নামাযে হাত কোথায় বাঁধতে হবে? নাভির নিচে না উপরে?

নামাযে হাত কোথায় বাঁধতে হবে?

প্রশ্নঃ- বর্তমানে আহলে হাদিস দাবিদার ভায়েরা নাভির নিচে হাত বাঁধাকে ভুল বলে প্রচার করছে । বেশির ভাগ যারা জেনারেল শিক্ষিত যুবক অন্ধের মত তা বিশ্বাস করছে এবং তারা এই কথা অপপ্রচারও করছে অথচ তারা আরবি পড়তে পারে না । আমি এই বিষয়ে সঠিকটা দলিলসহ জানতে চাই,নামাযে হাত কোথায় বাঁধতে হবে?

উত্তর নং ১৫৯ :- হানাফী মাজহাবের মাসআলা হল, নামাযে নাভির নিচে হাত বাঁধা পুরুষদের জন্য সুন্নাত । এর উপযুক্ত সহিহ দলিল আছে ।

নাভির নিচে হাত বাঁধার দলীল

عن علقمة بن وائل بن حجر عن أبيه قال :رأيت النبي صلي الله عليه و سلم وضع يمينه علي شماله في الصلاة تحت السرة

আলকামা ইবনে অয়েল ইবনে হুজর আপন পিতা হতে বর্ণনা করেন যে,আমি নবী স. কে নামাযের অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর নাভির নিচে রাখতে দেখেছি । (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং-৩৯৫৯)

হাদিসের মান

قال الشيخ قطلوبغا إن هذا سند جيد

শাইখ কুতলুবুগা বলেছেন যে,এই হাদীসটির সনদ উত্তম (এলাউস সুনান -২/১৭০,১৮৫,
আসরারুস সুনান-১/৭১)

উল্লেখ্য যে,উপরোল্লিখিত উদ্ধৃত “মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ “পুস্তকের লেখক হলেন হযরত আবূ বাকর ইবনে আবী শাইবাহ (রাহঃ) যিনি ইমাম বুখারীর স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন ।

প্রকাশ থাকে যে,বুকের উপর হাত বাঁধা সুন্নাত নয় এ সম্পর্কে চার ইমামের একই মত। এই চার ইমামের মধ্যে কারও কারও মতে নাভির উপরে ও বুকের নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত আবার কারও নিকট হাত ছেড়ে পড়া সুন্নাত এবং কারও নিকট নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত । তবে বর্তমান যুগের কথিত আহলে হাদীস দের মতো মহিলা সদৃশ বুকের উপর হাত বাঁধা কারও নিকট সুন্নাত নয়।

এদের বুকের উপর হাত বাঁধার মূলত তিন চারটি দলীল আছে । সমস্ত রেওয়ায়েত গুলোই বিভিন্ন কারনে মুহাদ্দিসীনদের নিকট প্রমাণের অনুপোযুক্ত। তাদের রেওয়ায়েতগুলি নিম্নরূপ-

عن وائل بن حجر قال صليت مع النبي صلي الله عليه و سلم فوضع يده اليمنى علي يده اليسرى علي صدره

অয়েল ইবনে হুজর হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,’আমি নবী (সঃ) এর সঙ্গে নামাজ পড়েছি অতপর তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রেখেছিলেন’

একই বর্ণনাকারী থেকে কিছু শব্দের ও সানাদের পরিবর্তনে বর্ণিত আছে,

أخبرنا أبو سعد أحمد بن محمد الصوفي ،أنبأنا أبو أحمد بن عدي الحافظ، حدثنا ابن صاعد حدثنا إبراهيم بن سعد، حدثنا محمد بن حجر الحضرمى،حدثنا سعيد بن عبد الجبار ابن وائل عن أبيه عن أمه عن وائل بن حجر قال حضرت رسول الله صلي الله عليه و سلم إذا اوحين نهض إلي المسجد، فدخل المحراب ثم رفع يديه بالتكبير، ثم وضع يمينه علي يساره علي صدره.رواه أيضا مؤمل بن اسماعيل عن الثوري عن عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل أنه رأى النبي صلي الله عليه و سلم وضع يمينه علي شماله ثم وضعهما على صدره

আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী-২/৩১৭,নং-২৩৮৩, তোহফাতুল আহওয়াযী -২/৭৯,
সহীহ ইবনে কুযাইমা-১/২৭২,নং৪৭৯)

হাদিসের মান

হাদীস টি অত্যন্ত দূর্বল অয়েল বিন হুজর এর এই হাদীসে (محمد بن حجر منكر الحديث) মুহাম্মদ ইবনে হুজর নামক রাবী মুনকারুল হাদিস। এ সম্পর্কে সুনানে কুবরা বাইহাকীর টিকাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।

অনুরূপ ভাবে এই হাদীসটির একটি সনদে মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল রয়েছেন। তার সম্পর্কে ”তাহযীবুল কামাল” ও ”মীযানুল এতেদাল” পুস্তকে ইনাকে কাসীরুল গলত (বহূ ভুলকারী) বলা হয়েছে ।

ইমাম বোখারী তাকে (منكر الحديث) বলেছেন । ইমাম আবূ হাতিম ও ইমাম আবূ যুরয়াহ তাকে (كثير الخطاء) অধিক ভুলকারী বলেছেন । (তাহযীবুত তাহযীব-১০/৩৮০,৩৮১,ও আসারুস সুনান-১/১৪০,সুনানে কুবরা-২/৩০ এর টিকা)

উল্লেখ্য যে,আল্লামাহ হাফিজ ইবনে হাজার ঐ হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন – (كذالك مؤمل ابن إسماعيل في حديثه عن الثوري ضعف) (ফাতহুল বারী শারাহ সহীহ বুখারি -৯/২০৬)

আল্লামাহ কাইয়িম দাবি করেছেন যে,মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল ছাড়া আর কেউ বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বলেন নি(দ্রঃ-মায়ারিফুস সুনান-২/৪৩৮)

আহলে হাদীস দের সবথেকে জোরালো হাদীসের এই অবস্থা । তাহলে ভাবুন বাকি হাদিসগুলোর কি অবস্থা হতে পারে । মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে এরা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে যুবকদের কে বেশি টার্গেট করে থাকে, কারণ তাদেরকে সহজে বুঝাতে পারে ।

তাদের দ্বিতীয় দলীল

عن قبيصة بن هلب عن أبيه رأيت رسول الله صلي الله عليه و سلم ينصرف عن يمينه و عن يساره و رأيته يضع هذه علي صدره

কাবিসাহ বিন হুলব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেছেন, আমি রাসুল (সাঃ) কে ডান ও বামে ফিরতে দেখেছি এবং হাতকে বুকের উপর রাখতে দেখেছি। (আহমাদ ২২০১৭)

এই হাদীসেও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা রয়েছে ।

হাদিসের মান

এই হাদীসে বুকে হাত বাঁধা কথাটি (علي صدره) কথাটি লেখকের ভুল বশত (هذه علي هذه) এর স্থানে (علي صدره) হয়ে গেছে । (এলাউস সুনান করাচি -২/১৬৯,আত-তালীকুল হাসান আলা আসারিস সুনান-১৪৫) ফলে বুকে হাত বাঁধার কথাটি সহিহ নয় ।

কথিত আহলে হাদিসগণ অরো একটি দালিল পেস করে থাকে তা হলো,

عن طاؤس قال كان رسول الله صلي الله عليه و سلم يضع يده اليمنى علي يده اليسرى ثم يشبك بهما على صدره و هو في الصلاة

ত্বাঊস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) নামাজের মধ্যে তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং উভয় হাত বুকের উপর শক্ত করে ধরে রাখতেন। (আবুদাউদ হা/৭৫৯)

এই হাদীসেও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা উল্লেখ আছে কিন্তু এটি মুরসাল হাদীস যা আহলে হাদীস দের কাছে যয়ীফ ও প্রমাণ করার অযোগ্য । এরা চালাকি করে বিভিন্ন পি.ডি. এফ ও এপসে সহিহ লেখে রেখেছে অথচ হাদিস সহিহ নয় ।

হাদিসের মান

উল্লেখ্য যে,এই হাদীসটির সনদ খুবই দূর্বল (আসারুস সুনান-১৪৫)

কারণ হল এই হাদীসটির সনদে একজন বর্ণনাকারী সুলাইমান ইবনে মূসা আল-উমাবী আছেন যার সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহঃ) বলেন, (عنده مناكير) অর্থাৎ তার কাছে অনেক জাল হাদীস আছে ।

ইমাম নাসাঈ বলেছেন, (و ليس بالقوي في الحديث) অর্থাৎ উনি হাদীসে শক্তিশালি নন। (তাহযীবুত তাহযীব-৪/২২৬,২২৭, মীযানুল এতেদাল-২/২২৫)

আল্লামাহ নিমাবী বলেন যে,বুকের উপর হাত বাঁধা সংক্রান্ত সমস্ত হাদীসগুলোই যয়ীফ ও দূর্বল (আসারুস সুনান-১৪৫)

বুকে হাত বাঁধার একটিও হাদিস সহিহ নয় । তাই নাভির নিচে হাত বাঁধাই হলো সুন্নাত ।

এবার পড়ুন

Spread the love

Leave a Comment