মাওলা আলী (রাঃ) কেন বলা হয়?

বিদায় হজ্জের পর মদীনায় ফেরার পথে নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম জুহফা নামক স্থানে একটি জলাশয় বা গাদির এর নিকট সাহাবিদের অবস্থান করার আদেশ দিলেন। (১)
এ অঞ্চল পরবর্তীকালে সীরাত গ্রন্থে বিখ্যাত “গাদীরে খুম” নামে পরিচিতি লাভ করে । এখানে নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত আদায় করেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ” মুমিনগণ, তোমরা কি জানোনা যে আমি তোমাদের হৃদয়াপেক্ষাও নিকটবর্তী?” (২)
[একথা সুরা আহযাবে ষষ্ঠ আয়াতে এসেছে, “আন্নবিয়্যু আওলা বিল মু’মিনীনা মিন আনফুসিহিম”]
তখন সাহাবীরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে একাত্মতা পোষণ করলেন।

নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একপর্যায়ে ভাষণে নিজের চাচাতো ভাই হযর‍ত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর হাত ধরে উঁচুতে তুলে ধরলেন এবং বললেন, “ মান কুনতু মাওলাহু ফা আলিয়্যুন মাওলা”- অর্থাৎ, “আমি যার মওলা আলী ও তার মওলা”। (৩, ৪)

এদিনের পর থেকে হযর‍ত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ‘মওলাইয়্যত’ বা ‘বন্ধু ও অভিভাবক” হবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রাপ্তি হয়।

তখন,আফদ্বলুন্নাস বা’দাল আম্বিয়া সৈয়্যদুনা সিদ্দিকে আকবর আবুবকর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং ফারুকে আযম সৈয়্যদুনা উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বললেন,
”হে আলী ইবনে আবি তালিব, আপনাকে অভিনন্দন জানাই, এখন আপনি আমার মওলা, আপনি প্রত্যেক মুমিন-মুমিনার মওলা হয়ে গেলেন।(৫)
জমহুর ওলামায়ে কিরামের মতে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে নবুয়্যতের খতম ঘটেছে এবং উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বেলায়েত এর দরজা উন্মুক্ত হয়েছে আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মওলাইয়ত প্রাপ্তির মাধ্যমে। স্পেসিফিক্যালি রাফেজিরা এই জায়গায় এসে পথভ্রষ্ট হয়েছে।

গাদীরে খুমের ঘোষণার দিবস হিসেবে তারা ঈদে গাদির পালন করে থাকে এবং মওলায়ে কায়েনাত এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। আক্বায়েদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত এর অনুসারে, সৈয়্যদেনা আলী মরতুজা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ফাদ্বায়েল অনবদ্য, কিন্তু তা কোনো সাহাবীকে ছোট করার মাধ্যমে কখনোই নয়।

শিয়াদের বিখ্যাত কিতাব “নহয-আল-বালাঘা” তে ও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বরাতে আছে। উনি বলেন, দুই প্রকারের লোক ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রথম যারা অতিরঞ্জিত করার মাধ্যমে যা আমার মধ্যে নেই তা বর্ণনা করে, দ্বিতীয়ত আমার মর্যাদাকে খাটো করার চেষ্টা করে।

আজ ঐতিহাসিক ১৮ই জিলহজ্জ্ব, সৈয়্যদেনা মওলায়ে কায়েনাত হযর‍ত আলী আলাইহিমুসসালাম/ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু/ কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর “মওলাইয়্যত” প্রাপ্তির দিন। আল্লাহ আমাদেরকে নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলায় আহলে বায়েত আলাইহিমুস সালাম কে যথাযথ মর্যাদা ও ভালবাসার(৬) তাওফিক দান করুন।

তথ্যসূত্রঃ-
১. মাদারেজুন নবুয়্যত-শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী, ৭ম খন্ড,গাদীরে খুম অধ্যায়

২. ★মুসনাদে আহমদ (৪র্থ খন্ড)
★মুসান্নাফে আবি শায়বা(১২শ খন্ড,১২১৬৭ নং)
★তারিখে দামেশক-ইবনে আসাকির রহ.(৫ম খন্ড)
★ফাদ্বায়েলুস সাহাবা-আহমদ ইবনে হাম্বল(২য়খন্ড,১০৪২নম্বর)

৩. ★মুসতাদরাকে ইমাম হাকেম(৩য় খন্ড,৬২৭২)বোখারি-মুসলিমে শর্তে ইমাম হাকেম নিশাপুরী একে সহীহ বলেছেন,ইমাম যাহাবীও এর সহীহ হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন
★ মুজামুল কবীর- ইমাম তাবারানী(৫ম খন্ড)
৪. জামে আত তিরমিজি, ৩৭১৩

৫. ★তফসিরে মাফাতিহুল গায়ব-আল্লামা ফখরুদ্দীন আর-রাযী(১২শখন্ড)
★তফসিরে দুররে মনসুর-জালালুদ্দীন সূয়ুতী(২য়খন্ড)
★তফসিরে রুহুল মা’আনী- আল্লামা শিহাবুদ্দীন আলূসী (৬ষ্ঠ খন্ড,১৩২পৃষ্ঠা)
★ইমাম ইবন হাজার হায়সামী : সাওয়ায়েক মুহরিকা, ৯১পৃ)
★মুসনাদে আহমদ আল ইবন হাম্বল(৪র্থ খন্ড)

৬. সুরা শু’আরা ২৩

Spread the love

Leave a Comment