কবরের প্রথম রাত কেমন হবে ?

কবরের প্রথম রাত কেমন হবে ?

মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পর সবকিছু শুনতে পাই কিন্তু কিছু বলতে পারেনা । অনেক চেষ্টা করে বলার কিন্তু বলা হয় না তখন সে বুঝতে পারে সে মৃত্যু বরণ করেছে ।

তারপর গোসল করাইয়া কাফন পরানোর পর,যখন জানাযার জন্য ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় ।

তখন যদি মৃত ব্যক্তি ভালো হয় তবে বলতে থাকে আমাকে তাড়াতাড়ি আমার গন্তব্যস্থলে নিয়ে চলো । আর যদি খারাপ হয়, তাহলে বলতে থাকে আমাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিও না ।

নাবী (সাঃ) বলেছেন,জানাযা (লাশ) নিয়ে তোমরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে চল। কেননা, সে যদি ভাল লোক হয় তাহলে তোমরা উত্তম পরিণতির দিকে তাকে এগিয়ে দিলে। আর যদি সে খারাপ লোক হয়ে থাকে, তাহলে তাকে তোমাদের গর্দান হতে তাড়াতাড়ি নামিয়ে রাখলে। (ইবনু মা-জাহ (১৪৭৭,তিরমিজি, ১০১৫)

মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করে মানুষ যখন চলে যায় তখন কবরের ভিতর থেকে মৃত ব্যক্তি, চলে যাওয়া মানুষদের জুতোর শব্দ শুনতে পায়।

নবী (সাঃ) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে ‍পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায়, তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় । (বুখারী ১৩৩৮)

মুমিন ব্যক্তিকে কবরে রেখে যখন মানুষ চলে যায়, তখন সে নিশ্চিন্তে ঘুমায় । এরপর ফেরেশতা এসে তাকে তোলে । তখন সে চোখ মুছতে মুছতে ওঠে । এমন সময় সে দেখতে পাই সূর্যটা যেন ডুবে যাচ্ছে । তখন ফেরেশতাদেরকে বলে আমাকে ছেড়ে দাও নামাজ পড়বো । (ইবনে মাজাহ ৪২৭২)

এরপর তাকে জানানো হবে কবরের জগতে চলে এসেছে এখানে আর নামাজ নেই ।

অনেক ইসলামিক স্কলার বলেছেন, কবরে সূর্য থাকার কথা নয়, বরং প্রত্যেক কবরে নবী (সাঃ এর আগমন ঘটে । তাই নবীজির নূরের ঝলক দেখে মৃত ব্যক্তি এমন বলে থাকেন ।

নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘কবর পরকালের প্রথম ঘাঁটি। কেউ যদি এখান থেকে মুক্তি পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য সহজ হবে। আর যদি কেউ কবর থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য আরো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৮)

বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায় মৃত ব্যক্তিকে ফেরেশতারা তিনটি প্রশ্ন করবে ।

  • মান রাব্বুকা অর্থাৎ তোমার প্রভু কে?
  • মা দিনুকা অর্থাৎ তোমার ধর্ম কি?
  • মানন নাবিয়ুকা অর্থাৎ তোমার নবী কে ?

(পরকালে শুধু আরবি ভাষায় কথা হবে তাই সকলে আরবি বলতে পারবে এবং বুঝতে পারবে)।

সঠিক উত্তর দিতে পারলে ফেরেশতারা বলবেন, তুমি ঠিক বলেছ । এখন তুমি ঘুমাও নব দম্পতির মত । কেয়ামত পর্যন্ত তোমাকে আর জাগানো হবে না । মৃত ব্যক্তি তার ঠিকানা জান্নাতের দিকে তাকিয়ে চরম সুখে ঘুমিয়ে যাবে । পক্ষান্তরে যে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না তার কবরের দিকে জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হবে।

কবরের প্রশ্ন সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) বুখারী শরীফের মধ্যে যে হাদিস নিয়ে এসেছেন তার মধ্যে তিনি শুধুমাত্র একটি প্রশ্নের কথা উল্লেখ করেছেন ।

যখন মৃত ব্যক্তিকে রেখে সাথীরা চলে যায়,এমনন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। (এরপর নবী (সাঃ)কে দেখানো হয়) অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন,
مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
এই যে মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে? (ইমাম বুখারী শুধুমাত্র এই প্রশ্নটির কথা উল্লেখ করেছেন) তখন সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল।

তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ্‌ তা’আলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে।

আর যারা ক্বাফির বা মুনাফিক, তারা বলবে, আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, না তুমি নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। অতঃপর তার দু’ কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে মারা হবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে, তার আশপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জ্বীন ছাড়া। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৩৮)

প্রিয় দর্শক মন্ডলী ইমাম বুখারী (রহঃ) শুধু একটি প্রশ্নের কথা বলেছেন । আর সেটা হল
مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
তুমি এই মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কি বলতে ?

ইসলামিক স্কলারগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন প্রশ্ন তিনটা হবে কিন্তু মূল প্রশ্ন একটি । বাকি ২টি অতিরিক্ত (Optional) । শুধুমাত্র এই একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই মুক্তি পেয়ে যাবে ।

বর্তমানে আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন মুসলমানদের মধ্যেও অনেক ওলামায়ে কেরাম ইহুদিদের ধোকায় পড়ে, নবী (সাঃ) কে মূর্খ বলে, সাধারণ মানুষ বলে, মোরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বলে ও বিভিন্ন বেয়াদবি মূলক কথা বলে । নাউজুবিল্লাহ ।

এ সমস্ত মানুষগুলো কবরে গিয়ে কিভাবে সঠিক উত্তর দিবে? এরা কি বলতে পারবে যা আমরা বলতাম তিনি আমাদের মত সাধারন মানুষ, তিনি মাটির মানুষ, তিনি মূর্খ ইত্যাদি? নাউজুবিল্লাহ

তাই পৃথিবীর বুকে এসমস্ত ফিতনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে । দিনের পথে চলতে হবে এবং প্রিয় নবী (সাঃ) কে অন্তর থেকে ভালবাসতে হবে ।

এর জন্য নিজে থেকে কিছু পড়াশোনা করে হালকা গবেষণা করতে হবে সব সময় অন্ধ ভক্তের মতো কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না ।

আল্লাহ যেন আমাদেরকে ঈমানী হালাতে মৃত্যু দান করেন এবং কবরে প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করেন । আমিন

আরো ভালো করে জানতে,ভিডিওটি দেখুন

Madina786 YouTube Channel

তথ্য সংগ্র করেছেনঃ- আব্দুল আজিজ কাদরী.

এবার এটি পড়ুনঃ- কাবা ঘরের ভিতর কি আছে? কাবা শরিফের অজানা সব তথ্য

Spread the love

Leave a Comment