ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া বা অন্য কোন কাজ করানো কি বৈধ হবে?

ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া বা অন্য কোন কাজ করানো কি বৈধ হবে?

প্রশ্ন:- ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া বা অন্য কোন কাজ করানো কি বৈধ হবে?

উত্তর:- এই প্রশ্নের উত্তর একটু জটিল । তাই গভীরভাবে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন তাহলে সঠিক উত্তর জানতে পারবেন ।

ঘুষ (bribe) কাকে বলে?

কোনো উদ্দেশ্য সাধনে, অনৈতিক ভাবে গোপনে দেয়া এবং নেয়া অর্থ বা দ্রব্যাদিকে, ঘুষ বলা হয়।

ঘুষের ধরন:

বিভিন্ন ধরনের ঘুষ আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তারমধ্যে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি তুলে ধরা হলো,

(১) কোন বিচারককে অর্থ দিয়ে তার পক্ষে ফায়সালা নেওয়া । এক্ষেত্রে বিচারক ঘুষ গ্রহীতা এবং যে দিল সে ঘোষ দাতা বলে গন্য হবে ।

(২) সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী (সরকার যে কাজের জন্য তাকে বেতন দিয়ে রেখেছে) সেই কাজ করার জন্য জনসাধারণের কাছে কোন কারণ ছাড়া অতিরিক্ত আবার কিছু অর্থ নেওয়া ঘুষ বলে গণ্য হবে ।
তবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সেই কাজের জন্য কোন প্রকারের অর্থ নির্ধারণ করা থাকে তাহলে সেটা ঘুষ বলে গণ্য হবে না । যেমন- ফরম,ফি, ওপেনিং চার্জ, ক্যান্সলেশন চার্জ, ইত্যাদি ।

(৩) কারো হাতে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আছে আর সে যদি উপযুক্ত কর্মচারী নিযুক্ত না করে অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছামত চাকরি দেয় । তাহলে সেটা ঘুষ বলে গণ্য হবে ।

ঘুষ ও হাদিয়ার মধ্যে পার্থক্য

এর ফলে যোগ্যতা থাকার পরেও বিভিন্ন সংস্থানের উপযুক্ত ব্যক্তিরা চাকরি পায় না । গোটা দেশটাই এমন দুর্নীতিতে ভরে গেছে । এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণ কি কোরবে এ বিষয়টি প্রবন্ধের শেষে আলোচনা করব । আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জেনে নেওয়া যাক ।

বর্তমানে ঘুষখোররা ঘুষ খাওয়ার এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে তাহল, আমরা ঘুষ নিচ্ছি না বরং হাদিয়া নিচ্ছি । তাই তাদের কালো মুখোশ খুলে দিতে ঘুষ ও হাদিয়ার কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরা হলো-

(ক) হাদিয়া খুশি হয়ে দেয়, আর ঘুষ নিরুপায় হয়ে দেয় ।

(খ) হাদিয়া দেওয়া ও নেওয়া নেকির কাজ, আর ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া গুনাহের কাজ ।

(গ) হাদিয়া’ হ’ল কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই কাউকে কোন কিছু প্রদান করা,আর অন্যায়ভাবে কিছু পাওয়ার আশায় কাউকে কিছু প্রদান করা ঘুষ।

(ঘ) হাদিয়া বন্ধুত্বের বন্ধন মজবুত করে এবং মনকে নরম করে, আর ঘুষ সম্পর্ক নষ্ট করে এবং মনকে কঠোর করে দেয় । ইত্যাদি

ঘুষ নেওয়া ও দেওয়ার শাস্তি

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে বলেন, “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং কোনো বিচারককে ঘুষ দিও না যাতে জেনেশুনে মানুষের কিছু সম্পদ ইচ্ছাকৃত ভাবে গ্রাস করতে পার”। (সূরা বাকারা: আয়াত- ১৮৮)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,‘তাদের অনেককেই তুমি দেখবে পাপে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর; তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬২)

তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনায় এসেছে- ঘুষের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি জালেম এবং আল্লাহর কাছে সে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঘুষের প্রতি নিন্দা এবং তা আদান-প্রদানকারীর ওপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত(অভিশাপ)করেছেন। –

পবিত্র হাদীছ শরীফ এর মধ্যে রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসুল বলেছেন- ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত(অভিশাপ)। (সুনানে আবু দাউদ ৩৫৮০, সুনানে তিরমিজী,১৩৩৬)

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারলাম ঘুষ দেওয়া এবং ঘুষ নেওয়া দুটোই হারাম এবং গুনাহের কাজ ।

এবার আজকের মূল প্রশ্নের উত্তরে আসি–

ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া কি বৈধ হবে?

ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই হারাম। ফলে ঘুষ দিয়ে চাকরি অথবা অন্য কোন কাজ করানো হারাম হবে । তবে যদি কোন উপায় না থাকে, বিকল্প কোন পথ না থাকে, কর্তৃপক্ষরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে, ঘুষ না দিলে নিজের বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, জীবনে সেই কাজটি আর হবে না অথবা ঘোষ ছাড়া চাকরি হওয়ার সম্ভব না এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, সে অবস্থাতে ঘুষ দিয়ে চাকরি অথবা অন্য কোন কাজ করি নিতে পারবেন ।

এক্ষেত্রে যেহেতু ঘুষ দাতা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে, দুর্নীতিবাজদের চাপে, নিরুপায় হয়ে ঘুষ দিয়েছে তাই সে মুক্তি পেয়ে যাবে । ইনশাআল্লাহ । তবে ঘুষ গ্রহীতা মাপ পাবে না, এমনকি সে যদি তওবা করে নেই তাও মাফ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে টাকাটা ফেরত দিবে । (কারণ সে অন্যায় ভাবে অর্থ নিয়েছে) তওবা করে টাকা ফেরত না দিলে পরকালে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হবে ।

গুরুত্বপূর্ণ কথা: যদি পরিস্থিতি ঠিক থাকে ঘুষ ছাড়াই সবকিছু হওয়া সম্ভব থাকে, আর ঘুষ দাতা কোন যোগ্য ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সে পোস্ট দখল করতে চাই, তাহলে সম্পূর্ণ হারাম হবে ।

আশা করি উত্তরটি বুঝতে পেরেছেন, এরপরে কোন প্রশ্ন থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন ।

উত্তর দাদা
আব্দুল আজিজ কাদরী
(মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ)

এবার পড়ুন

Spread the love

Leave a Comment