কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা মাসায়েল নিয়ে এই প্রবন্ধের মধ্যে আলোচনা করা হল – পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন । ইনশাআল্লাহ

কুরবানি সম্পর্কে হাদিস ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

আলোচনার বিষয়

(১) কুরবানির সংজ্ঞা
(২) কুরবানি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
৩) কুরবানি কার উপর ওয়াজিব
?
(৪) সাত ভাগে কোরবানি করার হুকুম
(৫) কুরবানী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ও তার উত্তর

কুরবানির সংজ্ঞা:-

আরবী ‘কুরবান’ (قربان) শব্দটি ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ হল ‘নৈকট্য’।

আরো একটি মতামত হল, কুরবানী শব্দটি হিব্রু কোরবান (קרבן‬) আর সিরিয়াক ভাষার কুরবানা শব্দদুটির সংগে সম্পর্কিত যার আরবী অর্থ “কারো নিকটবর্তী হওয়া” (উইকিপিডিয়া)

পারিভাষায় কুরবানি হল,

ُرْبَانُ مَا يُتَقَرَّبُ بِهِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى
কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়’। (আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব)

প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে পশু যবেহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানী’ বলা হয়’।

যিলহাজ্জের চাঁদ দেখার আগে ও পরে করনীয় কিছু আমল

কুরবানি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস

(১) হাদিস:- থাকলে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে । আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’। [ইবনু মাজাহ ২৫৩২, বাইহাকি]

(২) হাদিস:- কুরবানির ইতিহাস । আদম (আঃ) এর দুই পুত্র কাবীল ও হাবীল এর দেওয়া কুরবানী থেকেই কুরবানীর ইতিহাস শুরু হয়েছে। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। তবে সেই সব কুরবানীর নিয়ম-কানূন কেমন ছিল তা আমাদেরকে জানানো হয়নি।

মুসলিম উম্মাহর উপরে যে কুরবানীর নিয়ম নির্ধারিত হয়েছে, তা হজরত ইবরাহীম (আঃ) কর্তৃক পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর রাহে কুরবানী দেওয়ার অনুসরণে ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসাবে চালু হয়েছে। [শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৬/২২৮ পৃ. ]

(৩) হাদিস:- ঈদের নামাজের আগে কুরবানি যাবে না করা । বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজ আদায় করে বললেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের ন্যায় নামাজ আদায় করে আমাদের কিবলাকে কিবলা বলে গ্রহন করে সে যেন (ঈদের নামাজ) শেষ না করা পর্যন্ত (পশু) যবেহ না করে।

তখন আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সাঃ) আমিতো যবাহ করে ফেলেছি। নবী (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ এটি এমন জিনিস না যা তুমি জলদী করে ফেলেছ।

আবূ বুরদা (রাঃ) বললেনঃ আমার কাছে একটি কম বয়সী বকরী আছে। সেটি পূর্ণ বয়স্ক দুটি বকরীর চাইতে উত্তম। আমি কি সেটি যবাহ করতে পারি? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ। তবে তোমার পরে অন্য কারো পক্ষে তা যবাহ করা যথেষ্ট হবে না। আমের (রহঃ) বলেনঃ এটি হল তার উত্তম কুরবানী। (বুখারী ২২১৬)

বকরির বয়স ১বছর পূর্ণ হতে হবে অন্যথায় কুরবানি হবে না । আমাদের প্রিয় নবী কম বয়সী বকরি শুধুমাত্র আবু দারদা (রাঃ) এর জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন । জাম হাদিসের শেষের দিকে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ।

কুরবানি কার উপর ওয়াজিব?

প্রাপ্তবয়স্ক,স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক।

নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ এর মালিক হওয়া ।

কুরবানি সম্পর্কে অনেকে বলে থাকেন এটি সুন্নত মোয়াক্কাদা তবে বিশুদ্ধ মত হল, অর্থশালী ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব ।

নবী (সাঃ) বাণী: “প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কুরবানী দেয়া ওয়াজিব” (মুসনাদে আহমাদ ২০২০৭)

কোরবানী পুরুষদের উপর যেমন ওয়াজিব হয় তেমনি নারীদের উপরও ওয়াজিব হয়। কারণ ওয়াজিব হওয়ার দলিলগুলো নর-নারী সবাইকে সমানভাবে শামিল করে।

সাত ভাগে কোরবানি করার হুকুম

হযরত জাবের বিন সামরা রাঃ থে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে হজ্ব থেকে হালাল হতে গেলাম। তখন তিনি আমাদের আদেশ করলেন একটি উট ও একটি গরুতে সাতজন করে শরীক হতে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩১৮৬}

উক্ত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা গেল যদি বড় একটি উট বা গরুতে ৭জন মিলে কোরবানি দায়ী তাহলে সেটি জায়েজ হবে । অনেক কথিত আহলে হাদিস ভাইয়েরা ‘৭ ভাগে কুরবানি’ নাজায়েজ বলে ফতোয়া দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে অতএব সেই দিকে কর্ণপাত করবেন না ।

বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেল যে, উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হওয়া যাবে। চাই সে মুকীম হোক বা মুসাফির। মুকীম ও মুসাফিরের কোন পার্থক্য হাদীসে বর্ণিত হয়নি।

তথ্য সংগ্রহ:- আব্দুল আজিজ কাদরী (email ID- [email protected])

কুরবানী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ও তার উত্তর

কুরবানির পশুর সাথে আকিকা করার হুকুম কি?

কুরবানীর পশুর সাথে আকিকা করা জায়েজ রয়েছে ( ফতোয়ায়ে কাজী খান, বাইরুত থেকে ছাপা ৩য় খন্ড ৩৫০ পৃ) কুরবানির পশু যদি গরু বা উট হয়ে থাকে তাহলে তার মধ্যে থেকে একটি অংশ বা দুটি অংশ আকিকার জন্য নির্ধারণ করা যায় ।

যৌথ ফেমেলির সবারি উপর কি কুরবানি ওয়াজিব?

যৌথ পরিবারে সবারই আলাদা সম্পদ নেসাব পরিমাণ হয়ে থাকে, তাহলে সবার উপর আলাদা কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে যদি সবাই উপার্জন করলেও সবার টাকা বাবাকে মালিক বানিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। তাহলে কেবল বাবার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে শুধু তার উপরই কুরবানী ওয়াজিব।

কিছু স্বর্ণ ও হজের জন্য জমানোর টাকা থাকলে কি কুরবানী ওয়াজিব হবে?

স্বর্ণের বাজারমূল্য এবং হজ্জের জন্য জমানো বিশ হাজার টাকা মিলিয়ে যদি রূপার নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর কুরবানী করা আবশ্যক।

কুরবানী করা কি ওয়াজিব?

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হবে । যদি কোরবানি না দেয় তাহলে সেই ব্যক্তি ওয়াজিব তরক করার জন্য বড় গুনাগার হবে ।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়?

নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে, কুরবানী ওয়াজিব হবেনা । এছাড়া পাগল, বাচ্চার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবেনা ।

কুরবানি কার নামে দিতে হবে?

যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার পক্ষ থেকেই কোরবানি করতে হবে । যদি পরিবারের অন্য কারো নামে কুরবানী করতে চাই তাহলে তাকে অতিরিক্ত আরও একটি কোরবানি করতে হবে ।

কোরবানির শর্ত সমূহ কি কি?

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত সমূহ হল (ক) কুরবানীর দিন মালিকে নেসাব হওয়া। গরীবের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (খ) সুস্থ মস্তিষ্ক ব্যক্তি হওয়া। বিকৃত মস্তিষ্ক পাগলের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (গ) স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া।দাস- দাসির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (ঘ) মুসলমান হওয়া। বিস্তারিত আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন…

আরো পড়ুন…

Spread the love

Leave a Comment