গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শক্তিশালী পরামর্শ

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শক্তিশালী পরামর্শ

হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলতেন, আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার চাইতে উত্তম কোন ইবাদত আর কোনো ইবাদতকারী করতে পারি নি। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম ২৯৬)

সালাফগণ বলেছেন,

لايُوصِل إلى ولا يَةِ الله إلا بترك الْهَوَى

’আল্লাহর ওলি হতে হলে গুনাহ ছাড়তেই হবে’

যে ব্যক্তি খুব ইবাদতকারীর চাইতেও অগ্রসর হয়ে আনন্দ পেতে চায় তার জন্য উচিত হল, গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। অর্থাৎ যদি তুমি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো তাহলে রাত জেগে ইবাদতকারীর চাইতেও আগে বেড়ে যেতে পারবে। (মুসনাদ আবু ইয়া’লা ৪৯৫০)

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শক্তিশালী পরামর্শ

(১) হিম্মত করুন: গুনাহর ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে হিম্মত করতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করে এই আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে, ‘ইনশা আল্লাহ্, আমি পারবো। আমার রবের সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ার এই চাকচিক্য থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো।’ এই ভাবে প্রত্যয়ী হবেন, তাহলে বেঁচে থাকাটা সহজ হবে।

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন,আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে অধিক উত্তম ও প্রিয়। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। (মুসলিম ৪৮২২)

(২) নিয়ত করুন, গুনাহের সুযোগ পেলেও গুনাহ করবো না: মনে রাখতে হবে, গুনাহকালীন সময়ে আনন্দ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তার ক্ষতি ও করুণ পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী। পাপের উন্মাদনা সাময়িক কিন্তু তার অনুতাপ হবে দীর্ঘ মেয়াদি। সুতরাং আজ থেকে নিয়ত করুন, গুনাহের সুযোগ পেলেও গুনাহ করবো না।

আর সে যদি কোনো গুনাহ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কাছে একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করে দেন। (মুসলিম ১৩১)

(৩) কোনো গুনাহকে ছোট করে দেখবেন না: গুনাহ হল আমাদের শত্রু। শত্রুর ক্ষেত্রে যুদ্ধের কৌশল হল শত্রুকে কখনো ছোট করে দেখতে নাই।

তুমি ঐ সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাক যেগুলোকে ছোট বলে ধারণা করা হবে। (সহিহ আলজামি’ ২৬৮৬)

(৪) দু’আ করুন : দু’আ সকল মুসিবতের সবচে’ শক্তিমান প্রতিষেধক। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওবা করতে চায়, তার উচিত ওই সত্তার দরবারে হাত তোলা যিনি প্রার্থনা শুনেন এবং মুসিবত দূর করেন। হতে পারে গুনাহ বর্জন এবং পবিত্র জীবন গঠন; এই দু’য়ের মাঝে দূরত্ব কেবল দু’টি প্রার্থনার হাত। প্রয়োজন কেবল কয় ফোঁটা চোখের পানি।

আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। (সূরা গাফির ৬০)

(৫) মাঝে মাঝে নির্জনে চোখের পানি ফেলুন: গুনাহটা তো এই চোখ দ্বারাই বেশি হয়। সুতরাং নির্জনে কিছু চোখের পানিও ফেলতে হবে। এটা সাধারণ দু’আ থেকে স্পেশাল।

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব। (জামি’ তিরমিযী ২৩১১)

গুনাহর কারণে আল্লাহ্ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের নামই হল, জাহান্নাম। আর সেই জাহান্নাম থেকে চোখের পানির উসিলায় যদি বেঁচে যেতে পারেন, এর অর্থ হল, আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে হয় গুনাহটি থেকে বিশেষ রহমতে বাঁচিয়ে নিবেন কিংবা মউতের আগে হলেও এ থেকে তাওবার তাওফীক দিয়ে দিবেন।

(৬) মুজাহাদা বা চেষ্টা চালান: এক দিনে কিংবা এক রাতে আপনি গুনাহ ছেড়ে দিয়ে পবিত্র হয়ে উঠবেন; এ ধারণা ভুল। বরং এর জন্য কষ্ট করতে হবে, প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাতে হবে। আপনি গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক; এটা তখনই বুঝা যাবে যখন এ ব্যাপারে আপনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে পাওয়া যাবে।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। (সূরা আনকাবুত ৬৯)

(৭) ভাবুন, আমার উপর পাহারাদার আছে: মাঝে মধ্যে অন্তরে এই ভাবনা জাগিয়ে তুলুন যে, আমার উপর পাহারাদার আছে।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا

আল্লাহ্ সব বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখেন। (সূরা আহযাব ৫২)

ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ:) একজন কবির কাছে একটি কবিতা শুনে দরজা বন্ধ করে খুব কেঁদেছিলেন।

কবিতাটি ছিল এই,

إِذَا مَا خَلَوْتَ الدَّهْرَ يَوْمًا فَلَا تَقُلْ

خَـلَـوْتُ وَلَـكِـنْ قُـلْ عَـلَـيَّ رَقِـيبُ

’যদি তুমি দিনের কিছু সময় একাকী কাটাও, তখন একথা বলো না যে, আমি নির্জনে একাকী সময় কাটিয়েছি; বরং বলো, আমার পেছনে সদা সর্বদা একজন পাহারাদার ছিল।’

(৮) ভাবুন, আল্লাহকে কি জবাবদেবেন:- আজ আমি যে গুনাহগুলোতে লিপ্ত, কেয়ামতের দিন তো আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে, বান্দা! এ গুনাহটা কেন করলি? দরজা- জানালা বন্ধ করে দিয়ে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমাকে কেউ দেখে নাই। আমিও কি দেখি নাই? তুমি কি মনে করেছ যে, আমার দেখা মাখলুকের চোখের চেয়ে দুর্বল?

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন– তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মাঝে কোন দোভাষী এবং এমন কোন পর্দা থাকবে না, যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। (সহীহ বুখারী ৬৯৩৫)

চিন্তা করুন, সে দিন তখন আমরা কী উত্তর দিবো?! সেদিন যদি আল্লাহ্ তা’আলা সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, বান্দা! রাতের দুইটা বাজে কেন তুই অশ্লীলতার ভেতর ডুবে গিয়েছিলি? কেন তুই এমন জিনিসের চর্চা করেছিলি যে, যেখানে পৌত্তলিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ প্রেম ও নগ্নতাসহ কত শত অপরাধের চর্চা ও শিক্ষা ছিল? তখন আমরা কী উত্তর দিবো?

জীবন বীমা হালাল নাকি হারাম? লাইফ ইন্সুরেন্স

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার বিধান কি?

মুসলিমরা কি পূজো দেখতে যেতে পারে?

Spread the love

Leave a Comment