সহিহ ভাবে কুরআন শিখতে হলে বা আরবী উচ্চারণ শিখতে হলে মাখরাজের জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে । এই মাখরাজের জ্ঞানকেই ইলমুল তাজবিদ বা (তাজবিদের জ্ঞান/শিক্ষ) বলে । এই একটি লেখনির মাধ্যমে মাখরাজ সম্পর্কে যথেষ্ট বুঝে যাবেন, ইন শা আল্লাহ।
মাখরাজ শিক্ষা
সহজভাবে বলতে গেলে হরফ উচ্চারণের স্থানকে মাখরাজ বলে। যে জায়গা থেকে হরফ বের হয় ঐ জায়গাকে ঐ হরফের মাখরাজ বলে। আরবী হরফ হচ্ছে ২৯টি আর তার মধ্যে মাখরাজ ১৭টি।উচ্চারণ এর স্থান হচ্ছে ৩টি। যথা-
- ঠোঁট
- মুখের ভিতর
- কণ্ঠ নালী ( যাকে হলক বলা হয়)
কোথা থেকে কোন হরফ বের হয় এবার জেনে নিন-
১. নাম্বার মাখরাজ:- কণ্ঠনালির শুরু হইতে – ء ه (হামজাহ, হা’)
২. নাম্বার মাখরাজ:- কণ্ঠনালির মধ্যখান হইতে – ع ح (আ’ইন, হা’)
৩. নাম্বার মাখরাজ:- কণ্ঠনালির শেষ হইতে – ع خ (গইন, খ’)
৪. নাম্বার মাখরাজ:- জিহবার গোড়ার বরাবর উপরের তালুর সঙ্গে লাগিয়ে -ق (ক্বাফ) উচ্চারিত হয়।
৫. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার গোড়া থেকে একটি আগে বাড়াইয়া তার বরাবর উপরে তালুর সঙ্গে লাগাইয়া- ك (কাফ) হয় ।
৬. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার মধ্যখান তার বরাবর উপরে তালুর সঙ্গে লাগাইয়া – ج ش ی ( জ্বিম, শীন, ইয়া) উচ্চারিত হয়।
৭. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার গোড়ার কিনারা উপরের মাড়ির দাঁতের গোড়ার সঙ্গে লাগাইয়া – ض ( দ্ব’দ) উচ্চারিত হয় ।
৮. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার আগা, সামনের উপরের দাঁতের মাড়ির সঙ্গে লাগাইয়া – ل (লাম) উচ্চারিত হয়।
৯. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার আগা তার বরাবর উপরে তালুর সঙ্গে লাগাইয়া- ن ( নূন) উচ্চারিত হয় ।
১০. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার আগার পিঠ, তার বরাবর উপরে তালুর সঙ্গে লাগাইয়া- ر ( র’) উচ্চারিত হয় ।
১১. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার আগা, সামনের উপরের দুই দাঁতের গোড়ার সঙ্গে লাগাইয়া- ط د ت ( ত্ব, দ্বাল, তা) উচ্চারিত হয়।
১২. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার আগা সামনের নিচের দুই দাঁতের পেটের সঙ্গে লাগাইয়া- ص س ز (স্ব’দ, চিন, যাহ) উচ্চারিত হয়।
১৩. নাম্বার মাখরাজ:- জিহ্বার আগা, সামনের দুই আগার সঙ্গে লাগাইয়া – ظ ذ ث (জ্ব, জাল, চা’) উচ্চারিত হয়।
১৪. নাম্বার মাখরাজ:- নিচের ঠোঁটের পেট, সামনের উপরের দুই দাঁতের আগার সঙ্গে লাগাইয়া- ف (ফা) উচ্চারিত হয়।
১৫. নাম্বার মাখরাজ:- দুই ঠোঁটের মধ্যখান থেকে উচ্চারিত হয় – ب و م ( বা, ওয়াও, মীম) উচ্চারিত হয়।
১৬. নাম্বার মাখরাজ:- মুখের খালি যায়গা হইতে মাদ্দের হরফ উচ্চারিত হয়- ا و ی (আলিফ, ওয়াও, ইয়া) উচ্চারিত হয়।
১৭. নাম্বার মাখরাজ:- নাকের বাঁশী হতে গুন্নাহ উচ্চারিত হয়। اِنَّ-اَنَّ-اَم (আন্না, ইন্না, আম্মা) ইত্যাদি।
কলক্বলাঃ
ক্বলক্বলা মানে ড্রফ ব প্রতিধ্বনি করে পড়া৷
ক্বলক্বলার হরফ পাঁচ টি – ق ط ب ج د
নিয়মঃ ক্বলক্বলার হরফে সাকিন বা তাসদীদ হলে – এর পর ওকাকফ হলে ক্বলক্বলা করে পড়তে হয় ৷
যেমনঃ
قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ ও قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ
মাদঃ
টেনে বা লম্বা করে পড়াকে মাদ বলে৷ মাদের হরফ তিন টি – ا و ی
এক আলিফ মদ তিন প্রকারঃ
১. মদ্দে ত্ববায়ী
২. মদ্দে বদল
৩. মদ্দে লীন
তিন আলিফ মাদ দুই প্রকারঃ
৪. মদ্দে আরজী
৫. মদ্দে মুনফাসসিল
চার আলিফ মাদ পাঁচ প্রকারঃ
৬. মদ্দে মুত্তাসিল
৭. মদ্দে লাজিম কালমি মুসাক্কাল
৮. মদ্দে লাজিম কালমি মুখাফফাপ
৯. মদ্দে লাজিম হারফি মুসাক্কাল
১০. মদ্দে লাজিম হারফি মুখাফফাফ
নূনে সাকিন ও তানবীনঃ
নূনে সাকিন এবং তানবীন চার(৪) নিয়মে পড়া যায়৷
ক) ইজহার
খ) ইক্বলাব
গ) ইদগাম
ঘ) ইখফা
ইজহার:- ইজহার অর্থ স্পষ্ট করে পড়া ৷ নূনে সাকিন বা তানবীন এর পর ’ইজহার’ এর হরফ আসলে উহাকে গুন্নাহ ও ওয়াকফ ছাড়া স্পষ্ট করে পড়িতে হয় ৷ ইজহারের হরফ ৬ টি –
ء ه ع ح ع خ
উহাহারণঃ-
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
ইক্বলাবঃ- ইক্বলাব অর্থ বদল করে পড়া ৷ ইক্বলাবের হরফ একটি – ب নূনে সকিন বা তানবীন এর পর ইক্বলাবের হরফ(ب ) আসলে ঐ নূনে সাকিন বা তানবীন কে (م ) দ্বারা বদল করে পড়তে হয় ৷
উদাহারণ-
منٗ بعدؔ
سَمِيع بسر
ইদগামঃ- ইদগাম অর্থ মিলিয়েপড়া ৷ ইদগাম দুই প্রকার ৷
১. ইদগামে বা’গুন্নাহঃ নূনে সাকিন বা তানবীন এর পর ی م و ن এই হরফগুলি আসলে ওই অক্ষরকে নূনের সাথে মিলিয়ে গুন্নাহ করিয়া পড়িতে হয় ৷
উদাহারণঃ-
فَمَن یعمل
২. ইদগামে বেলা’গুন্নাহঃ– নূনে সাকিন বা তানবীন এর পর ر لـ এই দুই হরফ আসলে গুন্নাহ চাড়া মিলিয়ে পড়তে হয়৷
উদাহারণঃ-
من ربؔکَ
ইখফাঃ ইখফা মানে গোপন করা৷ ইখফার হরফ ১৫ টি ৷ যথাক্রমে ت ث ج د ذ ز س ش ص ض ط ظ ف ق ك নূনেসাকিন বা তানবীনের পর ইখফার হরপফ আসলে গুন্নাহ সহ, ইখফা করে পড়তে হয় ৷
উদাহারণঃ- ومن ضل
নূনের উপর তাসদীদ থাকলে (نّ) গুন্নাহ করা ওয়াজীব ৷ মীমের উপর তাসদীদ থাকলে (مّ) গুন্নাহ করা ওয়াজীব ৷
মিমের উপর সাকিন (مٗ) হলে মিমে সাকিন বলে৷
মিমে সাকিনের ৩ টি নিয়ম আছে৷
ক) ইখফাঃ মিমে সাকিন এর পর বা (ب) হরফ আসলে গুন্নাহ সহো স্পষ্ট করিয়া পড়তে হয়৷
উদাহারণঃ-
وماهمٗ بِمُمنین
খ)ইদগামঃ- মিমে সাকিন এর পর মীম (م) হরফ আসলে ইদগাম ও গুন্নাহ করিয়া পড়তে হয়৷
উদাহারণঃ-
قُلُبِهِمٗ مَرَض
গ)ইজহারঃ– মীমে সাকিন এর পর ب م ছাড়া বাকি সব হরফ এ ইজহার হবে৷
উদাহারণঃ-
لَمّ یکُن
তাজবিদ এর গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো খুবই সংক্ষেপে আলোচনা করা হইলো ৷ একটু মনযোগ দিয়ে পড়লে মাখরাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বুঝে যাবেন । ইন শা আল্লাহ
আরো পড়ুন…