নবী (সাঃ) এর নূর সম্পর্কে নাসিরুদ্দীন আলবানীর দৃষ্টিভঙ্গি

নবী (সাঃ) এর নূর

রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে আহলে হাদিসের প্রধান অন্যতম এবং বর্তমান আহলে হাদিসদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (মৃত.১৯৯৯.) এর দৃষ্টিভঙ্গিঃ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

হাদিস নং ১

আহলে হাদিস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী তার একাধিক গ্রন্থে হাদিসটি সংকলন করেছেন। তার সু প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ ‘‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ’’।

সেখানে তিনি ইমাম বায়হাকী (রহঃ)-এর সংকলিত একটি হাদিসে পাক উল্লেখ করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ “

‘‘হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) বলেছেন,যখন আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (আঃ) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এটা কার নূর? আল্লাহ তা‘য়ালা বললেন, এ তোমার আওলাদ হবে, তার নাম আসমানে আহমদ। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং তিনি প্রেরণে (নবীদের) শেষ। তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী।’’

আলবানীর তাহক্বীকঃ

قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري؛

‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’ , ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’

আলবানী প্রথমে এ সনদটিতে রাবী ‘মোবারক বিন ফাদ্বালাহ’ এর কারণে যঈফ বলতে চেয়েছেন। আমি বলবো এ হাদিসটি সহিহ এবং এ রাবীর হাদিসও গ্রহণযোগ্য।

হাদিসের সনদ মান বিশ্লেষণঃ

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) উল্লেখ করেন-

‘‘উসমান দারেমী (রহঃ) এ রাবী সম্পর্কে ইবনে মুঈন (রহঃ) এর কাছে জানতে চান তিনি তার শায়খ রুবীঈ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘হযরত আমর বিন আলী (রহঃ) বলেন, আমি শায়খ আফ্ফান (রহঃ)কে বলতে শুনেছি মোবারকের হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য।’’

লক্ষণীয় একটি বিষয়ঃ বুঝা গেল আদম (আঃ) ও আমাদের নবীকে নূর হিসেবেই দেখেছেন। কিন্তু আহলে হাদিস ও দেওবন্দীরা তাঁর সন্তানেরা এর বিপরীত কথা বলে। এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট করে প্রমাণ হয়, রাসূলে করিম (ﷺ) সৃষ্টির প্রথম এবং আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেও তিনি নূর অবস্থায় ছিলেন। অতএব, নবী করিম (ﷺ) কে আদম (আঃ) সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। কারণ মাটির তৈরী সর্বপ্রথম মানব হলে হযরত আদম (আঃ)।

হাদিস নং ২ :

ইমাম বায়হাকী (রহঃ), ইমাম ইবনে সা‘দ (রহঃ), ইমাম তাবরানী (রহঃ) সহ অনেক ইমাম সংকলন করেছেন-

‘‘হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, কিভাবে আপনার শুরু হল? প্রিয় নবি (ﷺ) বলেন, আমি ইবরাহিম (عليه السلام)-এর দোয়া, ঈসা (عليه السلام) -এর সুসংবাদ, নিশ্চয় আমার মা তাঁর ভিতর থেকে নূর বের হতে দেখেন, ঐ নূরের আলোতে শাম দেশের দালানগুলো আলোকিত হয়ে যায়।’’

এ হাদিসটি প্রসঙ্গে আহলে হাদিসদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন-

أخرجه ابن سعد بإسناد رجاله ثقات

‘‘ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করেছেন আর সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।’’

আলবানী এ হাদিসটি প্রসঙ্গে অন্য পুস্তকে লিখেন-

‘‘(সহীহ)…..ইবনে সা‘দ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আবু উমামা (রহঃ) থেকে।’’

ইমাম আব্দুর রাউফ মানাভী (রহঃ) লিখেন-

قال ابن حجر: صححه ابن حبان والحاكم

‘ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ইমাম ইবনে হিব্বান ও ইমাম হাকেম সনদটিকে সহিহ বলেছেন।’’

লক্ষণীয় একটি বিষয়ঃ এই হাদিসে বলা হয়েছে- خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ ‘‘নিশ্চয় মা আমেনার ভেতর থেকে নূর বের হয়েছে।’’ আর এটি তিনি দেখেছিলেন জাগ্রত অবস্থায় ও চর্ম চোখে। এখানে মাটির কথা বলেননি বরং নূরের কথাই তিনি বলেছেন। তাই মাটির ব্যবসা চলবে না ।

হাদিস নং ৩ :

ইমাম হাকিম (রহঃ) একটি হাদিসে পাক সংকলন করেন-

عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: ্রإِنِّي عَبْدُ اللَّهِ، وَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ، ৃ..، وَأَنَّ أُمَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَتْ حِينَ وَضَعَتْهُ لَهُ نُورًا أَضَاءَتْ لَهَا قُصُورُ الشَّامِ،

‘‘হযরত ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর বান্দা এবং শেষ নবী। ….নিশ্চয় আমি যখন পৃথিবীতে শুভাগমন করি তখন আমার মা দেখলেন তাঁর থেকে নূর বের হচ্ছে, ফলে শাম দেশের বড় অট্টালিকাগুলো আলোকিত হয়ে গেছে।’’

হাদিসটি প্রসঙ্গে আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানী বলেনঃ হাদিসটি সহিহ

অপরদিকে ইমাম হাকিম নিশাপুরী সনদটিকে সহিহ বলেছেন। আর ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন।

তাই এ হাদিসেও প্রমাণিত হল রাসূল (ﷺ)-এর মা পেট মোবারক হতে মাটি নয় বরং নূরই বের হতে দেখেছেন ।

আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানী এই হাদিগেুলো অশিকার করতে পারেন নি তাহলে তার অনুসারীরা কেন অশিকার করছে ?

এবার পড়ুন

পড়া হলে দয়া করে শেয়ার করবেন । যাজাকাল্লাহ

Spread the love

Leave a Comment