আহলে হাদিস বেদাতী দল না সুন্নাতী দল?

আহলে হাদিস বেদাতী দল না সুন্নাতী দল?

আহলে হাদিস দলটিকে সুন্নাতী প্রমান করতে যে সমস্ত দলিল পেশ করা হয় তা হল-

পবিত্র কুরআন সূরা বনী ইসরাইল এর ৭১ নং আয়াতে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَوۡمَ نَدۡعُوۡا كُلَّ اُنَاسٍۢ بِاِمَامِهِمۡ‌ۚ

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে এই আয়াতের যে অনুবাদ করা হয়েছে তা হল__ “স্মরণ করো সেই দিনকে যখন প্রত্যেক সম্প্রদায়কে উহাদিগের নেতা সহ আহবান করিব”

“ইমাম” বলতে কি উদ্দেশ্য তা নিয়ে মুফাসসির গণ মত পার্থক্য করেছেন । মুজাহিদ (রহঃ) বলেন ইমাম বা নেতা দ্বারা নবী (সাঃ) কে বোঝানো হয়েছে । ইবনে আবু নাজিহ (রহঃ) বলেন এর মাধ্যমে মুজাহিদ হতে বর্ণিত এর দ্বারা নবীর প্রতি অবতারিত গ্রন্থ (কুরআন) বোঝানো হয়েছে ।

আওফি (রহঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে নকল করে বলেন “সেদিন প্রত্যেক দলকে তাহাদের আমলনামা সহ আহবান করা হবে” আবুল আলিয়াহ, হাসান ও যাহ্হাক (রহঃ) বলেন এই মত হইল সর্বাধিক উত্তম মত । (তাফসির ইবনে কাসীর, সূরা বানী ইসরাইলের ৭১ নং আয়াত)

এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) একটি কথা উল্লেখ করেছেন তা হল,

وقال بعض السلف هذا أكبر شرف لأصحاب الحديث لأن إمامهم النبي صلى الله عليه وسلم

এর খুব সহজভাবে অর্থ করলে হয়_ কিছু সালাফ বলেছেন “আসহাবে হাদিস” এদের জন্য এটি সম্মানের বিষয় যে তাদের নেতা নবী (সাঃ) ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর অনুবাদ করেছে, “পরবর্তী কোন কোন উলামায়ে কেরাম বলেন ‘মহাদিসগণের’ পক্ষে ইহাই সম্মানের বিষয় যে তাহাদের নেতা হইবেন নবী কারীম (সাঃ) ।

‘আসহাবে হাদিস’ দ্বারা সরাসরি মুহাদ্দিসদেরকে বোঝানো হয়েছে আর আহলে হাদিস ভাইয়েরা আসহাবে হাদিসকে পরিবর্তন করে আহলে হাদিস বানিয়েছে ।

আসুন এবার একটি হাদিস দেখি, যে হাদিসটি পেশ করে ‘আহলে হাদিস’ কে সঠিক দল হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে । এই জাতীয় অনেক কটি হাদিস রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো__

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِذَا فَسَدَ أَهْلُ الشَّامِ فَلاَ خَيْرَ فِيكُمْ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي مَنْصُورِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ هُمْ أَصْحَابُ الْحَدِيثِ ‏

আহলে হাদিস ভাইদের একটি হাদিসের অ্যাপস “আল-হাদিস” থেকে এ হাদিসের অনুবাদ করছি যাতে তারা সহজে মেনে নিতে পারে ।

মুআবিয়া ইবনু কুররা (রহঃ) হতে তার বাবা থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন সিরিয়াবাসীরা খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের আর কোন কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মাতের মধ্যে একটি দল সকল সময়েই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোকেরা তাদেরকে অপমানিত করতে চায় তারা কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।

মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, আলী ইবনুল মাদীনী বলেছেন, সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) সেই সম্প্রদায়টি হলো হাদীস বিশারদদের জামা’আত (আহলুল হাদীস)।


আর এটা কিন্তু সরাসরি হাদিসের এবারত নয় এটা একজন মুহাদ্দিস আলী ইবনুল মাদানী (রহঃ)এর মত ।

যে অনুবাদ করেছে সে আসহাবুল হাদিস বলতে হাদিস বিশারদ এর জামাত কে বুঝিয়েছে এবং ব্যাকেটে “আহালুল হাদিস” লিখেছে । যার দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় “আহলুল হাদীস” একটি উপাধি এটা কোন ফিরকার নাম নয় ।

তারমানে আপনারা বুঝতে পারছেন ‘আসহাবুল হাদিস’ বলতে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিরোধী কথিত ‘আহলে হাদিস’ নয় এর দ্বারা মুহাদ্দিসদের কে বোঝানো হয়েছে । আর সকল মহাদ্দিসগণ আহলে সুন্নাতের অনুসারী ছিলেন পূর্বে একটি ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ।

এই হাদিসের শেষের দিকে রয়েছে, বাহয্ ইবনে হাকিম হতে তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন,

قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيْنَ تَأْمُرُنِي قَالَ ‏”‏ هَا هُنَا ‏”‏ ‏.‏ وَنَحَا بِيَدِهِ نَحْوَ الشَّامِ

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আপনি আমাকে কোথায় থাকতে নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, এখানে, আর হাত দিয়ে সিরিয়ার দিকে ইঙ্গিত করলেন। (জামে’ আত-তিরমিজি,২১৯২)

‘আসাবুল হাদিস’ যারা হাদিস বিশারদকারী বা হাফিজুল হাদীস তাদের অনেক মর্যাদা অবশ্যই রয়েছে, তবে এই হাদিসের মধ্যে বিশেষ করে সিরিয়াবাসীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।

তাই এই হাদিস দ্বারা ভারত ও বাংলাদেশের কথিত আহলে হাদিস দলকে প্রমাণ করা চরম মূর্খের পরিচয় ।

এমন হাদিস বিভিন্ন হাদিসের কেতাবে বিভিন্নভাবে এসেছে কোথাও সরাসরি হাদিসের এবারতের মধ্যে “আহলুল হাদীস” বা “আসাবুল হাদিস” কথাটি আসেনি ।

এবার আসুন আপনাদের আর একটু চোখ খুলে দেই, মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল হাদিস গ্রন্থে সহি সনাদের সথে এইজাতীয় অনেকগুলো হাদিস রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো_

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ لَعَدُوِّهِمْ قَاهِرِينَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ إِلَّا مَا أَصَابَهُمْ مِنْ لَأْوَاءَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَيْنَ هُمْ قَالَ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ وَأَكْنَافِ بَيْتِ الْمَقْدِسِ

হাদিসের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ হলো, আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক এর উপর থাকবে । যারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে বা শত্রুতা করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না,–তবে তাদের উপর নির্ধারিত জীবন যাপন বা কঠিন অসুখ এর কারণে দুঃখ কষ্ট আসে (নির্ধারিত), যতক্ষণ না তাদের কাছে আল্লাহর নির্দেশ আসে এবং তারা এমনই হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন তারা কোথায় আছে ? নাবী (সাঃ) বললেন “বায়তুল মুকাদ্দাস” অর্থাৎ জেরুজালেম এবং তার পরিবেশে বসবাসকারী । (তোর আশেপাশে বসবাসকারী) (আহমাদ বিন হাম্বল ২১২৮৬)

এজাতীয় হাদিসগুলো দ্বারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুজাহিদদের বোঝানো হয়েছে । প্রমাণসহ এই জাতীয় আরেকটি হাদিস দেখুন

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের পক্ষে জিহাদ করতে থাকবে এবং তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবে। অবশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। (ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে।) সহি আল-জা’মের মধ্যে আলবানী হাদিসটিকে সহি বলেছেন ।

আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট হতে পারলাম এই হাদিস গুলি দ্বারা কথিত আহলে হাদিসদের বোঝানো হয়নি বরং মুজাহিদদের বোঝানো হয়েছে ।

যারা ফি সাবিলিল্লাহ কিতাল করে অর্থাৎ যারা মুজাহিদ তাদের অনেক ফজিলত রয়েছে, এমন ভাবে যারা ‘আসাবুল হাদিস’ তাদের মর্যাদা রয়েছে, পবিত্র কুরআন শরীফে ‘আসহাবে কাহাফ’ এর কথা পাওয়া যায় তাদেরও অনেক মর্যাদা রয়েছে এমন অগণিত উদাহরণ রয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের মধ্যে ।

যদি কেউ সুন্দর একটি নাম নিয়ে সংগঠন তৈরি করে তাহলে করতে পারে, কিন্তু যদি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিপক্ষে একটি দল খাড়া করার চেষ্টা করে তাহলে সেটা চরম বড় অপরাধ । যেমনভাবে আসহাবুল হাদিস নিয়ে একটি দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । পূর্বে আমি দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছি এই জাতীয় দল তৈরি করা সম্পূর্ণরূপে বিদআত ।

“আসহাবুল কাহাফ” এই নাম দিয়ে যদি কেউ দল তৈরি করে আর বলে পবিত্র কোরআনে সাহাবুল কাফের কথা আছে তাহলে বলুন আপনি কি আসহাবে কাহাফ বলে নিজেকে দাবি করবেন? নাকি আসহাবে কাহাফ বিশেষ কয়েকজন ব্যক্তির উপাধি? তেমনিভাবে “আসহাবে হাদিস” মুহাদ্দিস বা হাদিস বিশারদকারী বা হাফিজুল হাদিসগণের উপাধি । এই নাম দিয়ে দল গঠন করা বেদাত ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাদের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের অনুসরণ করা যায় তবে তাদের স্থান লাভ করা সম্ভব নয় ।

“আহলে হাদিস” হাদিস বিশারদকারী বা হাফিযুল হাদীসদের উপাধি । সাধারণ ছেলে, ব্যবসায়ী, রিস্কা চালক, সবজি বিক্রেতা, চিকিৎসক তাদের নিজের পেশাগত দিকে অভিজ্ঞতা থাকতে পারে । এসব ছেড়ে যদি তারা আহলে হাদিস দাবি করে তাহলে চরম হাস্যকর ব্যাপার ।

Spread the love

Leave a Comment