জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম? লাইফ ইন্সুরেন্স

জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম? এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য এই প্রবন্ধের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে ।

জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম?

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মানুষ বীমা করে থাকে । বিভিন্ন প্রকারের বীমা আছে যেমন- জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, ব্যবসার বীমা ইত্যাদি । বর্তমানে বিভিন্ন প্রকারের বীমা আমরা দেখতে পাচ্ছি তার মধ্যে একটি হলো জীবন বীমা ।

জীবন বীমা সম্পর্কে অনেকেই সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন যে জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম? প্রবন্ধটি পড়ার পর আপনার সংশয় দূর হয়ে যাবে । ইনশাআল্লাহ

আলোচনার বিষয়-

(১) জীবন বীমা কাকে বলে?
(২) জীবন বীমা কেন করা হয়?
(৩) জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম?
(৪) চাকরী সূত্রে জীবন বীমা
(৫) বৈধ জীবন বীমা কেমন?
(৬) উপসংহার
(৭) গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

জীবন বীমা কাকে বলে?

জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যা একজন বীমা গ্রহীতা ও একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত হয়; যেখানে বীমা প্রতিষ্ঠান এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারকে প্রদান করবে।

জীবন বীমা কেন করা হয়?

বীমা গ্রহীতার সুবিধা হচ্ছে “মানসিক প্রশান্তি” লাভ; কারণ তিনি জানেন যে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা অর্থ সমস্যায় পতিত হবে না। তার পরিবারের লোকেরা সেই অর্থ দিয়ে প্রয়োজন মেটাতে পারবে । ব্যবসা-বাণিজ্য করে উপার্জন করে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে ।

জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম?

বর্তমানের প্রচলিত জীবন বীমা করা হারাম ২টি কারণে ।
(১) বীমা বিষয়ক কোম্পানিগুলি বেশিরভাগ সুদের সঙ্গে যুক্ত ।
(২) জীবন বীমা নাম দিয়ে চলছে গোপন জুয়া।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মৃত্যু হলে টাকা পাবে নচেৎ না । বর্তমানে বাজারের প্রচলিত লটারির টিকিটের মত । লটারির নাম্বার কোম্পানির নির্দিষ্ট প্রাইজের নাম্বারের সঙ্গে মিলে গেলে টাকা পাওয়া যাবে নচেৎ না ।

একটু চিন্তা করুন জীবন বীমা করার পর মৃত্যু হলে পরিবার টাকা পাবে। না হলে টাকাটা কোম্পানি আত্মসাৎ করে নেবে । যা সম্পূর্ণ জুয়া তাই প্রচলিত জীবন বীমা স্পষ্ট হারাম ।

চাকরী সূত্রে জীবন বীমা

সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বহু সংস্থা আছে, যারা জীবন বীমা করার প্রতি অত্যান্ত জোর দিয়ে থাকে । যদি মনে হয় জীবন বীমা না করলে চাকরিতে রাখবে না তাহলে সেটা করা যেতে পারে । অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম বলেছেন এটা কোম্পানির পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে বিবেচনা করে নিতে হবে। তবে যদি জীবন বীমা ঐচ্ছিক হয় তাহলে তাক করা যাবে না ।

বৈধ জীবন বীমা কেমন?

যদি এমন কোন ফান্ড থাকে যেখানে মানুষ সমর্থ্য অনুযায়ী টাকা জমা করে। আর সেই টাকা দ্বারা মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সাহায্য করে তাহলে সেটা জায়েজ ।

আর ফান্ডের টাকা কোন ভাল কোম্পানিতে ইনভেস্ট করে সেই লাভভ্যাংশ বৈধ হবে । তবে ইনভেস্ট করার পূর্বে অবশ্যই যাচাই বাছাই করতে হবে যে, কোম্পানি হালাল ব্যবসা করে কিনা এবং সুদ থেকে দূরে থাকে কিনা ।

উপসংহার:

সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদেরকে আমি জীবন বীমা সম্পর্কে অবগত করালাম। জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম? আশা করি এই বিষয়ে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন । যদি জীবন বীমা না করার কারণে চাকরি চলে যায় অথবা সরকারের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয় বিভিন্ন প্রকার বীমার জন্য (যেমন গাড়ি চালকের বীমা, কৃষি বীমা, স্বাস্থ্য বীমা ইত্যাদি) তাহলে বীমা করতে পারবেন এর জন্য আপনি দায়ী থাকবেন না । অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পার্শ্ববর্তী যোগ্য উলামার পরামর্শ নেবেন ।

জীবন বীমা কেন হারাম?

বর্তমানের প্রচলিত জীবন বীমা সাধারণত দুটি কারণে হারাম (১) সুদ (২) জুয়া।

ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করা কি বৈধ?

সাধারণত ইন্সুরেন্স (বীমা) কোম্পানিগুলি বেশিরভাগ সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত । আপনি যে কাজটি করবেন সেটি যদি সুদের সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে সেটি বৈধ হবে না ।

কিছু কিছু ইন্সুরেন্স সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে করনীয় কি?

কিছু কিছু ইন্সুরেন্স (বীমা) যেমন- বাইক ইন্সুরেন্স, কার ইন্সুরেন্স, স্বাস্থ্য ইন্সুরেন্স ইত্যাদি । যে সমস্ত বীমা গুলি সরকারের পক্ষ থেকে অপরিহার্য করে দেওয়া হয়েছে সেগুলি করা যাবে এর জন্য আপনি গুনাগার হবেন না ।
তবে যদি ইন্সুরেন্স ঐচ্ছিক হয় (করলেও হবে অথবা না করলেও হবে) তাহলে কোন অবস্থাতেই সেটা জায়েজ হবে না ।

Spread the love

Leave a Comment