বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখার বিধান
আরবি প্রতিটি অক্ষরের একটি রোমান সংখ্যা আছে। ৭৮৬ হলো পুরো বিসমিল্লাহ’র রোমান সংখ্যা। সেটা কিভাবে তা প্রমান সহ বিস্তারিত জানব ।
আজকের আলোচনার বিষয়
(১) ৭৮৬ কি বা কেন ?
(২) ৭৮৬ কেন লিখবো?
(৩) ৭৮৬ এর সঙ্গে “হরে কৃষ্ণ” এর কি কোন সম্পর্ক আছে?
(৪) অনেকে বলছেন ৭৮৭ “বিসমিল্লাহ” এর মান আর ৭৮৬ হরে কৃষ্ণের মান , এ কথা কি ঠিক?
(৫) অন্ধ ভক্তদের জন্য কিছু উপদেশ ।
(১) ৭৮৬ কি বা কেন ?
بسم الله الرحمن الرحيم
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
এরমধ্যে ১৯ টি অক্ষর রয়েছে । এই ১৯টি অক্ষরের আবজাদ পদ্ধতিতে রোমান সংখ্যা হলো –
(১) ب -২
(২) س -৬০
(৩) م -৪০
(৪) ا – ১
(৫) ل – ৩০
(৬) ل -৩০
(৭) ه – ৫
(৮) ا – ১
(৯) ل – ৩০
(১০) ر – ২০০
(১১) ح- ৮
(১২) م – ৪০
(১৩) ن- ৫০
(১৪) ا- ১
(১৫) ل- ৩০
(১৬) ر- ২০০
(১৭) ح- ৮
(১৮) ي- ১০
(১৯) م – ৪০
মোট যোগফল- ৭৮৬
“বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” এরমধ্যে ১৯টি অক্ষর রয়েছে , তার আদাদ বা মান বের করার পর হল ৭৮৬ । ইলমুল আদাদ বের করার নিয়ম হলো প্রত্যেক অক্ষর যেগুলি লেখতে আসবে সেগুলোর মান বের হবে । যদি কোন অক্ষরের ওপর তাসদিদ থাকে তাহলে সেটার দুই বার মান বের হবে না বরং একবার মান বের হবে । বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম এ ১৯ অক্ষর আছে , অনেকে খাড়া জবরগুলো অক্ষর হিসাবে ধরে তার মান বের করে মানুষদের উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে থাকেন । এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না এটা নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা ।
ইমাম মানাবি (রহ:) বলেন , বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম এর মধ্যে অক্ষর রয়েছে ১৯ টি । আর জাহান্নামের দায়িত্বে ১৯ জন ফেরেশতা আছেন । যে ব্যক্তি বেশি বেশি এটি পাঠ করবে সে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান লাভ করবে । (এছাড়া তিনি আরো বলেন এটা বেশি বেশি পাঠ করলে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে )
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম এর মধ্যে ১৯টি অক্ষর আছে এটাই সঠিক । যারা অক্ষর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা খুব বড় জঘন্য কাজ করছেন । পবিত্র কোরআনের অক্ষর কমানো বাড়ানোর জঘন্য অপরাধের জন্য তওবা করা তাদের ওপর অপরিহার্য ।
(২) ৭৮৬ কেন লেখবো?
আমাদের পূর্বযুগ থেকেই বিসমিল্লাহ’র পরিবর্তে বিশেষ করে কিছু কিছু জায়গায় ৭৮৬ লেখার বিষয়টি চলে আসছে। তখন সম্ভবত এটা চিঠিতে লেখা হত, যাতে চিঠি ছিড়ে ফেলে দিলে বিসমিল্লাহ’র অসম্মান না হয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন- হ্যান্ডবিল, বিয়ের কার্ড, চিঠি ইত্যাদিতে ৭৮৬ লেখা হয় । ৭৮৬ লেখলে নেকি হবে না ,তবে যেহেতু ৭৮৬ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম এর আদাদ বা সংখ্যা তাই তা দেখে যদি কেউ মুখে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়ে তাহলে সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নেকি বা সাওয়াব লাভ করবে ।
বিসমিল্লাহ’র দুটি বরকত রয়েছে-১. লেখার ২. পড়ার। অসম্মানের আশঙ্কায় লেখার বরকত বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ৭৮৬ লেখার মাধ্যমে পড়ার বরকতের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। সুতরাং বিভিন্ন হ্যান্ডবিল, পেস্টারে বিসমিল্লাহ’র পরিবর্তে ৭৮৬ লেখার মাধ্যমে যদি এই উদ্দেশ্য হয় এটা দেখলে পাঠক বিসমিল্লাহ পড়ে লেখা পড়া শুরু করবে তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে উত্তম হলো এর স্থানে বিসমিহী তায়ালা লেখা।
(শরহুল মাজাল্লা-১৭, আপকে মাসাইল আওর উনকা হল-৮/৩৪৮ )
বিসমিল্লাহর পরিবর্তে কিছু জায়গায় বেয়াদবি থেকে বাঁচার জন্য ৭৮৬ লিখা সম্পূর্ণ জায়েজ । ৬৮৬ লেখা দেখে যদি কেউ মুখে সম্পূর্ণ “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” পাঠ করে তাহলে সম্পূর্ণ সওয়াব বা নেকি পাবে । ৬৮৬ মুখে উচ্চারণ করলে কোন নেকী পাবে না বা কোন গুনাহও হবে না ।
এ বিষয়ে দারুল ইফতা জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়র ফতোয়া হলো-
৭৮৬ লেখলে বা পড়লে কোন প্রকার নেকি হবে না । বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে লেখক গণ ৭৮৬ লিখে থাকেন এবং মুখে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” পড়ে থাকেন । ৭৮৬ দেখে যদি পাঠক “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” পাঠ করে , তাহলে তার সাওয়াব পাবে ।
৭৮৬ লেখাকে সেরেক বেদাত বলা ভুল ।
তাদের ফতুয়া দেখতে নিচের লিংক ভিজিট করতে পারেন ।
https://www.banuri.edu.pk/web/readquestion/786-%D9%84%DA%A9%DA%BE%D9%86%D8%A7-%DA%A9%DB%8C%D8%B3%D8%A7-%DB%81%DB%92/15-08-2018
এ বিষয়ে দারুল উলুম উলামায়ে দেওবন্দের ফতোয়া হলো –
৭৮৬ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর সমতুল্য নয় । ৭৮৬ লেখা দ্বারা “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” লেখার সাওয়াব বা নেকি পাওয়া যাবে না । তবে যদি চিঠি (অন্য কোন কাগজ) নোংরা জায়গায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ৭৮৬ লেখাতে কোন সমস্যা নেই ।
(৭৮৬ লেখা দেখে “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” কেউ পড়লে সম্পূর্ণ নেকি পেয়ে যাবে আর যদি সেটা কোন নোংরা জায়গায় পড়ে যায় তাহলে বেয়াদবি হবে না এবং কোন গুনাহ হবে না )
(৩) ৭৮৬ এর সঙ্গে “হরে কৃষ্ণ” এর কি কোন সম্পর্ক আছে?
না কোনো সম্পর্ক নেই ।
৭৮৬কে হরে কৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করা বা ৭৮৬ হরে কৃষ্ণ এর মান বলে প্রচার চালানো জঘন্য অপরাধ । হরেকৃষ্ণ সংস্কৃত শব্দ, ইলমুল আদাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই ।
ধর্মীয় ব্যবসায়ীরা নিজের দল মজবুত করার জন্য সাধারণ জনগণকে এই ধরনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছেন । হিন্দু ধর্মের কোন গ্রন্থে ৭৮৬ এর উল্লেখ নেই । মুসলিম ও হিন্দুদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দাঙ্গা লাগানোর বড় ষড়যন্ত্র এটা । হরেকৃষ্ণের সঙ্গে ৭৮৬ তুলনা করা বা ৭৮৬ হরে কৃষ্ণের মান বা সংখ্যা বলে প্রচার চালানো , জঘন্য অপরাধ এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মূর্খের কাজ ।
এ সম্পর্কে আরও জানতে নিচের লিংক ভিজিট করুন
https://masaileshariya.blogspot.com/2019/11/Post598.html
১ মিনিটের জন্য তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেওয়া যায় যে, হরে কৃষ্ণের মান বের করলে ৭৮৬ হয় । তাহলে এমন তো অনেক কিছু হিন্দু ,শীখ , পাঞ্জাবি, ও অন্যান্য ধর্ম অবলম্বী মানুষদের সঙ্গে মিলে যায় । তাহলে কি সবগুলোই বাদ দিতে হবে । মুসলিমরা দাড়ি রাখে আর অনেক অমুসলিমদের দাড়ি দেখা যায় তারমানে মুসলিমরা কি আর দাড়ি রাখবে না ?
জি রাখবে মুসলমানরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত মনে করে দাড়ি রাখে , অমুসলিমদের অনুসরণ করার জন্য নয় । এর বহু উদাহরণ আছে বুঝার জন্য একটি তুলে ধরা হলো কারণ জ্ঞানী মানুষের জন্য ইশারাই যথেষ্ট ।
বিস্তারিত জানতে স্কিনশট টি পড়ুন
(৪) অনেকে বলছেন ৭৮৭ “বিসমিল্লাহ” এর মান আর ৭৮৬ হরে কৃষ্ণের মান , এ কথা কি ঠিক?
এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার । “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” এর অক্ষর হল ১৯টি । তাই আদাদ বের করার সময় ১৯ টি অক্ষরের আদাদ বের করতে হবে । বেশি বের করা মানে মূর্খের পরিচয় দেওয়া । আর ১৯টি অক্ষরের আদাদ বের করলে ৭৮৬ হবে ৭৮৭ হবে না । এ প্রবন্ধের প্রথমদিকে এ বিষয়ে মোটামুটি আলোচনা করা হয়েছে ।
(৫) অন্ধ ভক্তদের জন্য কিছু উপদেশ ।
যারা অন্ধ ভক্ত তাদের প্রতি কিছু উপদেশ । আপনারা কোন কিছু কারো মুখ থেকে শুনলে তার কথা বিশ্বাস করে বসে থাকেন এটা সম্পূর্ণ ভুল । নিজের বুদ্ধি আছে জ্ঞান আছে নিজেও ভাবতে শিখুন । যেকোনো বিষয় তাদের ভালো না লাগলে শিরকক ও বেদাত বলছে আর আপনারা সেটা বিশ্বাস করছেন । যারা যাচাই-বাছাই না করে কারো কথা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক বিশ্বাস করে নেই , তাদেরকে অন্ধভক্ত বলে । তাই অন্ধভক্ত হবেন না ।
শেষ কথা :- ৭৮৬ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে লেখা সম্পূর্ণ জায়েজ , তবে ৭৮৬ মানে “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” নয় । মূলত এটা “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” এর আদাদ বা সংখ্যা বা মান । ৭৮৬ লেখলে কোন নেকী হবে না তবে যদি কেউ তা দেখে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” পাঠ করে তাহলে নেকী পাবে ।
চিঠি , হ্যান্ডবিল, ক্যালেন্ডার, বিবাহের কার্ড ইত্যাদিতে ৭৮৬ লেখা হয় কারণ তা কোথাও নোংরা জায়গায় পড়ে গেলে বেয়াদবি হবে না এবং কোনো গুনাহ হবে না । আর তা দেখে যদি কেউ সম্পূর্ণ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পাঠ করে , তাহলে ত পাঠ করার বরকত লাভ করবে ।
৭৮৬ মানে কি তা আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।
উত্তর লিখেছেন
আব্দুল আজিজ কাদেরী
প্রবন্ধের পরিবর্তন না ঘটিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে সঠিক বার্তা সকলের মাঝে পৌঁছে দিন ও সাওয়াবে দ্বারায়েন হাসিল করুন ।
ইলমুল আদাদ বের করার নিয়ম হলো প্রত্যেক অক্ষর যেগুলি লেখতে আসবে সেগুলোর মান বের হবে । যদি কোন অক্ষরের ওপর তাসদিদ থাকে তাহলে সেটার দুই বার মান বের হবে না বরং একবার মান বের হবে । বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম এ ১৯ অক্ষর আছে , অনেকে খাড়া জবরগুলো অক্ষর হিসাবে ধরে তার মান বের করে মানুষদের উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে থাকেন । এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না এটা নিজের মনগড়া,,,,, উল্লেখিত লেখায় দুটি কথা পরিষ্কার বলা হয়েছে যে “বিসমিল্লাহর” মধ্যে তাসদিদ ওয়ালা হরফ গুলো অর্থাৎ দুটি হরফ থেকে একটির মান নেওয়া হবে,,, কেন?????
২/ খাড়া যবর অর্থাৎ যেটি আলিফ এর কায়েম মকাক এই রুপ খাড়ি যের উল্ঠা ফেশ যে গুলো ইয়া &ওয়াও এর কায়েম মকাম এই গুলার মান কেন নেওয়া হয়না??? উত্তর জানালে অনেক উপকৃত হবে,, ,,,,,
শিক্ষার তরে
ইলমুল আদাদ এর নিয়ম অনুযায়ী গণনা হয়ে থাকে । আরবিতে যেমন ইসিমের শুরুতে “বা”(ب) অক্ষর থাকলে সেটা মাজরুর(শেষে জের) পড়তে হয়। শব্দের শুরুতে ইননা (ان) আসলে পরের ইসিমটি যাবার পড়তে হয় । কেউ যদি প্রশ্ন করে কেন এমন করতে হয় এর উত্তর হলো এটাই গ্রামার । কেউ যদি এর বিপক্ষে পড়ে তাহলে ভুল করবে । তেমনি ইলমুল আদাদের কিছু নিয়ম আছে, গ্রামার আছে গ্রামারে যেমন বলা হয়েছে সেই ভাবেই করতে হবে । অতিরিক্ত করতে গেলে ভুল হবে । যেমন কিছু মাওলানা নিজের ইচ্ছামত ইলমুল আদাদ বের করতে গিয়ে সমাজে ফিতনা ছড়িয়েছেন । তার জবাব দেওয়ার জন্য এই প্রবন্ধটি লিখা হয়েছিল । আশা করি বুঝতে পেরেছেন । ধন্যবাদ