দরুদ ও সালাম-নাবি (সাঃ) কে কিভাবে সালাম দিতে হবে ?

দরুদ ও সালাম

আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ (রহমত) প্রেরণ করে থাকেন। (আল্লাহ তা’আলা বলেন) হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ কর এবং বেশি বেশি সালাম প্রেরণ কর। (সূরা আল আহযাব ৫৬)

পবিত্র এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহতালা মুমিনদেরকে দুটি আদেশ করেছেন।

  • দরুদ প্রেরণ করতে বলেছেন
  • সালাম প্রেরণ করতে বলেছেন

দরুদ প্রায় সকলেই পাঠ করে থাকেন কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সালাম প্রেরণ করতে খুব কমই দেখা যায় । প্রকাশ্যে পবিত্র কুর’আনের আয়াত থাকার পরেও সালাম প্রেরণ করতে অনেকেই কৃপণতা করে আবার অনেকে বিরোধিতা ও ব্যঙ্গ করে । একজন মু’মিন দরুদ ও সালামের বিরোধিতা কখনোই করতে পারে না ।

সহি দলিল দ্বারা নবী () এর প্রতি সালাম প্রেরণ করার বিষয়ে সঠিক তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব। ইনশাআল্লাহ আপনি সঠিকটা বুঝতে পারবেন ।

নবী () এর প্রতি সালাম প্রেরণ করার ফজিলত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব তারপর কিভাবে সালাম প্রেরণ করতে হবে সেটাও আলোচনা করব ।

১.আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ () বড় হাসি-খুশী ভাবে সাহাবীগণের কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আপনার রব বলেছেন,

হে মুহাম্মাদ (সাঃ) আপনি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি তার উপর দশবার রাহমাত বর্ষণ করব? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার সালাম পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাব ।

( নাসায়ী ১২৮৩, দারিমী ২৮১৫, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৯২৮)

এই হাদিসের মধ্যে দরূদের পাশাপাশি সালামের ফজিলত সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে ।

একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাম পেল করলে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি ১০ বার সালাম বা শান্তি প্রেরণ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ

২.জাবির ইবনে সামরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসের মধ্যে রয়েছে,তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমি মাক্কায় একটি পাথরকে চিনি,যে আমার প্রেরিত হওয়ার আগেও আমাকে সালাম করত; আমি এখনও তাকে চিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৩৩)

একটু চিন্তা করুন একটি পাথর নবী ()কে তার পৃথিবীতে আগমনের আগে থেকেই সালাম পেশ করত, আর নবীজি () বলছেন আমি সেই পাথরকে আজও চিনি । তাহলে আমরা যদি নবীর প্রতি সালাম প্রেরণ করি তাহলে কি তিনি আমাদেরকে চিনবেন না? অবশ্যই চিনবেন ।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে নবীজি (সাঃ)র প্রতি সালাম পাঠালে কিভাবে সেই সালাম পৌঁছায়?

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী () কে এতটা শ্রবণ শক্তি দিয়েছেন যে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে কেউ দরুদ পড়লে ও সালাম প্রেরণ করলে তা তিনি শুনতে পান । এছাড়া বড় সম্মান ইজ্জত এর সঙ্গে ফেরেস্তাগণ নবী () এর কাছে পৌঁছে থাকেন ।

৩.আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ () বলেছেন, “আল্লাহ তাআলার কতক ফেরেশতা এমন রয়েছে, যারা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছিয়ে থাকেন।” (সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৯১৪,সুনান আদ-দারেমী হাদিস নম্বরঃ ২৮১২)

পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে নবীজি () এর উম্মত সালাম পাঠালে নবীজি () তা শুনতে পান এবং তার উত্তর দিয়ে থাকেন ।

৪. আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ () বলেছেনঃ কেউ আমার উপর সালাম পেশ করলে আল্লাহ আমার ‘রূহ’ ফিরিয়ে দেন এবং আমি তার সালামের জবাব দিয়ে থাকি । (সুনান আবু দাউদ হাদিস নম্বরঃ ২০৪১)

নবী () ইন্তেকালের পূর্বে উম্মতদেরকে এই সুন্দর হাদিসগুলো উপহার দিয়ে গেছেন, যাতে করে কেয়ামত পর্যন্ত দরুদ ও সালাম পাঠানোর দরজা খোলা থাকে ।

কিন্তু দুঃখের বিষয় একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন অসংখ্য নামধারী, পেটপূজারী ওলামায়ে কেরাম কঠোরভাবে সালাম এর বিরোধিতা করে যাচ্ছে । তারা বলে থাকে সালাম দেওয়ার কথা কোথাও নেই, এসব বেদাত ইত্যাদি, আপনি যদি তাদের অনুসরণ করেন বা তাদের সমর্থন করেন তাহলে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিরুদ্ধে অবস্থান করলেন ।

নিজেকে নবীজির উম্মত বা নবীপ্রেমিক মুমিন দাবী করলে সালাম দেওয়াকে অস্বীকার করা যাবে না বা বিরোধিতাও করা যাবে না ।

সালাম দেওয়ার পদ্ধতি বিভিন্ন হতে পারে, তবে সালাম দেওয়া বেদাত নয় বরং কোরআন ও হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত ।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা প্রকৃত মুমিন তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সালাম প্রেরণ করে থাকেন । তবে সবচাইতে বেশি প্রচলিত দলিল ভিত্তিক সালাম হলো-

“ইয়া নবী সালামু আলাইকা”
অর্থ হে নবী আপনার প্রতি সালাম

এটা সম্পূর্ণ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত.যাদের আত্তাহিয়াতু মুখস্ত আছে তারা অবশ্যই সহজে বুঝতে পারবেন।

আমরা যখন আত্তাহিয়াতু পড়ি তখন নবীজি (সাঃ)র প্রতি সালাম দিতে গিয়ে বলে থাকি ।

السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ (হে নবী আপনার প্রতি সালাম)


أَيُّهَا النَّبِيُّ
এর সমার্থক শব্দ হলোঃ (يا نبى) আরবি গ্রামার অনুযায়ী দুটো একই অর্থ বহন করে এরমধ্যে আংশিক পরিমাণ কোন পার্থক্য নেই ।

তাছাড়া আপনি অন্য কোনভাবে সালাম দিতে পারেন যেমন –

  • আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুল আল্লাহ
  • মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম
  • আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ
  • ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা । ইত্যাদি

৫. আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মক্কার কোন এক প্রান্তের উদ্দেশ্যে বের হলাম। তিনি যে কোন পাহাড় বা বৃক্ষের নিকট দিয়ে যেতেন তারা তাঁকে “আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রাসূলুল্লাহ” বলে অভিবাদন জানাত। (মিশকাত,৫৯১৯,তিরমিজি,৩৬২৬)

পবিত্র কোরআনে সালাম প্রেরণ করার আদেশ আছে কিন্তু নিয়ম উল্লেখ নেই ।

তাই এমন কোন বাক্য, যার দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম প্রেরণ করা বোঝানো হয় তা দ্বারা সালাম প্রেরণ করা সম্পূর্ণ বৈধ ।

তবে ইয়া নবী সালামু আলাইকা এই বলে সালাম দেওয়ার পদ্ধতি যখন হাদীসে রয়েছে তখন তা দিয়ে সালাম দেওয়া বেশি উত্তম হবে বলে আমি মনে করি।

আমি যে সমস্ত দলিল এই প্রবন্ধের মধ্যে তুলে ধরলাম তা আপনারা মিলিয়ে নিতে পারেন । আপনাদের ইমান আকীদা আরও মজবুত হবে । ইনশা আল্লাহ

যে যত সালাম প্রেরণ করবে তার সম্পর্ক নবী () এর সঙ্গে ততো বেশি গভীর হবে । তাই যারা প্রমাণ ছাড়া শুধু মুখে বলে এটা জায়েজ নাই ওটা জায়েজ নাই তাদের থেকে সাবধান ।

আল্লাহ যেন আমাদেরকে সঠিক বুঝার তৌফিক দান করেন । আমিন

তথ্য সংগ্রহ:- আব্দুল আজিজ কাদরী

এবার পড়ুন

মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা

Spread the love

Leave a Comment