মাজীদ এর মধ্য সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ

*অর্থাৎ, আর যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। *তবে মনে রাখবেন, পাঁচ দিনে রোযা রাখা নিষিদ্ধ তা নিম্নরূপ:

(১.) ঈদুল ফিতর (রামাযানের ঈদ) এর দিন।

(২.) ঈদুল আযহা (কুরবানী) এর দিন।

(৩.) ঈদুল আযহার এর পরে আরো তিন দিন। অর্থাৎ, ১১ই, ১২ই, ১৩ই যিলহজ্ব। এই পাঁচ দিন যে কোনো রোযা রাখা হারাম। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)

Spread the love

Leave a Comment