নবী(ﷺ)কি লিখতে জানতেন ?

নবী(ﷺ)কি লিখতে জানতেন ?

আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, বর্তমান যুগে ঈমান ও আকিদা খারাপ করার জন্য, অসংখ্য মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে । সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ও প্রসার যত বেশি ঘটছে, ততবেশি তারা মন খুলে ঘরের কোণে বসে খারাপ আকিদা প্রচার করছে । সাধারণ ঘরের অসংখ্য মুসলিম যুবক তাদের ফাঁদে পা দিয়ে, ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছে । বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কোনো কিছু বিশ্বাস করার পূর্বে নিজেকে একবার যাচাই করে নিতে হবে । আজ অনেক শিক্ষিত মুসলিম ভাইদের মুখে শোনা যাচ্ছে, তারা বলছেন নবী(ﷺ) লিখতে পড়তে জানতেন না । তাদেরকে এই বলে বোঝানো হচ্ছে যে, নবী (ﷺ) পৃথিবীতে কারো কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেননি তাই তিনার আক্ষরিক জ্ঞান ছিল । আল্লাহতালা ওহী নাজিল করলে তিনি তা মুখস্ত করে ,হুবাহু মানুষদের সামনে বলতেন । কোনটা কি অক্ষর তিনি তা জানতেন না । নাউজুবিল্লাহ

কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল পেশ করার পূর্বে, আপনাদের সামনে একটি সাধারণ যুক্তি তুলে ধরতে চাই । কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার জন্য শিক্ষক নিয়োগের সময় তার যোগ্যতা কি দেখা হয় না? অবশ্যই দেখা হয় । কেউ যদি লেখতে না পারে তার আক্ষরিক জ্ঞান না থাকে, তাহলে কি কেউ তাকেস শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করবে ? এর উত্তর হবে ”না” তা একজন পাগল মানুষও জানে ।

নবী (ﷺ) সারা বিশ্বের জন্য শিক্ষক । নবী(ﷺ)বলেন “إنّما بُعِثت معلّماً” “নিশ্চয় আমি শিক্ষক হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছি” । সমস্ত পৃথিবীর শিক্ষক যিনি তিনি লিখতে জানবেন না, পড়তে জানবেন না, তার আক্ষরিক জ্ঞান থাকবে না এটা কিভাবে সম্ভব ।?

পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তা’আলা বলেন ” وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا”
আমি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছি যাহা-কিছু আপনি জানতেন না, আপনার উপর এটা আল্লাহর এক বিশাল বড় অনুগ্রহ”(সূরা নিসা-১১৩)
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ তাআলা নবী (ﷺ) যাবতীয় জ্ঞান দান করেছেন । আক্ষরিক জ্ঞানও তার অন্তর্ভুক্ত ।

হজরত বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ- তিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নবী (ﷺ)উমরাহ এর উদ্দেশ্যে বের হলেন । কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। (মক্কাতে প্রবেশ করতে বাধা দিলো) অবশেষে এই শর্তে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করলেন (হুদাইবিযার সন্ধি হয়) যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহ্‌র রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)। তারা (মুশরিকরা) বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহ্‌র রসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহ্‌র পুত্র মুহাম্মদ। তিনি (ﷺ) বললেন, ‘আমি আল্লাহ্‌র রসূল এবং আবদুল্লাহ্‌র পুত্র মুহাম্মদ। অতঃপর তিনি আলী (রাঃ)–কে বললেন, আল্লাহ্‌র রসূল শব্দটি মুছে দাও। আলী (রাঃ) না। আল্লাহ্‌র কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না।

فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْكِتَابَ، فَكَتَبَ هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ

আল্লাহ্‌র রসূল (ﷺ) তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন,এ সন্ধিপত্র মুহাস্মদ ইবনে ‘আবদুল্লাহ্‌ সম্পন্ন করেন-

খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না।

মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে নিবেন না (সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন না)।

আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না। (অন্য বর্ণনা মতে আরো কিছ সন্ধির শর্ত পাওয়া যায়)

তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলী (রাঃ)-কে বলল, ‘তোমার সঙ্গীকে আমাদের এখান হতে বের হতে বল। কেননা নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। নবী (ﷺ) রওয়ানা হলেন ৷ তখন হামযার কন্যা হে চাচা, হে চাচা, বলে তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী (রাঃ) তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাহকে বললেন, এই নাও, তোমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি। আলী (রাঃ) যায়েদ ও জা‘ফর (রাঃ) তাকে নেয়ার ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। আলী (রাঃ) বললেন আমি তার অধিক হক‌দার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জা‘ফর (রাঃ) বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী। যায়েদ (রাঃ) বললেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে।’ অতঃপর নবী (ﷺ) খালার পক্ষে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, ‘খালা মায়ের স্থান অধিকারিণী।’ আর ‘আলীকে বললেন, ‘আমি তোমার এবং তুমি আমার।’ জা‘ফরকে বললেন, ‘তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ। আর যায়দকে বললেন, ‘তুমি তো আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম।’

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৯৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

এ হাদীসটি পড়ার পর নবী (ﷺ) লিখতে জানতেন, তা আপনাদের আর বুঝতে বাকি নেই। পরবর্তীতে এসব খারাপ আকিদা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেন ।

একজন বাদশা যদি সব কাজ নিজেই করবেন তাহলে, উজির, মন্ত্রী,লেখক, কর্মী দরবারে রাখার প্রয়োজন কি? । এবার যদি কেউ প্রশ্ন করে বাদশা এসব কাজ নিজে করতে পারবেন না । তাহলে তার প্রশ্ন ভুল বলে বিবেচিত হবে । কারণ বাদশার দায়িত্ব বাদশাহী করা,আর কর্মীদের দায়িত্ব বাদশার আদেশ অনুযায়ী কাজ করা । বাদশা লিখতে জানেন, কাজকর্ম করতে পারবেন টিকই কিন্তু তিনি নিজে কররেন না, কর্মী দ্বারা করারন। এরমানে মানে এটা প্রমাণিত হয় না যে তিনি জানেন না বলে কর্মী দ্বারা করার । এছাড়া বুছার জন্য একিটি সহজ উদাহারণ হল, প্রত্যেক মানুষের কাছে দুইজন সম্মানিত ফেরেস্তা লেখক নেকি ও গুনহা লেখার জন্য উপস্থিত থাকেন। এখন কেউ যদি বোকার মত প্রশ্ন করে, আল্লাহ কি লিখতে জানেন না ,তাই ফেরেশতাদের নিযুক্ত করেছেন? তাহলে তার প্রশ্ন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না । প্রশ্নকারী যদি ঐ আকিদায় বিশ্বাসী হয় তাহলে সে বেইমান বলে বিবেচিত হবে। ইসলামের শীতল ছায়া তলায় তার স্থান হবে না । তবে নিজের ভুল বুঝে তওবা করে নতুন করে কালিমা পড়ে যদি আবার মুসলমান হয় তাহলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে স্থান পাবে ।

বর্তমানে ইহুদি খ্রিস্টান ও মুশরিকরা বিভিন্ন খারাপ আকিদা মুসলিমদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের ফায়দা তুলতে চাইছে । মুসলমানদের বুঝতে হবে নইলে ঈমান-আমল ও সম্মান সবাই হারাবে । আমরা কখনোই নবী (ﷺ) র বিরুদ্ধে কোনো খারাপ মন্তব্য করব না, আসুন এই বলে প্রতিজ্ঞা করি

আল্লাহ যেন আমাদের বোঝার তৌফিক দান করেন। আমিন

তথ্য সংপ্রহ করেছেন

আব্দুল আজিজ কাদেরী

নবী (সাঃ) এর ইলমে গায়েব সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

👆🏻

Spread the love

Leave a Comment